ঢাকা | ডিসেম্বর ২৪, ২০২৫ - ৯:১৫ অপরাহ্ন

শিরোনাম

যুবদল নেতা রাশেদ হত্যার নির্দেশদাতা জাকিরের বিচার চায় পরিবার

  • আপডেট: Wednesday, December 24, 2025 - 3:15 pm
  • পঠিত হয়েছে: 6 বার

নিজস্ব প্রতিবেদক: বগুড়ার আলোচিত যুবদল নেতা রাশেদ হত্যাকাণ্ডের ১০মাস পেরালোও হত্যাকারী ও নির্দেশদাতারা স্বদর্পনে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। সম্প্রতি সমাজিক যোগাযোগ মধ্যম ফেইসবুকে রাশেদ হত্যা মামলার প্রধান আসামী হান্নান বাটালু ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি মাজেদুর রহমান জুয়েলের একটি ফোন আলাপ ফাঁস হয়। ফাঁস হওয়া সেই ফোন আলাপে প্রধান আসামি বাটলু দাবি করেন সোনাতলা উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাকির হোসেনের নির্দেশে তিনি এ হত্যাকান্ড ঘটান। এরপরই জাকিরের বিষয় তদন্ত করার দাবি করছে এলাকায় এলাকার সাধারন মানুষ ও ভুক্তভোগী পরিবার।

ভাইরাল হওয়া ফোন আলাপে প্রধান আসামী হান্নান বাটলু সাবেক জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি জুয়েলকে বলেন, আমি জাকির ভাইকে (সোনাতলা উপজেলা বিএনপির সভাপতি) অনেক বুঝানোর চেষ্টা করেছি। উনি আমাকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করেছে। শুধু স্ট্রোক করা বাকি ছিলো। তারপর বাধ্য হয়ে আমি রাশেদের দূর্ঘটনা (রাশেদ হত্যা) ঘটাইছি।

তবে সেই ফোনালাপটি ভাইরাল হওয়ার পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদি প্রকাশিত হলে হান্নান বাটালু সেই অডিও রেকর্ড মিথ্যা দাবি করে একটি প্রেস কনফারেন্সও করেন। তবে, সেই ফোনালাপের অপরপ্রান্তে যুক্ত থাকা বগুড়া জেলা সেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহ্বায়ক মাজেদুর রহমান জুয়েল বাটালুর সেই দাবীকে মিথ্যা বলে জানায়। তিনি বলেন, রাশেদ হত্যাকান্ড নিয়ে জাকির ভাইয়ের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ের হান্নান বাটুলুর সাথের কথোপথনের বিয়ষটির সত্যতা নিশ্চিত করেন। বাটালু আমার সাথে এসব কথা বলেছেন, সেখানে এই হত্যাকান্ডটি সরাসরি জাকিরের নির্দেশেই তিনি সংঘটিত করেছেন বলে স্বীকার করেছেন বলেও জানান জুয়েল।

এরইমধ্যে গেল মাসে মামলার চুড়ান্ত চার্জশীট দিয়েছে সোনাতলা থানা পুলিশ। তবে, সেখান থেকে সরাসরি হত্যাকান্ডে অংশ নেওয়া ৮ জন আসামীকে বাদ দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে রাশেদের পরিবার। তার চাচা জাকিরুল ইসলাম বলেন, আমরা সেই চার্জশীটের ওপর নারাজি দিয়েছি।ফলে মামলাটি পিবিআইয়ে পাঠানো হয়েছে পুন:তদন্তের জন্য। আসামীদের বাদ দেওয়া ও হত্যাকান্ডের নেপথ্যের ব্যাক্তিদের আড়ালের ঘটনায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে দোষারোপ করেন তিনি। তবে, তদন্তকারী কর্মকর্তা সোনাতলা থানার এস আই শামীশ হোসেন বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, মামলায় কারো প্রভাবে তদন্ত করা হয়নি। তবে, জাকিরের বিষয়ে তদন্ত বা ভাইরাল হওয়া কল রেকর্ডের বিষয়ে তিনি জানেন না বলে উল্লেখ করেন।

এদিকে, অভিযুক্ত সোনাতলা উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাকির রাশেদ হত্যা মামলার সাথে তার জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেন। বলেন, আমি রাশেদের হত্যাকান্ডের ঘটনাটি শুনেছি অনেক পরে। আমি এর সাথে জড়িত নই। তবে, বাটালুর ফোন আলাপটি এডিটেড বলে দাবি করে তিনি বলেন, ফোনালাপের বিষয়টি নিয়ে বাটালুতো সংবাদ সম্মেলন করেছে। তারপরও কেন সেটা নিয়ে কথা বলছেন? বাটালু তার অনুসারি নয় দাবি করে তিনি আরো বলেন, খুনিদের সাথে আমার কোন সখ্যতা নেই। তবে, তাদের বিরুদ্ধে এখনো কেন কোন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, সে বিষয়ে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি জাকির।

হত্যাকান্ডের ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো মামলার প্রধান আসামী হান্নান বাটালু, সেলিমসহ আসামীদের বিরুদ্ধে এখনো কোন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশাকে একাধিকবার ফোন দিয়েও পাওয়া যায়নি। তবে, থানা বিএনপির নেতাকর্মীরা বিষয়টি নিয়ে জাকিরের বিরুদ্ধে ভয়ে মুখ খুলতে নারাজ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা বিএনপি ও থানা বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, মামরালা সাথে জাকির সরাসরি যুক্ত। তার নির্দেশেই বাটালুরা রাশেদের হত্যাকান্ডের সাহস পাইছে। বাটালুদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে জাকির বাধা দিয়েছে বলেও জানিয়েছেন তারা। বলেন, জাকির বিএনপিতে মাফিয়া। জাকির সভাপতি হওয়ার পর থেকে সোনাতরা থানা বিএনপি তার কুক্ষিগত করে রেখেছে। এখানে তার বিরোধীতা করলে তার আর বিএনপি করা হয়ে ওঠেনা। গেল স্বৈরাচারী সরকারের সময়ে স্থানীয় এমপির বিশেষ সহায়তায় জাকির বিরোধী বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে তিনি নিজেই মামলা দিয়ে আসতেন বলেও অভিযোগ তাদের। একই সাথে জাকিরের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক তদন্ত ও রাশেদ হত্যাকান্ডে জাকিরকে তদন্তের আওতায় আনার দাবিও জানান তারা।

উল্লেখ্য, ২০২৫সালের ১৫ফেব্রুয়ারি বগুড়ার সোনাতলায় বিএনপি নেতা হান্নান বাটালু ও তার লোকজনের হামলায় যুবদল নেতা রাশেদুল হাসান (২৭) মারা গেছেন। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, গত ৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় পাকুল্লা বাজারে রাশেদুলের ওপর হামলা করেন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুল হান্নান বাটালু ও তার লোকজন। হান্নান বাটালু সোনাতলা উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাকির হোসেনের অনুসারী। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পাকুল্লা বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি গঠন নিয়ে এলাকাবাসী তিন পক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়েন। এক পক্ষের নেতৃত্ব ছিলেন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হান্নান।