সত্য সুন্দরের সন্ধানে— নিজেকে তুমি গড়ে তোল এবং সত্য পথে তোমার মনটি রাখ
রাজু আহমেদ মোবারক:
1) “The poorest man is not he who is without a cent, but he who is without a dream.”— Pennsylvania School Journal
দেখ না আমাদের এই পৃথিবী কত সুন্দর! এই সুন্দর পৃথিবীতে আমরা যেন সুন্দর থাকতে পারি তার জন্যও আমাদের সুন্দর কাজ করে যেতে হয়। এই সুন্দর পৃথিবীতে সুন্দর কাজ করার জন্য সত্য সুন্দরের সন্ধানে যেমন থাকতে হয়, অন্য দিকে নিজের জীবন গড়ে তোলার জন্য যা দরকার সেই কাজটিই করে যেতে হয়। নিজেকে যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা না পর্যন্ত আমরা যেমন আমাদের জীবনের স্বাদ ও সৌন্দর্য খুঁজে পাই না, আমরা কখনোই সত্য সুন্দরের পথে আমাদের মনকেও রাখতে পারি না। আমাদের মনকে সত্য ও সুন্দরের পথে রাখার জন্য মনেরও স্হিরতারও প্রয়োজন হয়। আর এই মনস্হিরতা অন্তরে অন্তর্গত করার জন্য একাগ্রচিত্ততা আমাদের অন্তরে প্রয়োজন। এটাও তো সত্য যে, আমাদের অন্তরে যদি ঘূর্ণায়মাণ ঘূর্ণিঝড় হতে থাকে আমাদের পাপাচার ও অপরাধযুক্ত কর্মকান্ডের দ্বারা, সততার চিত্ত দিয়ে কখনোই আমাদের নিজেদের অন্তরের একাগ্রচিত্ততা বৃদ্ধি করা সম্ভব নয়। আমার-আপনার মনের মাঝে যখন পাপ স্পর্শ করে ঝুলে থাকে, সেই ঝুলে থাকা পাপ সরিয়ে সত্য পথে মনটি রাখা শক্ত হয়েও পড়ে।
তোমার-আমার জীবনে যদি যোগ্যতার্জনের অভাব থাকে এবং সেই সাথে যখন অর্থনৈতিক সাচ্ছন্দতার অভাব প্রবলাকারে পাশাপাশি থাকে, তখন সত্য পথে মনের আরোহণ সেটাও তো সম্ভব হয়ে উঠে না। সত্য পথে আমাদের মনটি রাখার জন্য আমরা যেন আমাদের জীবনটি গড়ে তুলি। তুমি যদি তোমার নিজের অন্তরে নিজেরই বাঁশের সুরে বাঁশি বাজাতে চাও, নিজের মাঝে নিজেকে রাখতে চাও, নিজেকে সুন্দরের সৌন্দর্যে সাজাতে চাও তবে সারাকালই নিজেকে যোগ্যতম জায়গাতে রেখে সত্যাশ্রিত মানুষ হয়ে জীবনকে চলমান রাখ। এই প্রতিযোগিতামূলক পৃথিবীতে আমাদের জীবনকে যেমন আমরা গড়ে তুলতে চাই, সত্য পথে মনটি রেখে ভালো মানুষও হতে চাই। তুমি জীবনে যা-ই কিছুই কর মানুষকে ঠকিয়ে সত্য পথে নিরস মনে এগিয়ে যাওয়া
যায় না। তোমার মনের ভেতর যদি তোমার নিজের কর্ম দ্বারা বিষজ্বালা তৈরী কর, সেই বিষের যাতনার জ্বালা তোমাকেই বহন করে যেতে হবে। এই যাতনার জ্বালা জীবনে ভীষণই ভয়ানক। অন্যজনের দ্বারা সৃষ্ট যন্ত্রণা সইয়ে যাওয়া যায়, কিন্তু নিজের তৈরী জ্বালার যন্ত্রণা ভীষণ
যন্ত্রণার। যে আগুন শুধু নিজেরই থাকে যা অন্যকে বন্টনও করা যায় না।
