ঢাকা | ডিসেম্বর ২১, ২০২৪ - ১২:০৬ অপরাহ্ন

শিরোনাম

ইসলামে হক্কুল্লাহ (আল্লাহর হক) এবং হক্কুল ই’বাদের (বান্দার হক) গুরুত্ব শীর্ষে

  • আপডেট: Thursday, February 1, 2024 - 5:36 pm
  • পঠিত হয়েছে: 590 বার

মুফতী মাসুম বিল্লাহ নাফিয়ী

হক্ক আরবি শব্দ অর্থ অধিকার, দাবি, পাওনা ও প্রাপ্য। আল্লাহ তা’য়ালা পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টি করে কিছু দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। এ দায়িত্বের কারণেই মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ। ইসলামে মানুষের উপর অর্পিত দায়িত্বকে দুভাগে ভাগ করা হয়েছে- ১. হাক্কুল্লাহ তথা আল্লাহর হক ও প্রাপ্য। ২. হাক্কুল ইবাদ তথা মানুষের হক ও প্রাপ্য। উল্লেখ্য ইবাদ শব্দটি আব্দ শব্দের বহুবচনে ব্যবহারিত হয়েছে। আব্দ অর্থ দাস বা বান্দা। ইসলামে হাক্কুল্লাহ (আল্লাহর হক) এবং হাক্কুল ইবাদের (বান্দার হক) গুরুত্ব শীর্ষে। প্রতিটি মানুষকেই এ দু’টো প্রাপ্য আদায় করতে হবে পৃথিবীতে। আর তা করলেই পরকালে লাভ করবে প্রতিদান ও শান্তিময় জীবন।

হাদীসে নববীতে বর্ণিত হয়েছে, হজরত মু’য়াজ ইবনে জাবাল রাঃ বলেন, আমি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামার পিছনে একটি গাধার উপর সওয়ার ছিলাম। তিনি বললেন, হে মু’য়াজ! তুমি কি জানো, বান্দার উপর আল্লাহর হক কী এবং আল্লাহর উপর বান্দার হক কী? আমি বললাম, আল্লাহ ও তার রাসূলই অধিক জানেন। তিনি বললেন, বান্দার উপর আল্লাহর হক এই যে, বান্দা তার ইবাদত করবে, এতে তার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করবে না। আর আল্লাহর ওপর বান্দার হক এই যে, যে ব্যক্তি তাঁর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করবে না, তিনি তাকে আজাব দেবেন না। অতঃপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কী লোকদের এ সুসংবাদ দেব না? তিনি বললেন, তাদের সুসংবাদ দিয়ো না। কেননা তারা এরই উপর ভরসা করে বসে থাকবে (বুখারি : ২৮৫৬)। আল্লাহর প্রতি মানুষের হক হচ্ছে, তার দেয়া আদেশ-নিষেধ মেনে চলা। তার সঙ্গে কাউকে শরিক না করা এবং তার ইবাদত করা। রাব্বুল ইজ্জত শ্বাশত কোরআনে এরশাদ করেন, ‘তোমরা ইবাদত করো আল্লাহর, তার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করো না। আর সদ্ব্যবহার করো মা-বাবার সঙ্গে, নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে, এতিম, মিসকিন, নিকটাত্মীয়-প্রতিবেশী, অনাত্মীয়-প্রতিবেশী, পাশবর্তী সাথী, মুসাফির এবং তোমাদের মালিকানাভুক্ত দাস-দাসীদের সঙ্গে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পছন্দ করেন না তাদের, যারা দাম্ভিক-অহঙ্কারী।’ (সুরা নিসা : ৩৬)। আরও বর্ণিত হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সঙ্গে শরিক করাকে ক্ষমা করবেন না, এ ছাড়া অন্যান্য পাপ যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে শরিক করল অবশ্যই সে চরম ভ্রষ্টতায় পথভ্রষ্ট হলো’ (সুরা নিসা : ১১৬)। আর মানুষের হক বা অধিকার হচ্ছে- জাতি, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে ভালোবাসা, সবার সেবা করা, সাহায্য-সহযোগিতা করা। একজন মুসলিম অন্য মুসলিমের সঙ্গে দেখা হওয়া মাত্র যে হক আদায় করতে হয়, তার অন্যতম হচ্ছে সালাম ও সৌজন্য বিনিময় করা। সালাম বিনিময় শুধু একজন মুসলিমের সঙ্গে অন্য মুসলিমের হক আদায় নয়, এর মাধ্যমে সম্প্রীতি বাড়ে, শত্রুতা কমে। পরস্পরের জন্য কল্যাণের দোয়া করা হয়। পরিবার, সমাজ ও মানবসেবাও হলো হাক্কুল ই’বাদের অন্যতম দিক। হাদিস শরিফে নবী করিম সাঃ এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়ায় অপরের একটি প্রয়োজন মিটিয়ে দেবে, পরকালে আল্লাহ তার ১০০ প্রয়োজন পূরণ করে দেবেন এবং বান্দার দুঃখ-দুর্দশায় কেউ সহযোগিতার হাত বাড়ালে আল্লাহ তার প্রতি করুণার দৃষ্টি দেন’ (মুসলিম : ২৫৬৬)।

