এক কেজি ওজনের ইলিশ ৩ হাজার টাকা
টাচ নিউজ: রইলিশ মাছ শিকারে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের মধ্যে চাঁদপুরে আকাশছোঁয়া দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। এক কেজি অথবা এক কেজি দুই শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার আট শ’ থেকে তিন হাজার টাকায়।
শনিবার রাত ১২টার পর থেকে প্রশাসনের জারি করা মাছ শিকার নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে আগামী ৩ নভেম্বর পর্যন্ত।
পদ্মা-মেঘনার মিঠাপানিতে ইলিশের ডিম ছাড়াকে নির্বিঘ্ন করতে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে প্রশাসন। প্রতিবছর এই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।
সরকারের আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণেই দেশের অন্যতম বৃহৎ চাঁদপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র- ‘বড় স্টেশন মাছ ঘাটে’ ইলিশ কিনতে শুক্রবার ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। তবে দাম মধ্যবিত্ত ও গরিবের ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আজও রেকর্ড দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে ইলিশের বড় পাইকারি এই মাছঘাটে গিয়ে দেখা গেছে ক্রেতা-বিক্রেতায় সরগরম আড়তগুলো। বিশেষ করে খুচরা ক্রেতাদের ভিড়। তারা দূর দুরান্ত থেকে এসেছেন।
স্থানীয় জেলেরা বরফ ছাড়া তাজা ইলিশ নিয়ে আসছে আড়তগুলোতে। আবার কিছু ইলিশ নোয়াখালী হাতিয়া এলাকা থেকে মিনি ট্রাকে সড়ক পথে আসছে ঘাটে।
ব্যবসায়ীরা জানান, এক কেজি দুই শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতিকেজি খুচরা বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার টাকা। আট শ’ থেকে নয় শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার আট শ’ থেকে থেকে দুই হাজার টাকা। পাঁচ শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে এক হাজার দুই শ’ থেকে এক হাজার তিন শ’ টাকায়। আর ছোট সাইজের অর্থাৎ আড়াই শ’ থেকে তিন শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকা কেজি।
শহরতলীর আশিকাটি থেকে আসা সোলাইমান বলেন, গত এক সপ্তাহ আগেও ইলিশের দাম আরো কম ছিল। ইলিশ ধরা বন্ধ হওয়ার কারণে ছোট-বড় প্রতিকেজি ইলিশের দামে বেড়েছে পাঁচ শ’ থেকে সাত শ’ টাকা। কেনার ইচ্ছা থাকলেও দাম বেশি হওয়ার কারণে কিনতে পারছি না।
ঢাকা থেকে বেড়াতে এসে ঘাটে ইলিশ মাছ কিনতে এসেছেন নাজনিন নামক এক কলেজ শিক্ষিকা। তিনি বলেন, আড়তগুলো ঘুরে দেখছি। দাম অনেক চড়া।
জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলা থেকে ইলিশ কিনতে আসা মানিক, মন্টু ও সোহরাব জানান, বরফ দেয়া ইলিশের দামও রেকর্ড ছাড়িয়েছে। এক কেজি ওজনের ইলিশের খুচরা দাম তিন হাজার টাকা। এক সপ্তাহ আগেও এই ইলিশ বিক্রি হয়েছে দুই হাজার থেকে দুই হাজার দুই শ’ টাকায়। একদম জাটকা সাইজের ইলিশ প্রতিকেজি আট শ’ থেকে হাজার টাকা। অসম্ভব দাম বেড়েছে ইলিশের।
মেসার্স কালু ভুঁইয়া আড়তের ম্যানেজার ওমর ফারুক বলেন, ইলিশের দাম এখন সর্বোচ্চ। এর কারণ হচ্ছে সামনে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। মাছঘাটে সরবরাহের চাইতে খুচরা ক্রেতার সংখ্যা কয়েকগুন বেশি। সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খুচরা বিক্রেতার ভিড় থাকে। তাছাড়া আজ ছুটির দিনে অনেক ট্রুরিষ্টও মাছঘাট সংলগ্ন বঙ্গবন্ধু ট্যুরিষ্ট পার্কেও এসেছে। দেখা গেছে, অনেক ইলিশপ্রিয় ভোজনরসিক পরিবারের সদস্যসহ এসে মাছ কিনে পাশের রেস্টুরেন্টে নিয়ে নিজের চোখের সামনে ভেজে টাটকা ইলিশের স্বাদ নিচ্ছেন। তারা ঢাকার ধানমন্ডি থেকে এসেছেন।
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সম্পাদক শবেবরাত সরকার বলেন, ১২ অক্টোবর দিবাগত মধ্যরাত থেকেই ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা। ২২ দিন ইলিশ বিক্রি বন্ধ থাকবে। শেষ মুহূর্তে ইলিশ কিনতে লোকজন ঘাটে আসছেন। দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা থেকে চাঁদপুরের এ ঘাটে ইলিশের সরবরাহ কম হওয়ায় ইলিশ এখন সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে, যা আগে কেউ দেখেনি।
ঘাটের প্রবীণ ব্যবসায়ী আলহাজ্ব নুরুল ইসলাম, মোস্তফা খান, দীদার খানসহ সবাই জানান, ইলিশ মাছের এত দাম গত ৫০ বছরেও কখনো দেখিনি।
বিকেলে শহরের ব্যস্ততম বিপনীবাগ বাজার, ওয়ারলেস বাজার, প্রসিদ্ধ পালবাজার, নতুনবাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে একই চিত্র দেখা গেছে। বাজারে মাছের সরবরাহ প্রচুর থাকলেও দাম সাধারণের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারি সারওয়ার হোসেনসহ অনেকেই অসহায়ভাবে ইলিশের দিকে তাকিয়ে দাম বেশি হওয়ায় ফিরে গেছেন। তার বলছেন, ইলিশ মাছ টুকরা করে বিক্রি করলেও কিছুটা পুষিয়ে নেয়া যাবে। এক ইলিশের টাকা দিয়ে চার কেজি গরুর গোশত কেনা যায়।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, ইলিশ সামুদ্রিক মাছ। ডিম ছাড়ার জন্য এই সময়টাতে পদ্মা–মেঘনার মিঠাপানিতে ছুটে আসে। যে কারণে সরকার আগামী ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন জেলার মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার অভয়াশ্রম এলাকায় ইলিশসহ সব ধরণের মাছ ধরা, বহন ও বিক্রি বা স্টক করা নিষিদ্ধ করেছে। মা ইলিশ রক্ষায় ইতোমধ্যে জেলা ও উপজেলা টাস্কফোর্স সব ধরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।