ঢাকা | এপ্রিল ২৮, ২০২৫ - ৮:০২ অপরাহ্ন

শিরোনাম

ফ্যাসিবাদের দোসর নির্বাহী প্রকৌশলী সমীরণ মিস্ত্রী: ঢাকায় বহাল তবিয়তে!

  • আপডেট: Monday, April 28, 2025 - 1:19 pm
  • পঠিত হয়েছে: 6 বার

নিজস্ব প্রতিবেদক: দুর্নীতিবাজ ও ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের মন্ত্রী শরীফ আহমেদের নিয়মিত মেয়ে সাপ্লাইয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী সমীরণ মিস্ত্রী এখনও ঢাকায় বহাল তবিয়তে।

গণপূর্ত ইএম বিভাগ-৭ এর বহুল আলোচিত নির্বাহী প্রকৌশলী সমীরণ মিস্ত্রী ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের প্রতি মন্ত্রী মোঃ শরীফ আহমেদ কে সংসদের বাস ভবনে নিয়মিত মেয়ে সাপ্লাইয়ার কাজে নিয়োজিত ছিল সমীরণ মিস্ত্রী। ওদিকে সমীরন মিস্ত্রী ও তার অধীনের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সিফাত ওয়াসীকে নিয়ে আলোচনা সমালোচনা হয়েছে বিস্তর। এবার সেই আলোচনাকে সত্যে রূপান্তরিত করলো তাদের বদলির অর্ডার। বলা হচ্ছে, সমীরণ-সিফাত ওয়াসী জুটি গণপূর্তের উত্তম সুচিত্রা জুটিতে পরিণত হয়েছে। ফলে একজন, আরেকজন কাছাকাছি ছাড়া থাকতে পারেন না।

এই প্রভাবশালী প্রকৌশলীদের ঢাকা ছাড়তে হয় না, এ যেন এক অলিখিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সমীরণ মিস্ত্রীর চাকরি নিয়ে রয়েছে বিরাট কাহিনী বিসিএস ছাড়া তৎকালীন ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আমলে সরাসরি নিয়োগ পান উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হিসাবে যা মহামান্য সুপ্রীম কোর্ট পর্যন্ত গড়ায় তাতে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের অন্যতম দোসর হওয়ায় কোন আদালত তাদের আটকে রাখতে পারি নি ইতিহাসে একটি বিরল ঘটনা উপ-বিভাগীয় প্রকৌশল সরাসরি নিয়োগ।গেল ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ফলে দেশের অন্যতম বিতর্কিত এ অধিদপ্তরের চিত্র কিছুটা পাল্টাবে এমন প্রত্যাশা থাকলেও মূলত দেখা গেছে একই ধারাবাহিকতা।

অভিযোগ আছে, প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতারকে ঘিরে কয়েকজন নির্বাহী প্রকৌশলীর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট টেন্ডার ও পোস্টিং বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা কামানোর যে মিশন শুরু করেছিলেন; তা এখনও অব্যাহত আছে। শেখ হাসিনা সরকারের বিদায়ের পর এসব মাফিয়া প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবির প্রেক্ষিতে গত ১ সেপ্টেম্বর সমীরণ মিস্ত্রীকে ইএম পিএন্ডডি বিভাগ-১ এ বদলি করা হয়। তিনি ইএম বিভাগ-৭ এর দায়িত্ব হস্তান্তর করে নতুন পদায়নকৃত পদে যোগদান করেছেন। কিন্তু মন পড়ে ছিল সিফাত ওয়াসীর কাছে। অবশেষে প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে দেখা করে সিফাত ওয়াসীকে তার অধীনে বদলির অনুরোধ জানালে ১৩ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সরকারি ছুটির দিনে সিফাত ওয়াসীকে সমীরণের অধীনে বদলি করা হয়।

ইএম বিভাগ-৭ এর অধীনে প্লানিং কমিশনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন সিফাত ওয়াসী। নিজ আওতাধীন এলাকায় দায়িত্ব পালনে চরম অদক্ষতা ও দুর্নীতির পরিচয় দেন সিফাত ওয়াসী। দায়িত্ব পালনের পুরো সময়টিতেই তিনি নির্বাহী প্রকৌশলী সমীরণ মিস্ত্রীর সঙ্গে লেপ্টে ছিলেন।

এ নিয়ে সে সময়ে নানা কথাবার্তা উঠলেও সমীরণ তার ক্ষমতাবলে আগলে রেখেছিলেন সিফাত ওয়াসীকে। সাবেক গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদের স্ত্রী সিফাত ওয়াসীকে বদলি করার জন্য প্রধান প্রকৌশলীকে অনুরোধ জানালেও সমীরণ নিজ ক্ষমতাবলে তা আটকে দিয়েছিলেন। সে সময়ে গুঞ্জন উঠেছিল তারা বিয়ে করেছেন।

শর্ট ডিভোর্স সিফাত ওয়াসীকে দীর্ঘদিন ধরে সিঙ্গেল জীবন-যাপন করলেও শুধুমাত্র সমীরণের কারনে অন্য কোথাও বিয়ে করেননি। তাকে তাঁর বোন, বন্ধু ও সহকর্মীরা বিয়ের জন্য চাপ দিলেও নানা অযুহাতে এড়িয়ে গেছেন। এবারের পোস্টিংয়ের পর সবার বদ্ধমূল ধারনা হয়ে গেছে যে যতো চেষ্টাই করুক না কেনো সিফাতকে সমীরণ থেকে আলাদা করা কঠিনই শুধু নয়, অসম্ভব।