মানুষের হক ও অধিকারের বিষয়টি অনেক ব্যাপক। অভাবী মানুষকে সহায়তা করা, তাদের তরে নিজেকে বিলীয়ে দেয়া, বস্ত্রহীনকে পোশাক-আশাক দিয়ে সহায়তা করাও সওয়াবের কাজ। হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাঃ বলেন, নবী করিম সাঃ এরশাদ করেছেন, ‘কোনো মুসলমান অন্য মুসলমানকে বস্ত্রহীনতায় বস্ত্র দিলে আল্লাহ তাকে জান্নাতের সবুজ বস্ত্র পরাবেন।’ (তিরমিজি : ২৮৩৫)। আরও এরশাদ হয়েছে, ‘যে মুসলমান অন্য কোনো মুসলমানকে বস্ত্রহীন অবস্থায় বস্ত্রদান করবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে সবুজ বর্ণের পোশাক পরাবেন, খাদ্যদান করলে তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন, পানি পান করালে জান্নাতের শরবত পান করাবেন।’ (আবু দাউদ : ১৭৫২) অন্নহীনকে খাবার দেয়াও হাক্কুল ইবাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। হাদীসে এ প্রসঙ্গে এরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা ক্ষুধার্তকে খাদ্য দাও, অসুস্থ ব্যক্তির খোঁজখবর নাও, বস্ত্রহীন লোকদের বস্ত্র দাও এবং বন্দিকে মুক্ত করে দাও।’ (বুখারি : ২৪১৭)। রাসূলুল্লাহ সাঃ ক্ষুধার্তকে খাবার দান করতে কঠোর নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা ভিক্ষুক (ক্ষুধার্তকে) কিছু না কিছু অবশ্যই দাও, আগুনে পোড়া একটি খুর হলেও।’ (মুসনাদে আহমাদ : ১৬৬৯৯)। আরও বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই ওই ব্যক্তি পূর্ণ মু’মিন নয়, যে নিজে পেটভরে আহার করে। কিন্তু তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে’ (বায়হাকি : ৩৩৮৯)। মানুষের পাওনা পরিশোধ করা অন্যতম একটি দায়িত্ব। এর জন্য পরকালে কঠিন অবস্থার সম্মুখীন হতে হবে। নবী করিম সাঃ বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পরিশোধের নিয়তে মানুষের সম্পদ গ্রহণ করে, আল্লাহ তা’য়ালা তার পক্ষ থেকে তা পরিশোধ করে দেন। আর যে তা নষ্ট করার নিয়তে গ্রহণ করে থাকে, আল্লাহ তাকে নষ্ট করে দেন।’ (বুখারি : ২৯১০)। আরও বলেন, ‘ঋণ পরিশোধ করা ছাড়া মারা গেলে হাশরের মাঠে নিজের নেকি থেকে ঋণের দাবি পূরণ করতে হবে।’ (বুখারি : ২৪৪৯)। আরও বলেন, ‘মুমিনের আত্মা ঝুলন্ত অবস্থায় রাখা হয় তার ঋণের কারণে, যতক্ষণ না তার পক্ষ থেকে ঋণ পরিশোধ করা হয়।’ (তিরমিজি : ১০৭৮)।তিনি আরও বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই সে ব্যক্তি পূর্ণ মু’মিন নয়, যে নিজে পেট পুরে আহার করে। কিন্তু তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে।’ (বায়হাকি : ৩৩৮৯)।

