ঢাকা | নভেম্বর ১০, ২০২৪ - ৬:২৫ অপরাহ্ন

শিরোনাম

বিলুপ্তির পথে শুকুরের হাট উচ্চ বিদ্যালয়!

  • আপডেট: Monday, October 7, 2024 - 6:57 am
  • পঠিত হয়েছে: 41 বার

টাচ নিউজ: স্বল্প সংখ্যক দুষ্কৃতিকারী শিক্ষক ও কমিটির সভাপতির কল্যাণে বিলুপ্তির পথে রংপুরের মিঠাপুকুরের শুকুরের হাট উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি দুর্নীতি ও সেচ্ছাচারিতায় তার ঐতিহ্য ও জৌলুস হারিয়েছে। ক্রমেই এখন ব্যবসা ও আড্ডাস্থলে পরিনত হয়েছে এক সময়ের সেরা স্কুলটি। প্রতিকার চেয়েও প্রশাসনের ন্যায্য বিচার না পাওয়ার অভিযোগ। হতাশ শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী।

জানা যায়, রংপুরের মিঠাপুকুরের শুকুরের হাট উচ্চ বিদ্যালয়টি ১৯৪২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে বিদ্যালয়টি বেশ সুনাম অর্জন করে। তবে বিগত কয়েক বছরে স্বল্প সংখ্যক দুষ্কৃতিকারী শিক্ষক ও কমিটির সভাপতির অপকর্মের কারণে বিদ্যালয়টির শিক্ষার মানউন্নয়নের পরিবর্তে দিন দিন এর মান ক্ষণ্ন হচ্ছে। অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জর্জরিত হয়ে পড়েছে সাবেক সভাপতি মহুবুল আলম, প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম, সহকারী শিক্ষক রিপন মিয়াসহ আরো কয়েকজন শিক্ষক! বর্তমানে বিদ্যালয়টি নেই কোন কমন রুম, পাঠাগার, কম্পিউটার ল্যাব, বিজ্ঞানাগার, নামাজ ঘর, ক্যান্টিন ও পর্যাপ্ত শৌচাগার ব্যবস্থা। বিদ্যালয়টিতে পূর্বে একটি পাঠাগার থাকলেও তা বিলুপ্ত করে বর্তমান শিক্ষকরা তা গ্যারেজ বানিয়ে ব্যবহার করছেন। পূর্বের একটা ক্যান্টিন ছিল সেটা স্কুল থেকে বিচ্ছিন্ন করে নাম মাত্র ভাড়া দিয়ে ভাগ করে খাচ্ছেন শিক্ষকরা। আর বর্তমানে তা পরিণত হয়েছে দিনে বিড়ি-সিগারেট ও রাতে গাঁজার আড্ডায়। পূবের্র বিজ্ঞানাগারটিকে বানানো হয়েছে শিক্ষকদের বসার কক্ষ।

বিদ্যালয়ের পাঁচ থেকে সাতটি ক্লাস রুমকে আধুনিক ইলেকট্রনিক্স শো-রুম বানিয়ে ব্যবসা করছেন ইস্কুলের বর্তমান শিক্ষক ও সাবেক সভাপতি। কেউ প্রতিবাদ করলেও ক্ষমতার দাপটে ও বিভিন্ন জায়গায় টাকা দিয়ে সমাধান করে ফেলেন। এছাড়াও, বিদ্যালয়টিতে পর্যাপ্ত শ্রেণি কক্ষ নেই।

গত ১১ সেপ্টেম্বর এসব অনিয়মের সমাধান চেয়ে এই বিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা প্রথমে প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম ও কয়েকজন শিক্ষকের সাথে বসেন। তাতে সমস্যাগুলোর সমাধান না হওয়ায় ১২ সেপ্টেম্বর তারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিকাশ চন্দ্র বর্মনের কাছে একটি অভিযোগ করে। ২৬ সেপ্টেম্বর তার নির্দেশে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো: আব্দুল মমিন মন্ডল সরেজমিনে বিষয়টি তদন্ত করেন। ২৯ সেপ্টেম্বর তদন্তের বিষয় নিয়ে তিনি শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দলের সাথে দুপুরে বসার কথা। কিন্তু অদৃশ্য কারণে সকাল দশটার দিকে তিনি, প্রধান শিক্ষক, আরও কিছু শিক্ষক ও শো-রুম প্রতিনিধিদের সাথে মিটিং করেন। পরে তিনি শিক্ষার্থীদের তদন্তের রিপোর্ট না দিয়ে তিন মাসের অজুহাত দেখিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান। পরে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি দল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বিকাশ চন্দ্র বর্মনের কাছে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চান।

তখন তিনি জানান, রোববার থেকে বৃহস্পতিবার (২৯-৯-২৪ থেকে ০৩-১০-২৪) এর মধ্যে শো-রুমগুলো বন্ধ করে দিবেন বলে। কিন্তু দেখা যায়, তিনিও এখন পর্যন্ত এই ধরনের কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। তাছাড়া, এই সময় শিক্ষর্থীরা ইউএনও-এর কাছে শিক্ষকদের ক্লাসের সময়ে কোচিং ও প্রাইভেট পড়ানো, ক্লাস রুমের বেঞ্চ নিয়ে গিয়ে কোচিং করানোসহ আরও অনেক দুর্নীতির বিষয় তুলে ধরে। তিনি সেসব বিষয়েও পদক্ষেপ নিবেন বলে আশ^স্ত করেন। শো-রুম মালিক বর্তমান সহকারী শিক্ষক রিপন মিয়া। প্রায় তিন বছর আগে দোকান করার কারণে দশ লক্ষ টাকা ব্যয় বাবদ দশ বছরের জন্য লিজ নেয়। যা প্রতিষ্ঠানের কোন উন্নয়ন কাজে ব্যয় হয়নি বা ফান্ডেও জমা করা হয়নি। বিদ্যালয়টির সাবেক সভাপতি মহুবুল আলম, প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম, রিপন মিয়া ও দুই-তিনজন শিক্ষক এই দোকান বাণিজ্যের সাথে সরাসরি জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়াও তারা নিয়োগ বাণিজ্যের সাথেও জড়িত বলে অভিযোগ। অন্যান্য শিক্ষক ও প্রভাবশালীদের সহযোগিতার কারণে শো-রুমগুলোকে ক্লাস রুমে পরিণত করা ও অন্যান্য দুর্নীতি অপসরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।