আমাদের প্রত্যেকের জীবনই বিপরীত স্রোতের ধাক্কা সয়ে সয়ে সামনে যেতে হয়। এই বিপরীত স্রোতের সাথে মোকাবিলা করার অভ্যেস তৈরি করতে না পারলে, জীবন বোধের শক্তি অন্তরে গভীর হয় না। তোমার-আমার জীবনে অর্থনৈতিক অভাব যদি আমাদের ভাবনার শক্তিকে ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর এবং দুর্বল থেকে দুর্বলতর করে ফেলে আমাদের সত্য পথে মন চালানো তো কেবলই দুরহ হয়ে পড়ে। সততার চরিত্রই মানুষকে প্রাণে সুন্দর করে। আর আমাদের সুন্দর প্রাণই সাধনালব্ধ পরিশ্রম দ্বারা সত্যিকার সুন্দর মনের মানুষ হওয়ার জন্য পথ তৈরি করে। আমাদের এই সুন্দর মনটিকে সত্য পথে রাখার জন্য জীবিকা ও জীবন এই দুইটিরই পাশাপাশি মিলিত শক্তির বিকাশ প্রয়োজন। তোমার-আমার জীবনে যদি জীবন গড়ার কাজ বন্ধ ও দুর্বল রেখে যদি সত্য পথে মনের বিচরণ করাতে চাই তা যে একেবারেই সম্ভব হবে না। আমাদের শরীরের এই দুইটি পায়ের একটি পা যদি ভাঙ্গা বা আঘাত প্রাপ্ত থাকে, এটা নিশ্চিত যে আমাদেরকে কষ্ট করেই হাঁটতে হবে। জীবনটি গড় এবং সত্য পথে মনটি রাখ জীবনে মঙ্গল ছাড়া তোমার অমঙ্গল হবে না। সত্য সুন্দরের সন্ধানে সত্যাশ্রিত মানুষ হয়ে যখন তুমি তোমার জীবন গড়ার কাজ সারাকাল করে যাবে এবং সত্য পথে তোমার মনটি রাখতে চাইবে, তখন তোমার এই মনটি সত্য পথেই থাকবে। আমাদের জীবন যদি আমাদের নিজেদের প্রচেষ্টায় সামর্থতার শক্তির মধ্যে না থাকে, আমাদের জীবনের চৈতন্য-চেতনা ভেতরে ভেতরে ধাক্কা ধাক্কি করে আমাদেরকে দূরভিসন্ধি মানসিকতায় নিক্ষেপ করে রাখে। নিজের জীবনের উপর নিজের ধাক্কা সামলানোর অভ্যেস ও শক্তি যখন অর্জন করা যায়, তখন অন্যের দেয়া ধাক্কা ও ধিক্কার এই দুইটিই সামলানো যায়। এই বিপরীত স্রোতের ধাক্কা ও ধিক্কা মোকাবেলা করে যাওয়ার জন্য উপযুক্ত মানুষ হওয়া জরুরি। এই সত্য পথে আমাদের মনের আরোহণে আমরা যেন আমাদের জীবন গড়ার প্রতিজ্ঞা সব
কিছুর আগেই করি। এই সমাজ জীবনে অন্যের ধাক্কা ও ধিক্কা সামলানোর জন্য আমাদেরকে অযোগ্য মানুষ থাকলে চলবে না কারণ এতে আমরা ভারসাম্যহীন জীবনে নিপতিত হয়ে পড়ি। আমাদের জীবনকে জীবনের মতই গড়তে হবে। যে জীবন আমাদেরকে সামনে যেতে সাহায্য করবে। তুমি যদি তোমার নিজের ইচ্ছায় কোন ভালো কাজ না কর, তোমাকে মানুষ শতবার বললেও তুমি কোন ভালো কাজেই মনোযোগী হবে না। আমাদের জীবন অনেক মূল্যবান। এই মূল্যবান জীবনে অন্যায়, অপরাধ করে নিজেকে পরিবার ও সমাজে ছোট করিও না। তাতে তোমার আত্মার স্বাধীনতা ও সন্মান নষ্ট হয়ে যাবে। জীবনের জন্য কিছু শিখতে ও জানতে চাও, তুমি অনেক উপরেও উঠাতে চাও তবে সব কিছুই নিজের ইচ্ছা শক্তির চেতনায় কর। যার জীবনে যেটুকু পূর্ণ হয়েছে, সেটুকু তার পূর্ণ দৌড়ের কারণেই সম্ভব হয়েছে। যদি তুমি নিজের দৌড় নিজে দৌড়াতে না পার তোমার নিজের জীবন তৈরীর জন্য তাহলে অন্যদের নির্দেশিত পথে, অন্যরা তোমাকে সারাকালই দৌড়ের মধ্যেই রাখবে। আমরা যেন আমাদের প্রথম জীবনে দৌড়ের মধ্যেই থাকি যেন শেষ জীবনে বিশ্রামে থেকেই চলে যেতে পারি।
2)
“Always bear in mind that your own resolution to succeed is more important than any one other thing.”– Abraham Lincoln
আমরা যেন আমাদের জীবনকে গড়ে তুলি সত্য পথে থেকে। সত্য পথে যখন আমাদের মনটি চালিত রাখি, আমাদের মনের ভেতর যে সুন্দর মনের অনুরনণ তা আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে আচার-আচরণ ও কর্ম পরিচালনায় প্রয়োগ করে থাকি। আমাদের অন্তরে যা লালন করি কাজে কর্মে তা রুপ দান করি। আমাদের অন্তরে যে সৌন্দর্য সৃষ্টি হয় আমাদের মহত্ব দ্বারা তা বড়ই মাধুর্যের। তুমি যখন তোমার মনটি সত্য পথে রেখে যোগ্য মানুষ হও, তোমার মনের যে সৌন্দর্যের অপরূপ প্রবাহ যা অন্য মানুষের জীবনেও প্রবাহিত হবে। আমরা আমাদের কর্ম জীবনে
প্রতিষ্ঠা পাবার আগে যদি ভেতরে অন্তরের সৌন্দর্যে প্রতিষ্ঠিত হই, আমাদের দ্বারা সমাজ ও রাষ্ট্রের ক্ষতিসাধণ কমই হবে। এই সত্য পথে জীবন চালিত রাখার জন্য আমাদের শক্তিশালী ইস্পাত কঠিন মন দরকার। আমাদের এই ইস্পাত কঠিন মনের জন্য যে শক্তিশালী প্রাণ শক্তির প্রয়োজন। এই প্রাণ শক্তির জন্য আমাদের যোগ্যতা শক্তির
বিকাশও প্রয়োজন। আমাদের জীবনে আমরা কোন কিছু করি বা না করি আমাদের শেষ জীবনে তার প্রভাব প্রকৃতির নিয়মের মতই ঠিক আপনার-আমার মাথার উপর এসে পড়বে। আমরা তখন চাইলেও তার যে একটা প্রতিফলন আমাদের কাজের দ্বারা সৃষ্টি হয়েছে, তা কিন্তু বিন্দু পরিমাণ এদিক-ওদিক করার তখন কোন শক্তিই হবে না। এইও তো আমাদের জীবনের অর্জিত ফলাফল। এই জীবনে যা তুমি ভালো করেছ তা-ই তোমার জীবনের অর্জিত মূল্যবান ফসল। আর যারাই মন্দত্বের প্রাণ নিয়ে মানুষের ক্ষতিসাধণ করে জীবন অতিবাহিত করেছেন বা করেন সেইসব তার-ই অর্জিত ফসল। আমরা জীবনে যে যতটুকু, যে পরিমাণে যেভাবে বিনিয়োগ করে কাজ করি না কেন, সেই ভাবেই তার ফল পেয়ে তা ভোগ করে থাকি। আমরা মানুষ হয়ে যদি গর্ব করার মত গর্বের কাজ না করি, আপনি-আমি কেমন করে গর্ববোধ করি আমাদের নিজেদের উপরে? আপনি নিজেই যদি নিজের উপর গর্ব করার কোন উপাদান আপনার কৃতকর্মের দ্বারা অর্জন না করেন, অন্য কোন মানুষকে নিয়ে যে আপনি গর্ব করবেন তাও আপনার মনে অন্তরিত হবে না কারণ আপনার অযোগ্যতা সেটাও অনুরিত করার শক্তি ও মন কিছুই দেবে না। আমরা যদি গর্ব করার মত মানুষ হই আমাদের সন্তানগণও গর্ব করে সমস্ত পৃথিবীর মানুষের কাছে বলে যেতে পারবে যে, আমাদের বাবা-মা আমাদের পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে কোন ছোট কাজ করে আমাদের অপমান করে রেখে যাননি। আমাদের সন্তানরা যেন আমাদের কৃতকর্মে গর্ববোধ করে। তারাও যেন আমাদের মত বড় কাজ করে যেতে পারে সেই পথে উঠে। আমরা এই সুন্দর পৃথিবীতে বিধাতার সর্বশ্রেষ্ঠ দান। আমরা যেন এই সুন্দর পৃথিবীতে বিধাতার দেয়া এই শ্রেষ্ঠ দানের অমর্যাদা না করি নষ্টতার আধিক্যে জীবন চালিত করে। আমরা কেহই নিজেদেরকে যেন ছোট করে না মরি। নিজেদেরকে যেন বড় করেই মরি। তোমরা কি মনে কর না যে, চুরি-দূর্নীতি-ঘুষ এইসব কাজ করার পড়েও তোমরা পৃথিবীর অযোগ্য ও নিন্ম মানুষ? এই যে সমাজ ও রাষ্ট্রের সৌন্দর্য তোমরা নষ্ট করেছ রাষ্ট্রের অর্থ আত্নসাধ ও পাপীদের সাথে মিশে গিয়ে পাপাচারে লিপ্ত হয়ে, এটা কি ভালো কাজ হয়েছে? তোমরাই বল! যারাই অন্যায়, অবিচার, পাষাণ্ডতার মধ্যে জীবন চালিত রাখে সমস্ত মানুষের জীবন ক্ষতবিক্ষত ও ভীতিকর অবস্থানে নিয়ে যায়,
তোমাদের যদি প্রতিরোধ ও প্রতিবাদ করার কোন শক্তি না থাকে কোনই সমস্যা নেই। তবে তোমরা সকলে মিলে এদের ঘৃণা করিও। তোমাদের ঘৃণার শক্তিই একদিন ঠিকই তাদেরকে অন্তরে পীষিত করবে।
তোমাদের এই যে ঘৃণার শক্তি তাও একদিন বড় শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে এদের নিশ্চিহ্ন করে দিবে তাদের অপশক্তি। তোমরা তোমাদের ঘৃণার শক্তি বাড়িয়ে দিয়ে তাদের প্রতি দেখ! আমার-আপনার সকলেরই দায়িত্ব আছে এইসব নষ্ট মানুষদের সমাজ ও রাষ্ট্রে চিহ্নিত করা। তুমি যদি এদের ঘৃণা করে আলাদা করে রেখে যেতে পার, তুমি তোমার জন্মে আল্লাহর নির্দেশিত দায়িত্ব একটুও হলেও পালন করে গেলে! আমরা এই পৃথিবীতে যা কিছুই করি তারই শক্তি আছে। তাই তোমাদের এই ঘৃণার শক্তিও এইসব নিষ্ঠুর মানুষদের নষ্টতার শক্তির বিরুদ্ধে শক্তি হিসেবেই সকলের কাছে পরিচিতি দেবে। তোমরা সমাজ ও রাষ্ট্রের অপকর্মকান্ডের বিরুদ্ধেই দাঁড়িয়েছ। তোমরা যে সুন্দরকে নিয়ে সৌন্দর্যের পাশে দাঁড়িয়েছ। এই সৌন্দর্য যে এত মধুর সুন্দর হবে তা তোমরা জীবনে কল্পনাও করতে পারবে না! আমার-আপনার