বামনায় কৃষিজমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায় নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য
বামনা প্রতিনিধি:
বরগুনার বামনা উপজেলার ইউনিয়নের একাধিক স্থানের কৃষি জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়। ফলে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। যেন দেখার কেউ নেই। সরেজমিনে দেখা গেছে, ভেকু দিয়ে কৃষি জমির মাটি কেটছে মাটি খেকোরা। জানা গেছে, এই মাটি ইটভাটায় বিক্রি করাহচ্ছে।
প্রতি গাড়ি মাটি বারোশো টাকা নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
ক্ষেতের মাটি কাটার কারণে পাশের জমিও নষ্ট হচ্ছে হচ্ছে। সাধারণ কৃষকরা প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না। কারণ মাটি খেকোরা খুবই প্রভাবশালী। ফলে নীরবে সহ্য করতে হচ্ছে অনিয়ম।
প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপের অভাবে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন মাটি খেকোরা। এমনই মনে করছেন সচেতন মহল।
তিন ফসলি জমির মাটি কেটে গভীর খাদ বানিয়ে প্রতিদিন ট্রাকে করে নেয়া হচ্ছে । এতে করে রাস্তাঘাট ও নষ্ট হচ্ছে। এছাড়া পুকুর ও ঘের খননের নামে সংকুচিত হচ্ছে ফসলি জমি।
সরেজমিনে আরো দেখা যায়, বামনা সদর ইউনিয়নের আমতলী গ্রামের আলম হাওলাদারের মালিকানাধীন ফসলি জমির মাটি গত ১০/১৫ দিন ধরে ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এপ্রতিবেদককে বলেন, জুয়েল হাওলাদারের ফসলি জমিতে ঘের করার নামে ১০/ ১২ ফুট গভীর করে মাটি বিক্রি করা হচ্ছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ট্রাকে করে এসব মাটি নেয়া রাস্তাঘাট ও নষ্ট হচ্ছে।
এছাড়া পার্শ্ববর্তী ফসলী জমিতে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিতে কথিত ঘেরের পাড় ভেঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন অন্য জমির মালিকরা। একই ইউনিয়নের চেচান গ্রামের তিন ফসলের জমির টপ সয়েল নগদ লাভের আশায় মাটি বিক্রি করে দিচ্ছে দরিদ্র কৃষকরা।
এদিকে, উপজেলার রামনা ইউনিয়নের ঘোলাঘাটা গ্রামের রামনা ডৌয়াতলা সড়কের পাশে মগফেরের ফসলি জমি থেকে গত ১০ দিনেরও অধিক সময় ধরে মাটি কাটা হচ্ছে। এছাড়া রামনা শরীফ বাড়ী সংলগ্ন বেড়ী বাধের কোল ঘেঁষে নদীর তীরের মাটি ভেকু দিয়ে কেটে নিয়ে যাচ্ছে জনৈক ইটভাটার মালিক। বেপরোয়াভাবে চলাচলকারী মাটি টানার টলি ও ট্রাকের চাপে রাস্তা ঘাট ও ওয়াপদা বেড়ীবাধের অবস্থা বেহাল।
ডৌয়াতলা ইউনিয়নের দক্ষিন কাকচিড়া গ্রামের ফসলি জমিতে পুকুর কেটে মাটি বিক্রি করতে দেখা গেছে।
অপর দিকে উপজেলার বুকাবুনিয়া ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুরা ভেড়ী বাধের কোল ঘেঁষে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে আর এন বি নামে একটি নতুন ইটভাটায় মাটির স্তূপ গড়ে তুলেছেন ভাটার মালিক।
উল্লেখ্য, ফসলি জমির মাটি কাটা বন্ধে প্রশাসনের পদক্ষেপ না থাকায় উপজেলার ৮ টি ইটভাটার মালিকেরা দালালের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে কৃষি জমি কেটে ঘের ও পুকুর খনন করে মাটি কিনে মজুদ বাড়িয়ে গড়ে তুলছেন স্ব স্ব ইটভাটায় মাটির পাহাড়।
রামনা আলোকিত যুবসমাজ সংগঠনের সভাপতি ফোরকান মাহমুদ বলেন,
বামনা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ফসলি জমি সহ, বিষ খালি নদীর পাড়ের চরের মাটি প্রতিনিয়ত কেটে নিচ্ছে প্রভাবশালী ভাটা মালিকরা। ফলে হুমকির মুখে পরছে বিষখালী নদীর বেরিবাধ সহ কৃষকেরা।
উপজেলা সামাজিক আন্দোলনের সভাপতি মনোতোষ চন্দ্র হাওলাদার জানান জেলা প্রশাসক মহোদয় বিভিন্ন সভা সেমিনারে বলেছেন, কারো এক টুকরো জমিও যেন পতিত পড়ে না থাকে। এমনকি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও বিভিন্ন সময় তার বক্তব্যে জমি পতিত ফেলে না রাখতে বলেন। কিন্তু জমির মালিকেরা টাকার লোভে মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন। আর মাটি খেকোরা ফসলি জমির মাটি কিনে ভাটায় বিক্রি করছেন। এ অবস্থা কোনভাবেই কাম্য নয়।
এ ব্যাপারে বামনা প্রেসক্লাবের সভাপতি নেছার উদ্দিন বলেন, বেআইনি কাজ বন্ধের দায়িত্ব প্রশাসনের। তিনি এই প্রতিনিধিকে প্রশ্ন রেখে বলেন, বেড়ায় যদি গাছ খেয়ে ফেলে তবে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? তিনি আরো বলেন, অবৈধ কাজ বন্ধের পরিবর্তে প্রশাসন যদি দেখেও না দেখার ভান করে তবে আমরা কি করবো?
এ ব্যাপারে বামনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অন্তরা হালদার বলেন, একটি ভাটায় অভিযা পরিচালনা করেছি। ফসলি জমি থেকে মাটি কাটা বন্ধে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে ফসলি জমি থেকে মাটি কাটা বন্ধে জনপ্রতিনিধিদেরও একটা ভূমিকা পালন করা উচিত।
এ বিষয়ে সচেতন মহল কৃষি জমি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করার স্বার্থে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করছেন। তানাহলে অদূর ভবিষ্যতে মাটি কাটার কারণে কৃষিজমি থাকবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ।