আবার সক্রিয় বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা প্রকৌশল পরিষদ নেতা আলী আকবর সরকার
নিজস্ব প্রতিবেদক: হাসিনার আমলে বদলী বানিজ্য করে ৪৭৮ কোটি টাকার মালিক গণপূর্ত অধিদপ্তরের এই গডফাদার।
বদলী বানিজ্য ও টেন্ডার মাফিয়া সংস্রবে শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনঃ সময়টা ২০১১ সাল, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর চেয়ারে বসেন কবির আহমেদ ভূইয়া। তিনি বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের নেতা ছিলেন। সব কিছুতেই তিনি মহাজোট সরকারের ইচ্ছেমতো রাজনীতিকিকরন করলেন। তার বাড়ি ব্রাহ্মনবাড়িয়ায়, সেই সুবাদে পিডব্লিওডি তে ডিপ্লোমা সমিতির একক নেতৃত্ব তিনি দিয়ে দিলেন আলী আকবর সরকারের হাতে। আলী আকবর সরকার ছাত্র জীবন থেকেই আওয়ামীলীগের ক্যাডার ছিলেন। ছাত্র লীগের গুন্ডামি স্বভাব দিয়ে সিনিয়র ডিপ্লোমা নেতাদের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে নিজে একক ভাবে বদলী বানিজ্যের স্টিয়ারিং ধরেন। সে সময় তাকে প্রতিটি বদলী বাবদ কমপক্ষে পাঁচ লক্ষ টাকা দিতে হতো। নিজে কবির আহমেদ ভূইয়ার সাড়ে চার বছরের মেয়াদে নগর গনপূর্ত বিভাগে থকে অঢেল টাকা কামিয়েছেন। এসময় পূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন এর সাথে তার বিশেষ সখ্যতা গড়ে উঠে। আলী আকবরের নির্বাচনী প্রচারনায় ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ এর স্বতস্ফূর্ত উপস্থিতি দেখা যেত প্রায়শই। নগর গণপূর্ত বিভাগের দায়িত্বে থাকায় সে সময়ে পূর্ত সচিব শহীদুল্লাহ খন্দকারকে সার্কিট হাউজ রোডে সার্কেল ১ এর তত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর এয়ারমার্ক বাসার খোজ দিয়ে তার প্রিয় পাত্র হয়ে উঠেন। আবার সেসময়ে গণপূর্তের টেণ্ডার বানিজ্যের নিয়ন্ত্রক আওয়ামী সাবেক এমপি নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন এর ছত্র ছায়ায় নামে বেনামে ঠিকাদারি করে শত কোটি টাকার মালিক বনে যান। যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাট এর সহযোগী তাসবিরুল হক অনু তার ব্যবসায়িক পার্টনার । তিনি ও অনু মিলে ঢাকার সিটি ডিভিশন, ডিভিশন ২, প্রধান মন্ত্রীর কার্যালয়, গণভবন,বঙ্গভবন সহ সব জায়গায় নাম মাত্র কাজ করে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন। ২০১২ থেকে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিবছর গড়ে ১৫০ জন করে উপসহকারী প্রকৌশলীর বদলী, তার একক নিয়ন্ত্রনে হয়েছে। সে হিসাবে তিনি চার বছরে ৪৫০ জনের বদলী থেকে কম করে হলেও ৩৬ কোটি টাকা কামিয়েছেন। কুমিল্লার এক অজপাড়া গায়ের অতি সাধারন পরিবারে তার জন্ম। নকল করে কোনমতে দ্বিতীয় শ্রেনীতে এসএসসি পাস করে তিনি ভর্তি হন বরিশাল পলিটেকনিকে। সেখানে গিয়ে পড়াশোনা না করে ছাত্রলীগের গুন্ডা হিসাবে রেফার্ড পেয়ে ডিপ্লোমা পাস করেন। কিন্তু সরকারি চাকুরিতে ঢুকে তিনি যেন রাতারাতি আলাদীনের চেরাগ হাতে পেয়ে যান। ধানমন্ডিত, বনানী, শ্যামলী,উত্তরা সহ নানা জায়গায় তার ২৭ টি ফ্ল্যাট রয়েছে। মোশারফ হোসেনের বদান্যতায় নিজ নামে পূর্বাচলে ৩ কাঠার প্লট পেয়েছেন, কক্স বাজারে জাগৃকের ফ্ল্যাট পেয়েছেন। নিজের ভাই , শালা, শশুরের নামে নিয়েছেন উত্তরাতে প্লট। দূর্নীতির টাকায় রাজধানীর মিরপুরে যে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির মালিক হয়েছেন তার আনুমানিক বাজার মূল্য আজকের দিনে তিন শত কোটি টাকা।
রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে সরকারি চাকুরি বিধিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শনঃ তার বদলী বানিজ্যের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রন, অবৈধ সম্পদ অর্জন্ সহ নানা অভিযোগে সে সময় জাতীয় দৈনিকে ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশ পায়। ফলে ২০১৬ সালে তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান মুন্সী তাকে প্রথমে সাভার গণপুর্ত বিভাগে বদলী করেন। কিন্তু তিনি প্রধান প্রকৌশলীর অফিস আদেশ উপেক্ষা করে সেখানে যোগদান করেন নি। পরে তাকে খুলনায় বদলী করলে তিনি সেখানেও যোগদান না করে রিট করে দিয়ে বসে থাকেন। তার রিট খারিজ হয়ে গেলে, ডিজারশনের দায়ে তার নামে বিভাগীয় ব্যবস্থা (ডিপি) নেয়ার সুপারিশ করা হয়। কিন্তু ২০১৭ সালে রফিকুল ইসলাম প্রধান প্রকৌশলী হলে টাকার বিনিময়ে সব কিছু ধামা চাঁপা দিয়ে দেন। রফিকুল ইসলাম ও পরবর্তী প্রধান প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেন দুজনের বাড়ি তার নিজ জেলা কুমিল্লায় বিধায় তিনি সেখানকার রাজনৈতিক নেতাদের ধরে তার বিরুদ্ধে চালু হওয়া ডিপির কার্যক্রম বন্ধ রেখে উলটো প্রোমোশন বাগিয়ে নেন। এই যে এক বছর তিনি কোথাও চাকুরি করলেন না, তার জন্য যেখানে তার সার্ভিস ডিস্কন্টিনিউইটির জন্য চাকুরিই থাকার কথা না সেখানে তিনি পদোন্নতি পেলেন মোশারফ হোসেন এর প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে। এ নিয়ে তখন গোটা অধিদপ্তরে তখন ব্যাপক কানা ঘূষা হয়েছে যে, তাহলে আইনের শাসন আর থাকলো কই?