গণপূর্ত অধিদপ্তরে কথা উঠেছে তাহলে কী সমীরণ তাঁর ভাবগুরু গণপূর্ত সার্কেল-৩ এর সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রোকন উদ্দিনের মতো সহকর্মীকে বিয়ে করছেন বা করছেন? প্রসঙ্গত: সার্কেল-৩ এর দায়িত্ব পালনকালে তাঁর অধীনস্থ এক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীকে বিয়ে করেন। বর্তমানে তারা অস্ট্রেলিয়া ও মালয়েশিয়া যৌথ জীবন-যাপন করছেন। রোকন উদ্দিন তাঁর প্রথম স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন। সে ঘরে তার একটি মেয়ে ও একটি ছেলে রয়েছে।

ইএম বিভাগ-৭ এ নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আনোয়ার হোসেনকে। এর আগে দীর্ঘ ৭ বছর গণপূর্তের সবচেয়ে প্রেস্টিজিয়াস ডিভিশনে দায়িত্ব পালন করেন সমীরণ মিস্ত্রী সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম, পরে গণপূর্ত সচিব শহীদুল্লাহ খন্দকার ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী মো. শরীফ আহমেদকে ব্যবহার করে নিয়ম বহির্ভূতভাবে একই বিভাগে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি সাত বছরে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে ও প্রধান প্রকৌশলী প্রজ্ঞাপন অমান্য করে কোটি কোটি টাকা দরপত্র এলটিএম পদ্ধতির পরিবর্তে ওটিএম পদ্ধতিতে আহবান করে পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ দিয়ে শত শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন সমীরন মিস্ত্রী। খুলনা ডুমরিয়ায় ২০ একর মাছের ঘের কিনেছেন ও খুলনাতে করেছেন আলিশান বাড়ি এবং ঢাকায় একাধিক ফ্ল্যাট ও জমি ক্রয় করেছেন বাড়ি নির্মানধীন। কখনো কখনো তিনি শেখ হেলাল, শেখ জুয়েল ও তার স্ত্রীকে ব্যবহার করে নিজের পোস্টিং টিকিয়ে রেখেছিলেন।

বিগত ২০২৪ সালে সেপ্টেম্বরে এসব বদলীর মধ্যে গণপূর্ত অধিদপ্তরের সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে সমীরণ মিস্ত্রীকে ঘিরে। অভিযোগ আছে, দীর্ঘ সময় ঢাকায় থাকা প্রকৌশলীদের নিয়ে গড়ে উঠা সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দেন এই প্রকৌশলী। এমনকি কার কোথায় পোস্টিং হবে তাও নির্ধারণ করেন সমীরণ। এখনও ঢাকায় বসে ই/এম র সকল কাজের টেন্ডার বানিজ্যের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রক হিসাবে কাজ করছেন সমীরণ মিস্ত্রী।

সমীরণ মিস্ত্রী শেরে বাংলা নগর (ইএম) ডিভিশনে পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন করে মেরামত খাতে কমপক্ষে ৮০ কোটি টাকা খরচ করেছেন। যার বেশিরভাগই কাজ না করে নিজের বিশ্বস্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিল-ভাউচার করার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া সংসদ সচিবালয়ে আসা মেরামতের টাকার একটি বড় অংশ সমীরণের মাধ্যমে খরচ হয়েছে। সেখানে ব্যাপক আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এতকিছুর পরও সমীরণ মিস্ত্রীকে সমীহ করে ঢাকাতেই রাখলেন প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতার।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে খোদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীরা এই বদলীকে ‘ পেইজ পোস্টিং’ হিসেবে দেখছেন যার আনুমানিক খরচ ২ থেকে ৩ কোটি টাকা বলে জানায় সূত্রটি।

আলোচিত পেইজ পোস্টিং বিষয়ে জানতে নির্বাহী প্রকৌশলী সমীরণ মিস্ত্রীকে ফোন করা হলেও তার কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতারকেও ফোন করলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, মোহাম্মদ শামীম আখতারের অনিয়মরে বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি করেছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে তদন্ত করে কমিটিকে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়। ২ সেপ্টেস্বর গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব শেখ নূর মোহাম্মাদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (অডিট অনুবিভাগ) শাহনাজ সামাদকে আহ্বায়ক, উপসচিব (বাজেট অধিশাখা-৪) মো. মাহবুবুর রহমান সদস্য সচিব ও যুগ্মসচিব (উন্নয়ন অধিশাখা-১৪) মো. জহিরুল ইসলাম খানকে সদস্য করে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে উল্লিখিত অভিযোগগুলো তদন্তপূর্বক সুস্পষ্ট মতামতসহ একটি প্রতিবেদন সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বরাবর দাখিল করতে বলা হয়েছে। আজও তা আলোর মুখ দেখে নি সমীরণ মিস্ত্রীর কোটি কোটি টাকার কাছে সকল তদন্ত কমিটি হার মেনেছে।সমীরণ মিস্ত্রীর চাকুরী নিয়োগ সহ দুনীর্তির সকল তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনার জোর দাবী জানান ছাত্র ও জনতা।

অভিযোগ আছে, আওয়ামী লীগ সরকারে প্রভাবশালী মন্ত্রী, সচিব ও রাজনীতিবিদদের কোটায় এ পাঁচ প্রকৌশলীর সিন্ডিকেট করে হাতিয়ে নিয়েছেন হাজার কোটি টাকা। তাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও নামে বেনামে অঢেল সম্পদের অভিযোগ থাকার পরেও কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