ঢাকা | ডিসেম্বর ২১, ২০২৪ - ১২:০৬ অপরাহ্ন

শিরোনাম

রাজনৈতিক সংকট উত্তোরণে সংলাপ ও সমঝোতা জরুরি

  • আপডেট: Sunday, May 14, 2023 - 9:41 am
  • পঠিত হয়েছে: 302 বার

মনিরুল ইসলাম রোহান
দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক সংকট বিদ্যমান। সরকার ও বিরোধী জোটের মধ্যে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে যে টানাপড়েন চলছিল তা রয়েই গেছে। বাসে আগুন, পেট্রল বোমা নেই ঠিকই তবে অস্বস্তির নতুন নতুন মাত্রা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। দেশজুড়ে বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিং, হঠাৎ রাতের আধারে জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিসহ নানামুখী সংকটে দেশের মানুষ ভেতরে ভেতরে দুমড়ে মুষড়ে পড়ছে। কাটছাট করে সংসার চালাতে গিয়েও নি¤œ আয়ের মানুষের ত্রাহি অবস্থা। এসব ইস্যুকে ঘিরে গুমোট বাধা রাজনীতির মাঠ প্রায়ই সরব হয়ে উঠে। রাজনৈতিক ময়দানে সরকারী দল ও বিরোধী দলের কর্মসূচি ঘিরে কখনো কখনো উত্তাপও দেখা যায়।
এদিকে জাতীয় নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে শাসক দল আওযামী লীগ ও মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির পাল্টাপাল্টি রাজনীতির মাঠ দখলের হুমকি ধামকি দেশে সংকটময় পরিস্থিতি আরো ঘণিভূত হচ্ছে। দেশের বিবদমান বড় দু’দলের মধ্যে সংলাপ, সমঝোতা না হওয়া পর্যন্ত সেই সংকট থেকে উত্তোরণের কোনো সম্ভাবনাও দেখছেন না রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বিএনপি ও তার মিত্রদের দাবিটি দীর্ঘদিনের। এরই মধ্যে গত দুইটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। যার প্রথমটি অর্থ্যাৎ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ও তার মিত্ররা অংশগ্রহণ করেনি। আবার ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ও তার মিত্ররা অংশগ্রহণ করেও শেষমেষ নির্বাচনের দিন বর্জন করে। ওই দাবিকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে জোরালোভাবে মাঠে নেমেছে বিএনপি। এছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্যের উর্ধ্বগতির প্রতিবাদে অন্যান্য ছোটবড় প্রায় সব রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিদিনই রাজপথে মিছিল সমাবেশ করছে। সম্প্রতি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামের উর্ধ্বগতির প্রতিবাদে চলা সমাবেশে হামলা চালিয়ে ছাত্রদলের দুই নেতাকে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। এরপরই রাজধানীতে বড় ধরণের সমাবেশ করে মাঠ দখলের হুমকি দিয়েছে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আবার রাজনীতির মাঠ দখলে রাখার পাল্টা হুমকি দিয়ে রাজধানীতে বড় সমাবেশ করে শক্তি দেখিয়েছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ। শাসক দল ও সরকারবিরোধী জোটের পাল্টাপাল্টি হুমকিতে রাজনীতিতে আবারো সংঘাতময় পরিস্থিতির আশংকা দেখা দিয়েছে। এরমধ্যে তেল, গ্যাসসহ জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে সবখানেই। যারফলে রাজনৈতিক এই অস্থিরতায় চিড়েচ্যাপটা হচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষেরা।
এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের সাথে আলাপচারিতায় তিনি বলেন, যেসব ইস্যু নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল মাঠে নামছে তা যৌক্তিক। তবে রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়ালে, সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতিই ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তিনি বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থার মাধ্যমে ক্ষমতার রদবদল না হলে দেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়বে, যা মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। আমাদের যে অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও উন্নয়ন সাধিত হয়েছে তা পিছিয়ে যাবে। ড. মজুমদার মনে করেন, এসব পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে হলে অবশ্যই রাজনৈতিক দলগুলো আলাপ আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধানে পৌছাতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলো সমঝোতাই পৌছাতে না পারলে যে সংকট তৈরি হয়েছে তা থেকেই যাবে। যা দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না। আলাপ-আলোচনা বা সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতার কোনো বিকল্প নেই।
এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট রাজনীতি বিশ্লেষক ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনির সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি, জ্বালানি তেলের দাম হঠাৎ করে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিং এসব কিছু সাধারণ জনগণের সেন্টিমেন্টের সাথে জড়িত। যা সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রার ওপর প্রভাব পড়ছে। তিনি আরো বলেন, একটি গণতান্ত্রিক দেশ এভাবে চলে না। রাজনৈতিক অস্থিরতার যে কারণ তার সমাধান সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করছে।
এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট রাজনীতি বিশ্লেষক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. শামছুল আলম সেলিম মনে করেন, গণতন্ত্রের মুল কথাই হচ্ছে সকলের অংশগ্রহণ, সব মতের প্রাধান্য। দেশের একটি বৃহত্তর অংশকে পাশ কাটিয়ে দেশ চালানো সম্ভব নয়। তাই সমঝোতার মাধ্যমে সকল দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনের ব্যবস্থা করলে কেবল এই পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণ সম্ভব হবে।
দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে চলা এই রাজনৈতিক সংকটের অবসান হওয়া জরুরি। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বিবদমান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে অবিলম্বে সংলাপ সমঝোতা হওয়া প্রয়োজন। দেশের উন্নয়নের স্বার্থে সংকটের অবসানের কথা জোরালোভাবে ভাবা দরকার। উভয় রাজনৈতিক দলকে বৃহত্তর স্বার্থে কিছুটা ছাড় দিয়ে হলেও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কিভাবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠান করা যায় তা নিয়ে চিন্তা করতে হবে এবং সমাধানে পৌছাতে হবে। তাহলে দেশের যে উন্নয়ন ও অগ্রগতি শুরু হয়েছে সেটা অব্যাহত রাখতে বড় ধরণের সহায়ক হিসেবে কাজ করবে।
লেখক: কলামিস্ট, গবেষক ও সমাজ বিশ্লেষক।