ঢাকা | নভেম্বর ২২, ২০২৪ - ৭:০১ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশ থেকে গার্মেন্টসের ক্রয়াদেশ সরে যাচ্ছে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে

  • আপডেট: Saturday, October 12, 2024 - 11:33 am
  • পঠিত হয়েছে: 57 বার

টাচ নিউজ: রাজনৈতিক অস্থিরতা, সরকার পতন এবং শ্রমিক অসন্তোষের জেরে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশের একটা অংশ প্রতিবেশী ভারতসহ বিভিন্ন দেশের বাজারে চলে যাওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতিকে দেশের সবচেয়ে বড় রফতানি খাতের জন্য গভীর সঙ্কট হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ক্রেতা এবং বাংলাদেশের পোশাক কারখানার মধ্যে মধ্যস্থতাকারী একটি প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, সময়মতো শিপমেন্ট করতে না পারায় তাদের একটি ক্রেতার নব্বই শতাংশ ক্রয়াদেশ ভারতে চলে গেছে। ‘নো এক্সিট’ নামের ওই প্রতিষ্ঠানের একজন পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ জাকির বিবিসিকে বলেন, পরিস্থিতি ভালো হলে তবেই ক্রেতারা আবার ফিরতে পারেন।

‘আমার অনেকগুলো অর্ডার ইন্ডিয়াতে প্লেস হয়ে গেছে। যে কাস্টমার আমার এখানেই কাজ করতো তার অর্ডারগুলো সে ইন্ডিয়াতে প্লেস করেছে শিপমেন্ট ও ডেলিভারি ইস্যুর কারণে। আমরা যদি পরিস্থিতি উন্নয়ন করতে পারি ক্রেতারা আবার ফিরে আসবে।’

বাংলাদেশের বড় বড় পোশাক কারখানা গড়ে উঠেছে এমন অঞ্চলের মধ্যে আশুলিয়া, সাভার এবং গাজীপুর এলাকায় সমস্যা সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে। শ্রমিক অসন্তোষ এবং উত্তেজনার এক পর্যায়ে যৌথবাহিনীর সাথে সংঘর্ষে একজন শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

ক্রমাগত পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে বলা হলেও সেটি যে পুরোপুরি স্বাভাবিক নয়, সেটি স্পষ্ট। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি রুবানা হক বর্তমান পরিস্থিতিকে পোশাক খাতের জন্য একটা বড় ধাক্কা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

তিনি বলেন, ‘১২ থেকে ১৫ দিন প্রচুর ফ্যাক্টরি বন্ধ থেকেছে। একেবারে বন্ধ। কেউ কেউ আবার ধরেন দুপুর পর্যন্ত চালাতে পেরেছে, এরপর পারেননি। এগুলোতো পুরাটাই লস। আর এর চাইতে বড় লস যেটা হচ্ছে, সেটা হলো আমাদের যারা ক্রেতা তারা তো সরে যাচ্ছেন। তারা বলছেন যে আমরা তোমাদের সাথে আছি, বাংলাদেশকে লাগবে, সবই বলছেন। কিন্তু আমরা তো এটার বাস্তবতাটা জানি। বাস্তবতাটা হলো অন্তত শতকরা ২৫-৩০ ভাগ অর্ডার ডিসেম্বরের মধ্যে সরে যাবে। এবং বিভিন্ন দেশে চলে যাচ্ছে, ক্যাম্বোডিয়া যাচ্ছে, ভিয়েতনামে যাচ্ছে, ভারতে যাচ্ছে, পাকিস্তানে যাচ্ছে, এমনকি মিয়ানমারে চলে যাচ্ছে।’

পোশাক খাতের সমস্যা তুলে ধরা নিয়ে একটি সঙ্কট রয়েছে বলেও মনে করেন রুবানা হক।

বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘যখন আপনি সাহস করে কোনো একটা সত্যি কথা বলতে যাবেন, নানা দিক থেকে নানাভাবে আপনার ওপরে সবাই চড়াও হবে। এবং বলবে যে এটা না বললেই পারতেন। কিন্তু এটা না বললেও কিন্তু ক্রেতারা জানেন যে ফ্যাক্টরিগুলো বন্ধ হচ্ছে। কাজেই সহজভাবে স্বচ্ছভাবে আমাদের সমস্যাগুলো যদি আমরা তুলে ধরতে পারি এবং বোঝাতে পারি যে এর পেছনে আরো অনেক কিছু কাজ করছে, তাহলে সবাই মিলে কিন্তু সমবেতভাবে একটা সমাধানের দিকে যাওয়া যায়।’

শ্রমিক অসন্তোষ কেন

সরকার পতনের পর বাংলাদেশে পোশাক খাতে এক ধরনের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই আশুলিয়া, সাভার এলাকায় গার্মেন্টস শ্রমিকদের আন্দোলনের খবর পাওয়া যাচ্ছে। কারখানা বন্ধ থাকায় একটা বড় সময় ব্যহত হয়েছে উৎপাদন। সময়মতো পাঠানো যায়নি পণ্য যার বিরূপ প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন সবাই।

বাংলাদেশে পোশাক খাতে অস্থিরতার একাধিক কারণ সামনে আসছে। এর মধ্যে ঝুট ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্ব, মালিকানার সমস্যা, বকেয়া পাওনা, কিছু ক্ষেত্রে বহিরাগতদের উসকানি এবং শ্রমিকদের নতুন কিছু দাবি দাওয়া এর পেছনে কাজ করেছে।