বেপরোয়া জীবন ও স্ত্রী হত্যার অভিযোগঃ অবৈধ ভাবে কামানো বিপুল বিত্ত বৈভবের মালিক আলী আকবর দামী পোষাক, দামী গাড়ি, আর পাচ তারকা হোটেলে দামী মদের জীবনে অভ্যস্ত। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের সাথে নিয়মিত মদের আসরে তিনি সুরা পান করতেন, আর সাকীদের সাথে রমন লীলায় মত্ত হতেন। উঠতি মডেল, টিকটকারদের সাথে সম্পর্ক গড়ে উঠায় পুরান বউকে তার আর বিশেষ ভালো লাগতো না। ফলে তাকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে ধীরে ধীরে মেরে ফেলে। এ নিয়ে বিস্তর জল ঘোলা হয়েছে। কিন্তু যুবলীগের গুন্ডাদের দিয়ে ভয় দেখিয়ে শশুর বাড়ির লোকজন কে মামলা করতে দেন নি।
৫ আগস্টের পরে রাতারাতি ভোল পাল্টানোঃ জুলাই বিপ্লবের পর রাতারাতি ভোল পাল্টে আবার অংশ নিয়েছেন ডিপ্লোমা সমিতির নির্বাচনে। সেখানে নিজেকে জাতীয়তা বাদীশক্তির সমর্থক ও বিপ্লবের পক্ষের প্যানেলে জায়গা করে নিতে পেরেছেন, আজীবন বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা প্রকৌশল পরিষদের এই ডাক সাইটে নেতা। যদিও এমন ভন্ড লোকের পরাজয় হয়েছে তা বলাই বাহুল্য। এরকম চিহ্নিত আওয়ামীলীগারকে ভোটার রা ঘৃনা ভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। কিন্তু তিনি টাকার জোরে আবারও সংস্থাপনকে ম্যানেজ করে বদলী বানিজ্য চালিয়ে যেতে থাকেন। কুমিল্লার নানা প্রভারশালী কর্মকর্তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে তিনি ও সংস্থাপনের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মাহাবুব, নির্বাহী প্রকৌশলী স্বপন চাকমা মিলে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বদলীতে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন মর্মে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়। দূর্নীতির অভিযোগে মাহাবুব কে সরিয়ে দিলেও আলী আকবর এখনো বহাল তবিয়তে আছেন। ইতোমধ্যে প্রধান প্রকৌশলী পদে রদবদল হলে আলী আকবর ঝোপ বুঝে কোপ মারার ধান্দায় থাকবে সন্দেহ নেই। বর্তমান প্রশাসনের কাছে আমাদের প্রত্যাশা এরকম একজন দলদাস আওয়ামী কর্মীকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা। তার বিগত ষোল বছরের দিন লিপি পর্যবেক্ষন করলে দেখা যাবে তিনি সারা দিন সভা সমাবেশ, রাজনৈতিক কর্মসূচী পালন করেছেন। এর বাইরে কেবল এর অর বিয়ে, জন্ম দিন, সুন্নতে খাতনা, মুলখানীর জেয়াফত খেয়ে বেরিয়েছেন ; দল্ধরে কক্সবাজার ভ্রমন, সাংগঠনিক সফরে বাংলাদেশ ঘুরে বেড়িয়েছেন। জনগনের করের টাকায় বেতন নিয়ে রাষ্ট্রকে এক টাকার সার্ভিসও দেননি। রাজনৈতিক বক্তৃতা দিতে দিতে তার প্রকৌশল জ্ঞান শূন্যের কোঠায় পৌছে গেছে। সময় এসেছে এই সব বোঝাকে ঝেড়ে ফেলার। আমরা চাই এই দূর্নীতিবাজ কর্মচারীর গত দেড় যুগের আমল নামার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত হোক। দুষ্টের দমন আর শিষ্টের লালন যদি প্রতিষ্ঠিত না হয় তাহলে জুলাই এর চেতনা ম্লান হয়ে যাবে।









