ঢাকা | নভেম্বর ২১, ২০২৪ - ৪:২২ অপরাহ্ন

শিরোনাম

খান শওকতের লেখা ১২টি নাটক নিয়ে ২য় বঙ্গবন্ধু নাট্যোৎসব হবে ফেব্রুয়ারিতে খুলনায়

  • আপডেট: Tuesday, January 17, 2023 - 1:22 pm
  • পঠিত হয়েছে: 202 বার

টাচ নিউজ ডেস্ক:
নিউইয়র্ক প্রবাসী নাট্যকার খান শওকত রচিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জীবনভিত্তিক নাটকসমুহ নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশে শুরু হওয়া ২য় নাট্যোৎসবটি অনুষ্ঠিত হবে এবার খুলনায়।

গত ২১/১২/২০২২ তারিখে ১ম উৎসবটি অনুষ্ঠিত হয়েছিলো কলকাতার যোগেশ মাইম একাডেমিতে। উক্ত উৎসবে দুই বাংলার ৪টি নাট্য সংগঠন অংশগ্রহন করেছিলো। এবার খুলনায় শওকতের নিজ গ্রামে অনুষ্ঠিতব্য ২য় নাট্যোৎসবে দুই বাংলার ৯টি সংগঠন মোট ১২ টি নাটক মন্চায়নের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে।

স্থানীয় বাংলাদেশ আমেরিকা কালচারাল সোসাইটির উদ্যোগে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জীবনভিত্তিক নাটক নিয়ে খুলনার শাহপুরে ২য় বঙ্গবন্ধু নাট্য উৎসব অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৪/২/২০২৩ (শুক্রবার) এবং ২৫/২/২০২৩ (শনিবার)। খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার শাহপুর বাজারে গাজী আব্দুল হাদী চত্বরে অনুষ্ঠিত হবে এ উৎসব। উক্ত উৎসবে শাহপুরের সন্তান আমেরিকা প্রবাসী নাট্যকার খান শওকত রচিত ১২ টি নাটক পরিবেশিত হবে।

ব্যাপ্তি কালচারাল এসোসিয়েশন পরিবেশন করবে নাটকঃ (১) খুনী ডালিম বলছি, এবং (২) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। সোনারপুর ম্যানগ্রেভ নাট্যদল পরিবেশন করবে (৩) স্বাধীনতার ঘোষক এবং (৪) ৭ই মার্চের ভাসন। সিলেটের দেশ থিয়েটার পরিবেশন করবে (৫) আমার বাড়ি টুঙ্গীপাড়া। ঢাকার নাট্যভূমি পরিবেশন করবে (৬) শহীদ রাসেল। ঢাকার নাটঘর রেপার্টরি পরিবেশন করবে (৭) মহা-চক্রান্তে বাকশাল। পাবনা থিয়েটার-৭৭. পরিবেশন করবে (৮) আমার বাড়ি টুঙ্গীপাড়া। ময়মনসিংহের বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগবানী থিয়েটার পরিবেশন করবে (৯) মুজিবনগর থেকে মুক্তিযুদ্ধ। বরিশালের চন্দ্রকথা সাংস্কৃতিক সংগঠন পরিবেশন করবে (১০) খুনী মোশতাক, এবং (১১) কলংকিত-৭৫, আর গোবরাপুর সংবিত্তি পরিবেশন করবে আমার নাম শেখ মুজিব নাটক।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর অদ্যাবধি একই ছাদের তলে “বঙ্গবন্ধুর জীবন ভিত্তিক নাটক” নিয়ে দুই দেশের নাট্যকর্মীদের অংশগ্রহনে ভারত-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু নাট্য উৎসব অনুষ্ঠিত হয় নাই। গতমাসে সেই ঐতিহাসিক আয়োজনটি সফল হলো কলকাতায়। আর এই উৎসবে যতগুলো নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিলো তার সবকটি নাটকের লেখক বাংলাদেশের সন্তান নিউইয়র্ক প্রবাসী নাট্যকার খান শওকত। তার লেখা নিয়েই এ নতুন ইতিহাসের সূচনা হলো।