আমরা হাক্কুল্লাহ বা আল্লাহর হকের ব্যাপারে সচেতন থাকলেও হাক্কুল ই’বাদ অর্থৎ বান্দার হকের ব্যাপারে গাফেল বা উদাস। যেমন:- লেনদেনে ধোঁকা, বাটপারি, চিটারি করা, কথা দিয়ে কথা না রাখা, কথায় কথায় অভিশাপ দেয়া, কথার খোটা বা গালি-গালাজ করা, হিংসা বা নিন্দা করা, হেয় মনে করে, মিথ্যা কথা বলা, কারো প্রতি মিথ্যারোপ করা, অন্যের ছবি বিকৃত করা, অন্যের ক্ষতি করা, কাউকে ধোঁকা দেয়া, কারো সঙ্গে প্রতারনা করা, অন্যের অর্থের লোভ করা, গীবত বা পরচর্চা করা, শত্রুতামী করা ইত্যাদি অর্থাৎ মানুষের সঙ্গে সম্পর্কিত যা কিছু আছে তার হক রক্ষা করা বা আদায় করার নামই হলো হাক্কুল ই’বাদ। উল্লেখ থাকে যে, বান্দার হক নষ্ট করার গুনাহ ক্ষমা করার এখতিয়ার আল্লাহ নিজ হাতে রাখেননি। হাদীসে হজরত আবূ হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন, ‘তোমরা কি জানো অভাবী কে? সাহাবীগণ বললেন, আমাদের মধ্যে তো সেই অভাবী যার টাকা-পয়সা ও অর্থ-সম্পদ নেই। রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন, কিয়ামতের দিন আমার উম্মতের মধ্যে সেই সবচেয়ে বেশি অভাবী হবে, যে দুনিয়াতে সালাত, সিয়াম, জাকাত আদায় করে আসবে এবং সঙ্গে সঙ্গে সেই লোকেরাও আসবে, যাদের কাউকে সে গালি দিয়েছে, কাউকে অপবাদ দিয়েছে, কারো মাল-সম্পদ আত্মসাত করেছে, কাউকে হত্যা করেছে, কাউকে আবার মেরেছে। সুতরাং এই হকদারকে তার নেকী দেয়া হবে। আবার ঐ হকদারকেও (পূর্বোক্ত হক্বদার যার উপর জুলুম করেছিল) তার নেকী দেয়া হবে। এভাবে পরিশোধ করতে গিয়ে যদি তার (প্রথমতো ব্যক্তির) নেকী শেষ হয়ে যায় তবে তাদের (পরের হক্বদারের) গুণাহসমূহ ঐ ব্যক্তির উপর চাপিয়ে দেয়া হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (সহীহ মুসলিম- ৬৪৭৩) উপরের হাদীস থেকে বুঝা যায়, কোনো ব্যক্তি সালাত, সিয়াম, হজ্জ, জাকাত আদায় করেও বান্দার হক যথাযাথভাবে আদায় না করার কারণে জাহান্নামে যেতে পারে।

একটি প্রসিদ্ধ হাদীসে দু’জন মহিলার কথা বর্ণিত হয়েছে, যাদের একজন মসজিদে ঝাড়ু দিতো ও বেশি বেশি নফল ইবাদত করত। কিন্তু মূর্খ হওয়ার কারণে প্রতিবেশীকে কষ্ট দিত। অন্যজন নফল ইবাদত কম করলেও প্রতিবেশীর সঙ্গে সদ্ভাব রেখে চলত। রাসূলুল্লাহ সাঃ প্রথম মহিলাকে জাহান্নামী ও দ্বিতীয় মহিলাকে জান্নাতী বললেন। (আহমাদ, বায়হাক্বী) হক্কুল ই’বাদের গুরুত্বে রাসূলে মাকবুল সাঃ বলেন, প্রকৃত মুসলিম সেই ব্যক্তি, যার জবান (কথা) ও হাত থেকে অন্য মুসলিম নিরাপদ থাকে। আর মুহাজির সেই ব্যক্তি, আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন তা সে পরিত্যাগ করে। (সহীহ বুখারী- ৬৪৮৪) বিদায় হজের শেষ ভাষণে রাসূল সাঃ ‘নিশ্চয়ই তোমাদের পরষ্পরের রক্ত, সম্পদ ও সম্মান পরষ্পরের জন্য হারাম’ (সহীহ বুখারী, মুসলিম)। অন্যত্র রাসূল সাঃ আবার বলেন- একজন মানুষের মন্দ হওয়ার জন্য এতটুকু যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে হেয় মনে করে। এক মুসলিমের রক্ত, সম্পদ ও মান-সম্মান অন্য মুসলিমের জন্য হারাম (সহীহ মুসলিম- ৬৪৩৫)। তাছাড়াও কোরআনুল কারীমে বলা হয়েছে, দুর্ভোগ এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য যে সামনে নিন্দাকারী ও পেছনে গীবতকারী (সূরা হুমাযাহ, আয়াত-১)। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কোরআনুল মাজীদের সূরা হুজুরাত-এর পরপর ৪টি আয়াতে হাক্কুল ই’বাদ বা বান্দার হক এবং মানবের পরস্পরের সম্পর্ক সম্পর্কে উল্লেখ করছেন। মু’মিনরা তো পরস্পর ভাই-ভাই। অতএব, তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করবে এবং আল্লাহকে ভয় করবে-যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও (সূরা হুজরাত,আয়াত-১০)। মু’মিনগণ, কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাদের মন্দ নামে ডাকা গোনাহ। যারা এহেন কাজ থেকে তওবা না করে তারাই জালেম (সূরা হুজরাত,আয়াত-১১)।
মু’মিনগণ, তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ। এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু (সূরা হুজরাত,আয়াত-১২)। হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি হও। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন ( সূরা হুজরাত,আয়াত-১৩)। এছাড়াও অন্য সূরায় বলা আছে, আর তুমি তার অনুসরণ কর না, যে বেশি বেশি শপথ করে, লাঞ্ছিত, যে পশ্চাতে নিন্দা করে, একের কথা অপরের কাছে লাগিয়ে বেড়ায়, যে ভালো কাজে বাধা দেয়, সীমালংঘনকারী, পাপিষ্ঠ, কঠোর স্বভাবের তদুপরি কুখ্যাত (সূরা আল কালাম, আয়াত ১০-১৩)

