মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন, প্রধানমন্ত্রীর ‘পারফেক্ট চয়েজ’
মো. খসরু চৌধুরী সিআইপি
রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। তিনি পেশায় একজন আইনজীবী। আওয়ামী লীগের বর্তমানে উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য। তিনি এর আগে জেলা সিনিয়র দায়রা জজ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ১৯৭১ সালে পাবনা জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তিনি দীর্ঘ তিন বছর কারাগারে বন্দী ছিলেন। ১৯৮২ সালে তিনি বিসিএস বিচার বিভাগে যোগদান করেন। ১৯৯৫ সালে জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশেনের মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন মন্ত্রণালয় থেকে কো-অর্ডিনেটর হিসেবে নিয়োজিত থেকে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০০১ সালে সাধারণ নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতাকর্মীদের সংগঠিত হত্যা, লুণ্ঠন এবং মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড অনুসন্ধানে দ্রুত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি ছাত্র জীবনে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং ১৯৭৩ সালে পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৫ সালে সংগঠিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সহপরিবারে নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর কারাবরণ করেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের সকল শাখার আনুষ্ঠানিক প্রধান এবং বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক (কমান্ডার ইন চিফ)। রাষ্ট্রপতির দণ্ডিত ব্যক্তির দণ্ডাদেশ স্থগিত, হ্রাস বা দণ্ডিতকে ক্ষমা করার অধিকার রয়েছে। প্রত্যেক সাধারণ নির্বাচনের পর সংসদের প্রথম অধিবেশনের উদ্বোধনী ভাষণটি দেন রাষ্ট্রপতি। বছরের প্রথম সংসদীয় অধিবেশনের প্রথম উদ্বোধনী ভাষণটিও তিনিই দেন। তার এই ভাষণটি আসলে নতুন সরকারি নীতির রূপরেখা মাত্র। জাতীয় সংসদে পাস হওয়া প্রতিটি বিল রাষ্ট্রপতির সম্মতিক্রমে আইনে পরিণত হয়।
সাংবিধানিক কার্যাবলি
১. প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের নিয়োগ [সংবিধানের ৫৬(২) অনুচ্ছেদ];
২. প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগ সমূহের সর্বাধিনায়ক–এর দায়িত্ব পালন [সংবিধানের ৬১নং অনুচ্ছেদ];
৩. বাংলাদেশের অ্যার্টনি জেনারেল পদে নিয়োগদান [সংবিধানের ৬৪(১)নং অনুচ্ছেদ];
৪. সরকারী বিজ্ঞপ্তি-দ্বারা সংসদ আহবান, স্থগিত ও ভঙ্গ [সংবিধানের ৭২(১)নং অনুচ্ছেদ];
৫. সংসদ ভাঙ্গিয়া যাওয়া অবস্থায় অধ্যাদেশ প্রণয়ণ ও জারী [সংবিধানের ৯৩ অনুচ্ছেদ];
৬. প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন এবং প্রধান বিচারপতির সহিত পরামর্শ করিয়া রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারককে নিয়োগদান [সংবিধানের ৯৫(১)নং অনুচ্ছেদ];
৭. প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগদান [সংবিধানের ১১৮(১)নং অনুচ্ছেদ];
৮. বাংলাদেশের মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক নিয়োগদান [সংবিধানের ১২৭(১)নং অনুচ্ছেদ];
৯. সরকারী কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান ও অন্যান্য সদস্যগণ রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন [সংবিধানের ১৩৮(১)নং অনুচ্ছেদ];
১০. প্রধানমন্ত্রী, স্পীকার, ডেপুটি স্পীকার, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য এবং প্রধান বিচারপতিকে শপথ পাঠ করানো [সংবিধানের ১৪৮ অনুচ্ছেদের ৩য় তফসিল];
শিক্ষা সংক্রান্ত
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের চ্যান্সেলর। চ্যান্সেলর হিসেবে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর ও ট্রেজারার নিয়োগ দান করেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমার্বতন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি প্রদত্ত ভাষণ শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ দলিল।
মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বিচারক হিসেবে সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি আজীবন জনগণের প্রতি ন্যায়বিচার করেছেন। বিচারাঙ্গনসহ দুদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে তিনি সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ কখনও কেউ করতে পারেনি। এমন একজন সৎ ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। আমি বিশ্বাস করি দেশের মানুষও আনন্দের সঙ্গে এটা গ্রহণ করেছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জনগণের কাছে এখন মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি। রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে তিনি জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করবেন সেটা আমরা বিশ্বাস করি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লড়াই-সংগ্রামের পথে বারবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন। গণতন্ত্রের সংগ্রামে সফল হয়েছেন। বিশাল কর্মযজ্ঞ নিয়ে উন্নয়নের মহাসড়ক ধরে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন দেশকে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ন্ত্রণে রেখে প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে দেশের অর্থনীতিকে পশ্চিমাদের কাছেও বিস্ময়কর জায়গায় নিয়ে গেছেন।
আকাশছোঁয়া চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা আর অগ্রগতির নতুন নতুন মাইলফলক সৃষ্টি করেছেন। সরকারপ্রধান থেকে রাষ্ট্রনায়ক, রাষ্ট্রনায়ক থেকে বিশ্ব নেতা হিসেবে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। ইতিহাসের মহানায়ক বাবা বঙ্গবন্ধুর মতোই সামনে থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, মানবিকতা, বিচক্ষণতা আর নেতৃত্বগুণে অর্থনীতির প্রতিটি সূচকেই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধু এবং প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে একাগ্রচিত্তে কাজ করছেন। দুর্নীতিমুক্ত থেকে নিজেদের ক্লিন ইমেজের বহি:প্রকাশ ঘটিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি পদে তিনি এমন একজন ব্যক্তিকে পছন্দ করেছেন যিনি সর্বজন শ্রদ্ধেয়। এক কথায় বলা চলে, প্রধানমন্ত্রীর ‘পারফেক্ট চয়েজ’।
লেখক: পরিচালক, বিজিএমইএ; শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ; চেয়ারম্যান, নিপা গ্রুপ ও কেসি ফাউন্ডেশন।