আমি সকালে ১০ পাঠাই দিতাছি, চামেলী বলেন রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজকে

টাচ নিউজ ডেস্ক:
দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সদস্য সৈয়দা রোকসানা ইসলাম চামেলীকে গত ২৪ এপ্রিল দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর। এর আগে চামেলীকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে না বলে ১০ লাখ টাকায় রফাদফা করতে চেয়েছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মো. রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ। তিনি চামেলীকে বলেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফী ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা বলেছেন, ১০ লাখ টাকা হলে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে না। শুধু অব্যাহতি দেওয়া হবে। আর সেটি পরবর্তীকালে যাতে তুলে নেওয়া যায় তার ব্যবস্থা করা হবে। এমন অডিও রেকর্ড প্রতিবেদকের হাতে আছে।
চামেলীর সঙ্গে রিয়াজের ১০ লাখ টাকার বিনিময়ের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের পদ রফা দফা করার বিষয় ১৮ সেকেন্ডের ওই অডিওতে শোনা যায়, ‘রিয়াজ বলেন, আমিতো কাজে আসছি। চামেলী বললেন, কথা হয়েছে? তখন রিয়াজ বললেন, ঠিক আছে অসুবিধা নাই। আপনিতো ওই সময় বললেন সন্ধ্যায় আসবেন, এখন আবার! তখন চামেলী বললেন, মানে সন্ধ্যায় বুঝি নাই? আইসা আবার জোগাড় করতে করতে। তখন রিয়াজ বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে, কথা আর বাড়ানোর দরকার নাই। ঠিক আছে। তখন চামেলী বললেন, ঠিক আছে আমি সকালে ১০ পাঠাই দিতাছি। তখন রিয়াজ বললেন, ঠিক আছে।’
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজের কাছে জানতে চাইলে তিনি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, এটা মিথ্যা। এর আগেও তার বিরুদ্ধে নানা ধরনের অনিয়ম ও শিক্ষিকাদের কু প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শেরেবাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়ের (নারী শিক্ষা মন্দির) শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠে তৎকালীন বিদ্যালয়টির সভাপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজের বিরুদ্ধে। তখন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ তাকে অব্যাহতি দিয়েছিল। কিন্তু কোন এক অদৃশ্য শক্তির কারণে তাকে দেওয়া অব্যাহতি তুলে নেওয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সৈয়দা রোকসানা ইসলাম চামেলী বলেন, ‘হ্যাঁ আমার সঙ্গে রিয়াজের ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে বহিষ্কার করা হবে না এমন কথা হয়েছিল গত ২২ এপ্রিল। রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ বলেছেন- তার সঙ্গে নাকি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে, ১০ লাখ টাকা দিলে তারা বহিষ্কার করবে না। শুধু অব্যাহতি দিয়ে একটা চিঠি দেবে। কিন্তু এত অল্প সময়ের মধ্যে ১০ লাখ টাকা আমি যোগাড় করতে পারিনি। তাই ১০ লাখ টাকা দিতে পারিনি বলে পরে আমাকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ আমাকে যে ফোন করেছিল সেটি আমি অডিও রেকর্ড করে রেখেছি। তার অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির বলেন, রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ এর আগেও একটি স্কুলের সভাপতি হয়েছিলেন। সেখানে টাকা পয়সার অনিয়ম করার অভিযোগ ওঠে। এমনকি নারী শিক্ষাদের কুপ্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। তখনো দল থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীকে ফোন করা হলে তার পিএস ধরেন। তিনি বলেন, স্যার এখন ব্যস্ত আছেন। স্যার এই মুহূর্তে সাভারে একটি প্রজেক্ট ভিজিটে আসছেন। স্যার এখন কথা বলতে পারবেন না।
এদিকে, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সদস্য ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ২০ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর সৈয়দা রোকসানা ইসলাম চামেলীর একটি নগ্ন ভিডিও ভাইরাল হয়। এ ভিডিওটি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরপাক খায়। রিপ্রেক্ষিতে গত ২৪ এপ্রিল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সদস্য পদ থেকে সৈয়দা রোকসানা ইসলাম চামেলীকে অব্যহতি দেওয়া হয়। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজের স্বাক্ষর করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ একটি সুসংগঠিত ও সুশৃঙ্খল সংগঠন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফী ও সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির গঠনতন্ত্রের ৪৭(৯) ধারা মোতাবেক সংগঠনের কার্যনির্বাহী সদস্য সৈয়দা রোকসানা ইসলাম চামেলীকে সংগঠনের শৃঙ্খলার পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কারণে পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।