অবৈধ বালু উত্তোলনের হোতা জাকিরও হতে চান এমপি, জমা দিলেন মনোনয়ন
নিজস্ব প্রতিবেদক:বালুখেকোদের উৎপাতে জৌলুস হারাতে বসেছে বহতা নদী যমুনা। অভিযোগ রয়েছে সোনাতলা উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি আহসানুল তৈয়ব জাকিরের শেল্টারে যমুনা নদীতে চলছে বালু উত্তোলনের মহোৎসব। দিনের পর দিন অবৈধভাবে নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে অবাধে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ড্রেজার মেশিন ও এক্সকাভেটরের মাধ্যমে নদীর বুক চিরে বালু তোলা হলেও কার্যকর কোনো প্রতিরোধ দেখা যাচ্ছে না।
জানা গেছে, চব্বিশের ৫ আগস্ট এর আগে যমুনা নদীর বৈধ-অবৈধ বালুর ব্যবসা আওয়ামী লীগ নেতারা নিয়ন্ত্রণ করলেও এখন বিএনপি নেতারা এ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করছেন। গোপনে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে মিলেমিশে বালু লুট করছে বিএনপির নামধারী নেতারা। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগকে শেল্টার দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে আহসানুল তৈয়ব জাকিরের বিরুদ্ধে।
স্থানীয়রা বলছেন, সারিয়াকান্দি উপজেলার কর্ণিবাড়ী, হাটশেরপুর, কাজলা, চরকুমারপাড়া, দেবডাঙ্গা, কুতুবপুর, ধলিকান্দি, চন্দনবাইশার রৌহদহ, আদবাড়িয়া, চর চন্দনবাইশা, দেলুয়াবাড়ি, ইছামারা ও গজারিয়া পয়েন্ট থেকে প্রতিনিয়ত বালু তোলা হচ্ছে। জেলা প্রশাসন থেকে এক স্থানে বালু তোলার অনুমতি (ইজারা) নিয়ে অবৈধভাবে বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে দিনে-দুপুরে যমুনার বালু খুবলে খাচ্ছে ক্ষমতাসীনরা।
এদিকে অবৈধভাবে ক্রমাগত বালু উত্তোলন করায় বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কালিতলা যমুনা নদীর গ্রোয়েনবাঁধের নিকটে কয়েকটি স্থানে তীর সংরক্ষণ কাজের সিসি ব্লক ধসে গেছে। এতে ওই এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। শুষ্ক মৌসুমে দ্রুত রিপেয়ারিং কাজ না করা হলে বড় ধরনের নদীভাঙনের আশঙ্কা রয়েছে।
এর প্রেক্ষিতে নদীঠেকাতে ওই অঞ্চলের বালুমহালগুলো ইজারা দেওয়ার আগে সচিত্র পরিদর্শনের নির্দেশ দিয়েছে বগুড়া জেলা প্রশাসন। গত ২৪ ডিসেম্বর এই মর্মে একটি চিঠিও প্রদান করা হয়েছে। আগামী ১১ জানুয়ারির মধ্যে সচিত্র প্রতিবেদন জমা দিতে ধুনট ও সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাতে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, নারাপালা বালুমহালটি কয়েক বছর আগে থেকে ইজারা নিয়ে আসছেন সারিয়াকান্দি উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আইয়ুব আলী তরফদার ও সারিয়াকান্দি পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুস সালাম। এরপর বিভিন্ন প্রভাব খাটিয়ে বালুমহলটি ইজারা নেন হাটশেরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইফাজ উদ্দিন, কালিয়ান বালুমহালটি ইজারা নিতেন জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সারিয়াকান্দির কামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদুজ্জামান রাসেল। দলটির এই কয়েকজন মূলত সারিয়াকান্দি উপজেলায় বৈধ ও অবৈধ বালুর ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন।
গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগ নেতারা আত্মগোপনে গেলে বালু ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নেন কর্ণিবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও সেচ্ছাসেবকদল থেকে বহিস্কৃত নেতা আনোয়ার হোসেন দীপন, বগুড়া জেলা যুবদল নেতা আতাউর রহমান শম্ভু, সারিয়াকান্দি উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট নুরে আজম বাবু,উপজেলা বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা মহিদুল ইসলাম, কাজলা ইউনিয়ন বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ইসহাক, পৌর বিএনপি সাবেক নেতা তপুল সরকার, বিএনপি কর্মী ডাবলু মেম্বার, বিএনপি কর্মী ডন, শ্রমিক দলের বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক খোকন, কুতুবপুর বিএনপি নেতা রুমি খান, যুবদল কর্মী বাঁধন ও মোহাম্মদ। তাদের সাথে গোপনে যোগাযোগ রেখে বালুমহল পরিচালনা করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতারা।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলার বালুমহল গুলো থেকে মোটা অংকের টাকা চলে যায় সোনাতলা উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি আহসানুল তৈয়ব জাকিরের পকেটে। তিনি আবার ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতেও জোরেশোরে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন। কিন্তু দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও নদী রক্ষা কমিশনে জাকিরের নামে অভিযোগ করায় প্রার্থী না হতে পারার শঙ্কাও তৈরি হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বালু তুলে ট্রাক ও ট্রলারে করে বালু পরিবহন করা হচ্ছে। বালু উত্তোলনের কারণে অনেক জায়গায় নদীর পাড় দুর্বল হয়ে পড়েছে। এতে যমুনার স্বাভাবিক গতিপথ ব্যাহত হচ্ছে এবং নদীর তীরে ভয়াবহ ভাঙনের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ফসলের জমি,বসতভিটা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার মুখে পড়েছে। এতে বর্ষা মৌসুমে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন যমুনা পাড়ের মানুষ।
বগুড়া জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ তৌফিকুর রহমান বলেন,’আমরা অভিযান পরিচালনা করছি। বেশ কয়েকটি অভিযানে জরিমানা করা হয়েছে। কেউ অবৈধভাবে বালু উত্তলন করলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।অভিযান চলমান রয়েছে।’