“ভারত বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু নাট্য উৎসব” এটা সময়ের দাবী। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রথম উল্লেখযোগ্য নাটক লেখেন লন্ডন প্রবাসী সর্বজন শ্রদ্ধেয় নাট্যকার ও কিংবদন্তী সাংবাদিক মরহুম আব্দুল গাফফার চৌধুরী। তার নাটকের নাম পলাশী থেকে ধানমন্ডি। আর ভারত বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু নাট্য উৎসব হলো নিউইয়র্ক প্রবাসী নাট্যকারের লেখা দিয়ে। দুটো বিষয়ই প্রবাসীদের অর্জন।

একথা সত্য যে, নবাব সিরাজউদ্দৌলাহকে নিয়ে নাটক রচিত হয়েছিলো বলে দুই বাংলার আপাময় জনতার কাছে পৌনে তিনশত বছর পূর্বে ঘটে যাওয়া নবাব সিরাজের পুরো ইতিহাস মুখস্ত হয়ে গেছে। একইভাবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নাটকের মাধ্যমে এ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা দরকার। তাহলে নাটকের সংলাপের মাধ্যমে সত্য ইতিহাস স্মরন রাখা তাদের জন্য সহজ হবে। এমন স্বপ্ন নিয়েই নাট্যকার খান শওকত এ নাটকগুলো লিখেছেন। তার প্রকাশিত ৩৫টা নাটক নিয়ে রচিত “বঙ্গবন্ধু নাট্যসমগ্র” থেকে নাটকগুলো বাছাই করেছেন বিভিন্ন নাট্য সংগঠন।

উক্ত নাট্যোৎসব সফলতার জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন নাট্যকার খান শওকত এবং বাংলাদেশ আমেরিকা কালচারাল সোসাইটির সভাপতি মেসবাহুল আলম টুটুল।

গত ২১/১২/২০২২ তারিখে কলকাতার নাট্য উৎসবের প্রধান অতিথী গুনী নাট্যজন গোবিন্দ প্রসাদ বন্দোপাধ্যায় লেখেন, গত ২১/১২/২০২২ তারিখে কলকাতার যোগেশ মাইম একাডেমিতে শুভ সন্ধ্যায় ভারত-বালাদেশ বঙ্গবন্ধু নাট্য উৎসব পালিত হল সাড়ম্বরে। একাধারে বাংলাদেশের বিজয় উৎসবের মাস ডিসেম্বর, অন্যাধারে বাংলা নাটকের সার্ধশতবর্ষ পূর্তি উৎসবের সন্ধিক্ষণে ডিসেম্বরের পৌষালি শীতে দুই দেশের বাঙালি মানস নতুন আলোকে যেন জেগে উঠলো। সমবেতভাবে দুই দেশের জাতীয় সংগীত গাওয়া, প্রদীপ প্রজ্জ্বলন এবং নাটকের থিম সঙ্গীত পরিবেশনের পর ভারতের তিনটি এবং বাংলাদেশের একটি নাট্যদল সুন্দর নাটক পরিবেশন করেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নাটকগুলি লিখেছেন নিউইয়র্ক প্রবাসী নাট্যকার খান শওকত মহাশয়। নাটকের ঘটনাবিন্যাস, চরিত্রায়ন, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও উত্তেজনা নাটকীয় রসে জারিত হয়ে মঞ্চ আলো আবহ দৃশ্যসজ্জা অঙ্গরচনার সহায়তায় উপভোগের হয়ে উঠেছিলো। যা হলভর্তি দর্শককে আলোড়িত করে। নাট্যকার বিশ্বস্ততার সঙ্গে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক ঘটনাকে এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও আত্মত্যাগকে তার নাট্যশৈলীর মাধ্যমে যেমন প্রতিষ্ঠা করেছেন, অনুরূপভাবে পরিচালকরাও মুন্সিয়ানার সাথে সেগুলো মঞ্চস্থ করতে সক্ষম হয়েছেন। এসব নাট্য প্রযোজনাগুলি সৌখিন স্বপ্নাচার নয়। এগুলো আদর্শ লালিত। বিশেষ করে হাওড়ার ব্যাপ্তি কালচারাল অ্যসোসিয়েশনের “মুজিব বাইয়া যাওরে” নাটকে মুজিব চরিত্রাভিনেতা সমিত চৌধুরীর দূর্দান্ত অভিনয়, রাজনৈতিক সহকর্মীর প্রতি অশেষ বিশ্বাস ও ভালোবাসা, সমাজ ও দলের প্রতি দায়বদ্ধতা, সর্বোপরি মানবতার পূজারী বঙ্গবন্ধুর আত্মত্যাগ ও দেশপ্রেমকে অনুভবী অভিনয়ে মূর্ত করে তুলেছেন। দলবদ্ধ অভিনয় সুন্দর হয়েছে। হাজারো কর্মব্যস্ততার মাঝেও বঙ্গবন্ধু নাট্য উৎসবকে কেন্দ্র করে ভারত বালাদেশ সংস্কৃতি মৈত্রীর যে স্বপ্ন মাননীয় নাট্যকার খান শওকত সুদূর নিউয়র্কে বসে দেখেছিলেন তার অক্লান্ত প্রয়াসে বাস্তব করে তুলেছেন দুই বাংলার নাটকের কলাকুশলী উদ্যোক্তারা থেকে শুরু করে নাট্যামোদী ও সংস্কৃতি প্রিয় পুরো হলভর্তি দর্শক। এ এক অপুর্ব মেলবন্ধন। খান শওকতের সুপরামর্শে বাংলাদেশ নাট্যদলের এজহারুল হক মিজান, কলকাতার দলমাদল নাট্যদলের সঞ্জয় সাহা এবং গোবরাপুর সংবিত্তি নাট্যদলের কিশোর দত্ত, হাওড়ার ব্যাপ্তি কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনের অরুনাভো দাসগুপ্ত সহ অন্যান্য সহযোদ্ধারা অসহনীয় ধৈর্য আর অনমনীয় জেদ নিয়ে এই মহতী কান্ডকে সুচারু ব্যবস্থাপনায় বাস্তব করে তুলেছেন। এই অবসরে তাদেরকে কুর্নিশ জানাই। গুনী নাট্যকার, নিবেদিতপ্রান বঙ্গবন্ধু গবেষক, নিউইয়র্ক পুলিশে কর্মরত সদস্য এবং সুপরিচিত সমাজকর্মী খান শওকত মহোদয় এই আনন্দযজ্ঞে সশরীরে উপস্থিত হতে পারেননি। কিন্তু তার সহৃদয় শুভেচ্ছাবার্তার মধ্যদিয়ে তিনি সারাক্ষণ আমাদের মধ্যে সজাগ ছিলেন। আমরা চাই এই শুভক্ষণে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ুক বঙ্গবন্ধু নাট্য উৎসব, দুদেশের সমৃদ্ধ বাংলা নাট্যসাহিত্য এবং থিয়েটার। সীমারেখাটা মুছে ফেলতে আমরা তাকিয়ে থাকলাম ২০২৩ সালের মহান ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিতব্য বঙ্গবন্ধু নাট্য উৎসবের দিকে। এই মুহুর্তে বিশ্ব মানবতার প্রতীক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বলবো “পেয়ে যারে পাইনে, তারি পরশ পাই রে বারে বারে..”।