রাসূলে আলামীন বলেন, কোনো ব্যক্তি অন্য মু’মিনের উপর অভিশাপ দিলে, তা তাকে হত্যা করার শামিল হবে আর কোনো মুমিনকে কাফির বলে অপবাদ দিলে, তাও তাকে হত্যা করার শামিল হবে (সহীহ বুখারী- ৬০৪৭)।
উক্ত বিষয়ে কোরআনুল কারীমে বিশেষ সর্তক, আর মিথ্যা কথা পরিহার কর (সূরা আল হুজ্জাজ, আয়াত-৩৮)। উল্লেখিত বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাঃ আরো বলেছেন, আমি কি তোমাদের সবচেয়ে বড় গোনাহ সম্পর্কে অবহিত করব না? তিনি বললেন, মিথ্যা কথা বলা কিংবা মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া (সহীহ মুসলিম- ১৬২)।
মুসলিম মুসলিমের ভাই। সে তার উপর জুলুম করবে না এবং তাকে জালিমের হাতে সোপর্দ করবে না। যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের অভাব পূরণ করবে আল্লাহ তার অভাব পূরণ করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের বিপদ দূর করবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’য়ালাতার বিপদ দূর করবে। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষ গোপন করবে, কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তার দোষ গোপন করবে (সহীহ বুখারী: ২৪৪২, ৬৯৫১)। রাসূল (সা.) বলেন: একজন মানুষের মন্দ হওয়ার জন্য এতটুকু যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে হেয় মনে করে (সহীহ মুসলিম: ৬৪৩৫)। মনে রাখা আবশ্যক যে, যার হক নষ্ট করা হয়েছে তার কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইতে হবে। সে বেঁচে না থাকলে তার উপযুক্ত উত্তরাধিকার এর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। তার উপযুক্ত উত্তরাধিকারকেও পাওয়া না গেলে বিষয়টি যদি আর্থিক হয় সে ক্ষেত্রে সমপরিমাণ অর্থ যে কোনো ভালো কাজে দিয়ে আল্লাহর কাছে হৃদয় থেকে ক্ষমা চাইতে হবে। আর যদি ব্যক্তিগত আক্রমণ হয় যেমন: অহংকার, হিংসা, ঘৃণা করা, গালি দেয়া, হেয় করা ইত্যাদি হয় তাহলে সাদকায়ে জারিয়ায় যে কোনো খাতে তার জন্য ব্যয় করতে করে আল্লাহর কাছে তার দিয়ে বরাত দিয়ে ক্ষমা চাইতে হবে। কোনো ভাবেই যদি ক্ষমা চাওয়া না হয় তাহলে তাকে অবশ্যই কিয়ামতের দিন হাশরের ময়দানে শেষ বিচারক্ষণে তার দায়ে বিচারের মুখোমুখী হতেই হবে এবং বান্দার হক তাকে নিজের নেকী দেয়ার বিনিময়ে কিংবা ঐ বান্দার গুনাহের বোঝা বহন করার বিনিময়ে পরিশোধ করতে হবে।

অতএব অন্যের অধিকার খর্ব হতে পারে এরূপ ক্ষুদ্র কাজ হতেও বিরত থাকা মু’মিন বান্দার অবশ্যই কর্তব্য। কোনো ছোট খাট জুলুমকেও ছোট মনে না করা মু’মিম ব্যক্তির স্বভাব হওয়া উচিৎ। এছাড়াও প্রতিটি মু’মিনকে আল্লাহর হকের পাশাপাশি বান্দার হকের প্রতি গুরুত্বের সহিত অধিক সচেনত হওয়া প্রয়োজন। তাই কোরআন সুন্নাহ বিশ্বাসী প্রত্যেকের উচিত আল্লাহ এবং রাসূলে কারীম সাঃ এর সন্তুষ্টি ও আখেরাতে সকল দায় থেকে মুক্তির স্বার্থে মানুষের পাওনা পরিশোধে সাধ্যমতো চেষ্টা করা। আয় আল্লাহ সোবহানাহু আপনি আমাদেরকে আপনার মাহবুবের সদকায় আপনার এবং বান্দাদের হক আদয়ে সর্বাত্মক সচেতনতা অবলম্বন করার তৌফিক দান করুন-আমীন।

লেখকঃ সভাপতি,
বাংলাদেশ সোস্যাল অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম