সরকারি ক্রয়ে এক দেশে দুই নীতি সরকারের বিপুল অংকের টাকার আর্থিক ক্ষতি

নিজস্ব প্রতিবেদক: গত ১৬ অক্টোবর ২০২৪খ্রিঃ তারিখে গণপূর্ত অধিদপ্তর থেকে মহাপরিচালক সমাজ সেবা অধিদপ্তরকে ৪টি শিশু উন্নয়ন প্রকল্প সম্পর্কে একটি পত্র দেয়া হয়। তাতে উল্লেখ রয়েছে ৪টি শিশু উন্নয়ন প্রকল্পের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী খসড়া প্রাক্কলন ও ক্রয়কার্যের কর্মপরিকল্পনা গণপূর্ত অধিদপ্তরের মাধ্যমে করা হয়েছে। সেখানে কিশোর গঞ্জ জেলার বাজিতপুর শিশু কেন্দ্র (বালক) এর প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩১ কোটি ২৪ লক্ষ টাকা; জয়পুরহাট জেলা শিশু কেন্দ্র (বালক) এর প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩২ কোটি ৪৬ লক্ষ টাকা; চট্টগ্রাম জেলার রাউজান শিশু কেন্দ্র (বালক) এর প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১০৪ কোটি ৫৮ লক্ষ টাকা; গাজীপুর জেলার টঙ্গী শিশু কেন্দ্র (বালক) এর প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৬ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা। রুলস অব বিজনেস ও এলোকেশন অব বিজনেস অনুযায়ী এই প্রকল্পের পূর্ত কাজ গুলো গণপূর্ত অধিদপ্তরের মাধ্যমে ক্রয় করার কথা। একনেকে পাস হওয়া ডিপিপি তে ও ক্রয় পরিকল্পনাতে গণপূর্ত অধিদপ্তর উম্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে প্যাকেজ সমূহের ক্রয় কাজ সম্পাদন করবে এমনটাই উল্লেখ ছিলো মর্মে জানা যায়। কিন্তু হঠাতই এই কাজগুলোর মধ্যে ১০০ কোটি টাকার ঊর্ধের কাজ গুলো করার জন্য ২৪মে ২০২৫ সেনা কল্যান সংস্থা থেকে মাননীয় উপদেষ্টা বরাবর সরাসরি ক্রয় (ডিপিএম) পদ্ধতিতে ক্রয়ের আগ্রহ প্রকাশ করে পত্র দিয়েছে। গণপুর্ত অধিদপ্তর বাস্তবায়ন করলে সেখানে উম্মুক্ত দরপত্র (ওটিএম) পদ্ধতিতে দরপত্র আহবান করলে সেখানে প্রতিযোগিতার পরিবেশ নিশ্চিত হতো। কিন্তু ডিপিএম পদ্ধতিতে একটি নির্দিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আগেই ঠিক করা থাকে। তাই অন্যরা প্রতিযোগিতায় অংশই নিতে পারে না। এটা কি বৈষম্য নয়? তাছাড়া ডিপিএম পদ্ধতির ক্ষেত্রে পিপি আর ২০০৮ এর বিধি ৭৫(৫) অনুযায়ী দরপত্র জামানত এর প্রয়োজন নাই বিধায় সরকার ন্যায্য রাজস্ব হারাবে। তাছাড়া ডিপিএম পদ্ধতিতে ঠিকাদার ইচ্ছামতো দর হাকানোর সুযোগ পাবে, ফলে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় হবে। উপরন্তু গণপূর্ত অধিদপ্তর বাস্তবায়ন করলে স্থাপত্য ও কাঠামোগত নকশা প্রনয়নে কোন পরামর্শক নিয়োগের প্রয়োজন হতোনা। কিন্তু সেনা কল্যান সংস্থার নিজস্ব ডিজাইন টিম নেই ফলে পরামর্শক নিয়োগের দরকার হবে, ফলে প্রকল্প ব্যয় ও সময় উভয়ই বৃদ্ধিপাবে। ডিপিপির ব্যত্যয় ঘটিয়ে ক্রয়কার্য সেনা কল্যান সংস্থাকে দেয়া হলে সে ক্ষেত্রে সময় ও রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় হবে , পুনরায় একনেকে অনুমোদন নিতে হবে। ২৪মে ২০২৫ সেনা কল্যান সংস্থা থেকে মাননীয় উপদেষ্টা বরাবর সরাসরি ক্রয় (ডিপিএম) পদ্ধতিতে ক্রয়ের আগ্রহ প্রকাশ করে যে পত্রটি দেয়া হয়েছে তাতে ২৩ নভেম্বর ২০২০ খ্রিস্টাব্দের শেখ হাসিনা প্রধান মন্ত্রী থাকা কালে একটি পরিপত্রকে রেফারেন্স হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। ২০২৪ এর জুলাই বিপ্লবের পরও হাসিনার আবদার মেটানোর কোন দায় বদ্ধতা কি রয়েছে? সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত আইন (পিপিএ ২০০৬) এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত বিধিমালা(পিপি আর ২০০৮) এর বিধি ৭৬ অনুযায়ী যে সকল ক্ষেত্রে ডিপিএম পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায়, এই কাজটি মোটেই সে প্রকৃতির নয়। আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে এই কাজ ডিপিএম পদ্ধতিতে দেয়ার সুযোগ আছে কিনা। এভাবে ডিপিএম করার ক্ষেত্রে আগেই একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সেনা কল্যান সংস্থার সাথে আগ্রহ ব্যক্ত করে চুক্তি করে থাকে। এ ক্ষেত্রে অবৈধ অর্থের লেন দেনের একটি সুযোগ থেকে যায় কিনা সে প্রশ্ন থেকেই যায়। এ সমস্ত বিষয়ে মন্তব্য জানতে সমাজকল্যান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাকে ফোন দিয়ে লিখিত প্রশ্ন WhatsApp এ প্রেরন করা হলে, তিনি জানান অফিসিয়াল বিষয়ে অফিসিয়ালি ব্যবস্থা নেয়া হবে, তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। একই বিষয়ে মহাপরিচালক সমাজ সেবা অধিদপ্তরকে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোন উত্তর দিতে পারেন নি।