কলকাতার নাট্য উৎসবের মূল উদ্যোক্তা যাদবপুর দলমাদলের সভাপতি সন্জয় সাহা বলেন, নাট্যকার খান শওকতের লেখা পড়লে এটাকে নাটক মনে হয়না, মনে হয় জীবন্ত ঘটনা দেখছি। কারন তার লেখা অত্যন্ত বাস্তবসম্মত, নিরপেক্ষ, হৃদয়গ্রাহী, মর্মস্পর্শী এবং সত্য ইতিহাস। প্রতিটা সংলাপের পরতে পরতে তিনি তথ্য তুলে ধরেছেন। আলোচ্য বিষয়ে প্রচুর গবেষনা না করলে এ ধরনের সংলাপ লেখা যায়না। এ পর্যন্ত তার লেখনী নিয়ে আমাদের উদ্যোগে দুই বাংলায় অনুষ্ঠিত হয়েছে অনেকগুলো নাট্য সেমিনার ও পাঠচক্র। আমার বিশ্বাস তার লেখা নাটকগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার ইতিহাস এবং বঙ্গবন্ধুর বর্নাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের ঘটনাসমুহ নাটকের সংলাপের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়বে সবার মাঝে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।

একথা অনেকেই জানেন যে, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কোন নাটক মন্চায়ন বা নির্মাণের জন্য একসময় বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের অনুমতি ছাড়া বাস্তবায়ন করা যেতো না। এজন্য বঙ্গবন্ধুর জীবনভিত্তিক নাটকের চর্চা বন্ধ ছিলো দীর্ঘকাল। এরপরও যারা নাটক করার চেষ্টা করেছেন তারা বঙ্গবন্ধু বা তার পরিবারের সদস্যদের চরীত্র অনুপস্থিত রেখেই নাটক লিখতেন। একারনেই অমর একুশের গানের লেখক আব্দুল গাফফার চৌধুরীর লেখা এবং বিখ্যাত চিত্র-পরিচালক হাসান ইমামের নির্দেশিত পলাশী থেকে ধানমন্ডি নাটকটির বাংলাদেশে মন্চায়নের সুযোগ হয়নি। আইনটি জানার পর খান শওকত ২০১৬ সাল থেকে এটি বাতিলের জন্য নানাভাবে চেষ্টা তদ্বির শুরু করেন। তার প্রতিটা নাটকই মেমোরিয়াল ট্রাষ্টে জমা দেন এবং কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করে বলেন, বঙ্গবন্ধুর চরীত্র অনুপস্থিত রেখে বঙ্গবন্ধুর জীবনভিত্তিক নাটক তুলে ধরা প্রায় অসম্ভব। দর্শকরা নবাব সিরাজের মতো বঙ্গবন্ধু চরীত্রের সংলাপের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে জানতে ও বুঝতে চায়। পরবর্তীতে দেশের শিল্পী সমাজের ব্যাপক অনুরোধের প্রেক্ষিতে এই বিধানটি তুলে নেয় বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাষ্ট এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এজন্য ২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল থেকে বঙ্গবন্ধু বিষয়ক নাটক মন্চায়ন বা নির্মাণের জন্য মেমোরিয়াল ট্রাস্টের আর কোন অনুমতির প্রয়োজন হয় না। তাই ২০১৯-এর পর থেকে বঙ্গবন্ধুর জীবনভিত্তিক নাটকের চর্চা ছড়িয়ে পড়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে শাহপুর বঙ্গবন্ধু নাট্য উৎসব। এ উৎসবে সকলকে আমন্ত্রন জানিয়েছেন মুল আয়োজক বিশিষ্ট সমাজকর্মী মেসবাহুল আলম টুটুল। তিনি আরও জানিয়েছেন, এই ফেব্রুয়ারি মাসে অত্র এলাকার কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা মুজিব আদর্শের কোন সংগঠন যদি এ প্রবাসী লেখককে নিয়ে কোন মোটিভেশান মিটিং, সেমিনার বা আলোচনা সভা করতে আগ্রহী হন, তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।