জীবন সুন্দর হোক যেন সমস্ত সুন্দরের সাথেই আমাদের জীবন মিশে যেতে পারে। আমাদের মনটি যদি সত্য পথে চালিত রাখতে চাই তবে আমাদেরকে অবশ্যই লোভাতুর ও পাপমুক্ত মানুষও হওয়া চাই। সত্য সুন্দরের সন্ধানে সত্য পথে যিনিই জীবন চালিত রাখতে চান জীবনটি যদি যোগ্যতার্জনের দ্বারা গড়তে না পারা যায়, তখন সত্য পথে মনটি রাখা বেশিই কঠিন হয়ে যায়। আমরা যখন আমাদের জীবনকে যোগ্যতার্জনের অস্তিত্বে নিয়ে আসতে পারি, পথে পথে ঘুরে দিশেহারা হয়ে চলার ঝুঁকিপুর্ণ জীবন থেকে কিছুটা হলেও নিজেকে রক্ষা করতে পারি। এই পৃথিবীতে আমরা যদি ঠেকসই মানুষ হতে চাই যোগ্য ও উপযুক্ত মানুষ যেন হই। তুমি একা চলতে চাও যোগ্যতার্জন কর। মাথা উঁচু করে সমাজ ও রাষ্ট্রে চলতে চাও যোগ্যতার্জন কর। সত্য পথে মনের আরোহণ চাও যোগ্যতার্জন কর। সমাজ ও রাষ্ট্রে একটু নড়েচড়ে চলতে চাও যোগ্যতার্জন কর। নির্জনবাসে কিছু দিন থাকতে চাও যোগ্যতার্জনই কর। আমরা যা-ই কিছুই করি যোগ্যতার্জন যেন সবার আগে করি। আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক বিচ্ছুতি দুর করার জন্যও সত্য পথে মনের আরোহণে আমরা যেন ভালো মানুষ হয়েই চলি।
3)
“If you change your focus, you will change your life.”–
Bill Bartmann
আমরা যখন আমাদের মনটি সত্য পথে রাখব তখন এই সত্য পথে যে আমাদের জীবন বোধের অনুভূতির স্বাদ রয়েছে তা সত্যিই উপভোগ করতে পারব। আপনি যদি আপনার মনের ঘরে আনন্দ উৎসব করার সুন্দর স্হান খুঁজে না পান, বাইরে মানুষের সাথে আনন্দ-তৃপ্তি অনুভব করার প্রাণ পাবেন কেমন করে? আমার-আপনার আনন্দ করার প্রাণ যদি অন্তরেই নিবে থাকে, আমরা কখনোই পরস্পর পরস্পরে আনন্দ করার মন পেতে পারি না। এই পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে অবহেলিত মানুষ হয়ে আমরা যখন আমাদের জীবনকে চালিত রাখি, দুঃসহ জীবনের যাতনার চিত্র সমস্তের কাছেই চিত্রায়িত করে চলি। আমরা যদি নিজেদেরকে নিজের মত করে গড়ে না তুলি, তাহলে মানুষ হিসেবে আমরা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য উপযুক্ত মানুষ নয়। আমার-আপনার জীবনে চলার পথে অযোগ্য মানুষ হয়ে বেঁচে থাকতে গিয়ে আমাদের আপন পায়ে কুড়াল মেরে পঙ্গুত্ত্ব জীবন নিয়ে বেঁচে থাকারই শামিল। সত্য সুন্দরের সন্ধানে সত্যাশ্রয়ী মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য সত্য পথেই যেন আমাদের মনটি চালিত রাখি। আমাদের মনটি যদি সত্যিই সত্য পথে রাখতে চাই তবে এই সত্য পথে থাকার জন্য যে