পেট জোড়া লাগা যমজ শিশুর চিকিৎসা নিয়ে বিপাকে পরিবার
আনিছ আহম্মদ হানিফ,চাটখিল উপজেলা প্রতিনিধি:
নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলা ৪ নং বদলকোট ইউনিয়ন দরগা বাড়ির মাহাবুল হকের স্ত্রী গর্ভে বিয়ের নয় মাসের মাথায় জোড়া লাগা পেটের যমজ কন্যাশিশুর জন্ম দিয়েছেন আফরোজা সুলতানা মেঘলা নামের এক প্রসূতি।
শুক্রবার সরজমিনে গিয়ে স্থানীয় ও পরিবারের থেকে জানতে পারি গত ২৬ জানুয়ারি (শুক্রবার) ভোর ৪ টায় ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ছোট অস্ত্রপাচারের মাধ্যমে তাদের জন্ম হয়। বাচ্চা দুটির নাম রাখা হয়েছে মায়মুনা আর মরিয়ম।
প্রসুতী আফরোজা সুলতানা মেঘলা নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলায় বদলকোট ইউনিয়নের উত্তর বদলকোট দরগাহ বাড়ির মাহবুব আলমের মেয়ে। মেঘলার স্বামী শাহানুর ইসলাম মুন্সিগঞ্জের ভাটারচরে একটি কাপড়ের মিলে দিনমজুরের কাজ করেন।
মেঘলার মা ফাতেমা আক্তার বলেন, ‘১০ মাস আগে ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার শাহানুর ইসলামের সাথে তার মেয়ে মেঘলার বিয়ে হয়। শাহানুর-মেঘলা দম্পতির প্রথম সন্তান মায়মুনা-মরিয়ম।মেঘলা গর্ভবতী হওয়ার ৮ মাসের মাথায় আলট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে যমজ শিশুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। তবে তাদের শারিরীক অবস্থা তথা জোড়া লাগার বিষয়টি জানা যায়নি। গত ২৬ জানুয়ারি ভোরে মেঘলার প্রসব ব্যাথা উঠলে তাকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ছোট অস্ত্রোপাচারের মাধ্যমে শিশু মায়মুনা-মরিয়মের জন্ম হয়। বর্তমানে তারা আউটডোরে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকের পরামর্শ নিচ্ছেন। চিকিৎসকরা বাচ্চা দুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেছেন।
শিশু মায়মুনা-মরিয়মের বাবা শাহানুর ইসলাম বলেন, আমি নিজে একজন দিনমজুর। একটি কাপড়ের মিলে কাজ করি। আর্থিক অবস্থা ভালো না। এ অবস্থায় চিকিৎসক বাচ্চাদের ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু আর্থিক সক্ষমতা না থাকায় তা সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় সরকার ও বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেন।
মায়মুনা-মরিয়মের মা আফরোজা সুলতানা মেঘলা বলেন, ‘বিয়ের পর যখন জানতে পারলাম আমার গর্ভে সন্তান এসেছে তখন অনেক আনন্দিত ছিলাম। সন্তান জন্মের পর এ অবস্থা দেখে আমরা সবাই চিন্তিত। আমার সন্তানদের সুচিকিৎসা চাই। আমাদের আর্থিক সক্ষমতা নেই। ঢাকা নিয়ে চিকিৎসা চালানো আমাদের পক্ষে অসম্ভব। সরকারি সহায়তায় আমার সন্তানদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করার দাবি জানাই।’
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ও সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডাঃ মোঃ সাইফুদ্দিন বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে যমজ দুই শিশুর পেট একসঙ্গে লাগা বলে মনে হচ্ছে। তবে তারা পৃথকভাবে শ্বাস নিচ্ছেন। বর্তমানে বাংলাদেশেই এটার উন্নত চিকিৎসা রয়েছে। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেছি।’
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: হেলাল উদ্দিন বলেন, আমাদের হাসপাতালে আসার পর সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডাঃ মোঃ সাইফুদ্দিন ও শিশু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ জহিরুল ইসলাম সহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি দল শিশু দুটিকে দেখে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজে রেফার করেছে। তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো প্রয়োজন। হাসপাতালের পক্ষ থেকে শিশু দু’টি পরিবারকে কিছু আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে।