পশ্চিমবঙ্গে অভিনব কায়দায় ছিনতাইয়ের শিকার বাংলাদেশি বৃদ্ধা
অনলাইন ডেক্স : ট্রেনের মধ্যে পরিচয়। প্রথমে ‘মা’ বলে সম্বোধন। এরপর নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে সেই মায়ের কাছ থেকেই নগদ অর্থসহ সমস্ত কিছু লুটপাট করেছে ছিনতাইচক্র। সর্বস্ব খোয়া যাওয়াতে এখন দেশে ফিরবেন কিভাবে তাই নিয়ে দুশ্চিন্তায় এক বাংলাদেশি নারী। ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়ায় জেলার শান্তিপুরে।
বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনা থানা এলাকার মদনা গ্রামের বাসিন্দা ৬৫ বছর বয়সী হাওয়াতুন খাতুন নিজের চিকিৎসার জন্য গত ২৩ ডিসেম্বর শুক্রবার দুপুরের দিকে সীমান্ত অতিক্রম করে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার রানাঘাট স্টেশনে নামেন। এরপর সেখান থেকে ট্রেন বদল করে নদীয়া জেলার চাপড়া থানার অন্তর্গত মহারাজপুরে নামক এক জায়গায় তাঁর আত্মীয় বাড়ি যাবেন বলে রানাঘাট রেল স্টেশনে নেমে কৃষ্ণনগর লোকাল ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। হঠাৎই রানাঘাট প্লাটফর্মে অবস্থানরত ওই বাংলাদেশি বৃদ্ধাকে ‘মা’ বলে সম্বোধন করেন অপরিচিত দুই যুবক। তাকে জিজ্ঞাসা করে জানতে চান ‘মা’ আপনি কোথায় যাবেন? ওই বৃদ্ধা যখন তার আত্মীয়র কথা জানান তখনই পাল্টা ওই যুবক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়ে ‘চলুন আমরা আপনাকে আপনার আত্মীয়র বাড়ি পৌঁছে দেব।’ এই বলে রানাঘাট স্টেশন থেকে ওই নারীকে ট্রেনে তোলে ওই দুই যুবক। এরপর নারীর কাছ থেকে একটি ব্যাগ নিয়ে এক যুবক অন্য বগিতে চলে যায়, অন্য আরেক যুবক মহিলার কাছেই বসে থাকে।
রানাঘাট থেকে ট্রেন ছেড়ে কালীনারায়নপুর পৌছাতেই দুই যুবক ট্রেন থেকে নেমে পড়ে। নারীর সন্দেহ হওয়াতে তৎক্ষণাৎ ওই নারীও ট্রেন থেকে নেমে পড়েন। এরপর পাল্টা ওই দুই যুবককে জিজ্ঞাসা করে ‘আমার ব্যাগ কোথায়?’।
যদিও যুবকরা তাকে আশ্বস্ত করেন ‘ব্যাগ আমাদের কাছেই আছে, আপনার চিন্তার কিছু নেই।’ কিন্তু এরই মধ্যে রাত গড়াতেই ওই নারীকে ওই দুই যুবক নিয়ে আসে শান্তিপুর থানার অন্তর্গত সূত্রাগর শরীফ পাড়ার বাসিন্দা মহিদুল শরীফের বাড়িতে। নারীকে আশ্বস্ত করা হয় রাত কাটলেই পরদিন সকালবেলায় কৃষ্ণনগরের তার আত্মীয়র বাড়িতে পৌঁছে দেবে ওই দুই যুবক।
সেই মতো শান্তিপুরেই রাত কাটান ওই বাংলাদেশী নারী। তাকে যত্ন সহকারে রাতের খাবারের কথা বলে মহিদুল শরীফ নামে ওই যুবক। এরপর সকাল হতেই শনিবার ওই নারী ফের চাপড়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায়। কিন্তু আত্মীয়র বাড়িতে গিয়ে দেখে তার যে ব্যাগে ভারতীয় রুপি, বাংলাদেশের কিছু দামি শাড়ি, পাঞ্জাবি রাখা ছিল, সেগুলি কিছুই নেই।
চাপড়ার আত্মীয়র বাড়ি থেকেই মইদুল শরীফ নামে ওই যুবককে ফোন করলে ওই যুবক সম্পূর্ণ অস্বীকার করে। বাংলাদেশি ওই বৃদ্ধার দাবি, তার ব্যাগে নগদ ২০ হাজার রুপি ও বাংলাদেশের ৬টি দামি শাড়ি, ১ টি পাঞ্জাবি ছিল। কিন্তু নগদ অর্থ ও দামী শাড়ি হাতিয়ে নিয়ে তার বদলে ব্যাগের মধ্যে কিছু পুরনো জামা কাপড় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এরপরেই মাথায় হাত পরে সব কিছু খোয়া যাওয়া হাওয়া খাতুনের।
অবশেষে ২৫ ডিসেম্বর রবিবার নিরুপায় হয়ে পুনরায় ছুটে আসে শান্তিপুরে মাইদুল শরীফের বাড়িতে। সেখানে খোয়া যাওয়া চারটি শাড়ি ফিরিয়ে দিলেও নগদ অর্থ বা বাকি জিনিস কিছুই ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি।
এরপরই সেখানকার স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দাদের সহায়তায় রবিবার শান্তিপুর থানার দ্বারস্থ হয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন হাওয়া খাতুন। অভিযোগ পত্রেও মইদুল শরীফের নাম উল্লেখ করে ছিনতাই হওয়া জিনিস অবিলম্বে ফেরত জানানোর আবেদন জানান হাওয়াতুন খাতুন।
তবে থানায় অভিযোগ করেও এখনো স্বস্তিতে নেই ওই বাংলাদেশি নারী। কারণ হারিয়ে যাওয়া অর্থ বা দামি শাড়ি কিছুই এখনো ফেরত পাননি। ফলে এখন দেশে কিভাবে ফিরবেন তাই নিয়ে বড়ই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তিনি।
ইতিমধ্যে সমস্ত ঘটনা জানিয়ে বাংলাদেশে তার পরিবারের সদস্যদের সাথেও কথা বলেছেন ওই নারী। পুলিশও তাদের সাধ্যমত চেষ্টা করছে কিভাবে ওই বাংলাদেশি নারীকে তার হারিয়ে যাওয়া মালামাল ফিরিয়ে দেওয়া যায়।