প্রাণশক্তি আমাদের অন্তরে অন্তরিত হয়, সেই পথেই আমাদের থাকতে হই। আমাদের সামাজিক মর্যাদার জায়গা দুর্বল রেখে আমরা কখনোই পরস্পর পরস্পরে সম্পর্কের মাঝে প্রাণের সঞ্চারও করতে পারি না। আমরা যদি পরস্পর পরস্পরের সম্পর্কে প্রাণ প্রতিষ্ঠা না করে চলি, আমাদের কাছের মানুষও আর কাছের থাকে না। আমরা যদি পরস্পরে কাছের মানুষ হয়ে সন্মানিত হতে চাই তবে আমরা যেন পরস্পর পরস্পরকে প্রাণের সম্পর্ক স্থাপন করে সন্মানটুকু দিয়ে যাই। আমাদের শরীরের যত্ন যদি সঠিক ভাবে না করি, আমাদের শরীর সুস্হ রাখতে পারি না। আমাদের জীবন গড়ার কাজ যদি গড়ার মত করে না গড়ি, আমাদের জীবন কখনোই গড়া হয় না। আমাদের জীবন গড়ার জন্য মনের গঠনেরও প্রয়োজন আছে। এই সুন্দর পৃথিবী আমাদের সকলের। আপনার-আমার জীবন যখন জীবনের মত গঠন করা যায়, আমরা পৃথিবীর যে কোন দেশেই বসবাস করার যোগ্যতার্জন করতে পারি।
আপনি-আমি সকলেই যখন আমি যা আছি তার চেয়ে উপযুক্ত মানুষের সাথে সম্পর্ক করি, আমিও একদিন তার কাছ থেকে জেনে-বুঝে-শিখে উপযুক্ত মানুষ হতে পারি। যাদের সাথে আমাদের ভবিষ্যতের ভাবনা ও স্বপ্নময় জীবনের স্বপ্ন থাকবে, সেই মানুষ যেন আমাদের চেয়েও উপযুক্ত ও সৎ মানুষ হয়। এই উপযুক্ত ও সৎ মানুষটি যদি তোমার চিরদিনের বন্ধু হয়ে যায়, সেই বন্ধুকে যদি কেউ অপমান ও কষ্ট দেয়, তোমার এই বন্ধুটির জন্য বড় ব্যথা পর্যন্ত অন্তরে বেজে উঠবে। সত্য সুন্দরের সন্ধানে নিজেদেরকে নিযুক্ত রেখে আমরা যখন নিজেদের জীবনে অতীব মনোরম প্রাণের যোগ্য মানুষ হব, তখনই সত্য পথে আমাদের মনটি রাখা অতি সহজ হয়ে মনে ধরা দেবে। যে কোন কাজ করার পূর্বে তা যদি মনে ধরা না দেয়, সেই কাজ আপন মনে করার জন্য নিজের মনই খুলতে চায় না। আমরা যখন মন খুলে ভালো কাজ করি, তখন সকলের জন্য গর্বদীপ্ত মনও তৈরি করি। তোমাদের নিজেদের জীবনের জন্য সম্পর্ক তৈরী করে চলার আলোকে যোগ্য ও সৎ মানুষ খোঁজ। যারা সৎ ও যোগ্য মানুষ নয়, তাদের সাথে যত মধুর সম্পর্কই হোক, এদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে ঠেকসই রাখা যায় না কারণ অসৎ মানুষ বুদ্ধিমান ও যোগ্য মানুষ হলেও তাদের কাছে সমাজ ও রাষ্ট্র নিরাপদ নয়। তুমি যদি তোমার কোন বন্ধুবান্ধবদের সাথে ব্যবসায় যেতে চাও তোমার বন্ধুবান্ধবদের এই দুইটি গুনাবলীর যে কোন একটার অভাব থাকে তোমার ব্যবসা যে শীঘ্রই ক্ষতির মুখে পড়বে, তা নিশ্চিত কল্পেই বলা যায়। তোমার বন্ধুটি যেন সৎ ও অভিজ্ঞ মানুষ হয় তোমাদের ব্যবসায়িক জীবনে। আমরা যদি শিক্ষিত হয়ে যোগ্য ও সুন্দর মনের মানুষ না হই, সত্য পথে আমাদের মনকে চলমান রাখা বড়ই কঠিন হয়ে যায়। নিজের জীবনকে যদি অনুতাপের তাপ থেকে বাঁচিয়ে নিজেরই নিয়ন্ত্রিত জীবন চাও তবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত হও। এবং সততার চরিত্রে জীবন চালিত রেখে সত্য পথেই জীবনটি রাখ।
4)
“Imagination is more important than knowledge.”–
Albert Einstein
মানুষের সাথে আমাদের পরস্পরে জীবনের প্রয়োজনেই সম্পর্কে বাঁধন সৃষ্টির প্রয়োজন আছে। তবে আমরা যেন অসৎ ও স্বার্থপর মানুষের
সাথে সম্পর্ক করে বাঁধন সৃষ্টি না করি। আমাদের জীবন চলার জন্য যে কিছু মানুষের প্রয়োজন আছে, তারা যেন আমাদের প্রাণের মানুষ হয় এবং তাদের সাথে চলতে পথে আমাদের অন্তরের বাঁধনও হয়। আসলে এই পৃথিবীতে, এই রাষ্ট্রে, এই সমাজে ক’জনকে আমরা পাই আপন করে নিজের মত? আমাদের এই সংসারে, এই সমাজে যাদেরকে একান্তই আপনার করে পাওয়া যায় তাদের প্রাণেও তো আমাদেরকে দেওয়ার মত মাধুর্য ভরা ভালোবাসা রয়েছে। সেই ভালোবাসার টান আমাদের মনের ভেতর অনুভব করা যায়। তখনই মনে এক ধরনের টান আসে যে, তুমি বা তোমরা ছাড়া বোধ হয় আমার আর আপনার বলতে কেউ নেই। যে দিন তোমার-আমার মনের মধ্যে এই সুন্দর ভাবনাটি অন্তর থেকে অনুভূত হবে সেই দিনই বল যাবে যে, তুমি ছাড়া আমার আর আপনার বলতে আর কেহ-ই নেই। এবং সেদিনই আরো বলা যাবে যে, তুমি তোমার জীবনের সৌন্দর্যের স্বরূপ অন্তরে লালন করে জীবনটি চলমান রেখেছ। যাদেরকে আমরা আপনার করে ভাবি ,আমরা ক’জনই বা আছি ? আমরা কতজনই বা আছি তাদেরকে চিরদিনের জন্য প্রাণের মাঝে রাখি? আমাদের সংসার জীবন অতীব মূল্যবান সম্পদ। আমাদের এই সংসারে মূল্যবোধের জীবনে আমরা যারাই জীবন শুরু করি অন্যদের সাথে, আমরা অনেকেই আমাদের জীবনে বাজে কাজ করে এক সাথে চলার মন হারিয়ে উচ্ছিষ্ট মানুষে পর্যন্ত পরিণত হয়ে পড়ি। আমরা যদি সত্য সুন্দরের মিশেল ঘটিয়ে শ্রদ্ধা মিশ্রিত ভালবাসা পরস্পরে অন্তরে রোপণ করে চলতে পারি তাহলেই আমাদের মনের ভেতর প্রাণের মায়া সৃষ্টি হয় প্রিয়জনদের জন্য। এই প্রাণের মায়ায় যখনই তোমার অন্তরের চোখে নাড়া দিয়ে তোমার দুইটি চোখে জল এনে দেয়, সেই জল শুধুই যে ব্যথাতুর প্রাণের চোখের জলের কান্না নয়। ইহা তোমার প্রাণের প্রেমময় মায়া কান্না। এযে তোমার অন্তর থেকে উৎসরিত প্রাণের কান্না। যে কান্নার মায়া জল তোমার প্রিয়জনকেও অন্তরে কাঁদায়। তুমি যখন তোমার জীবনটি ঠিক জীবনের মতই গড়, সে জীবনটিই তোমার মত করে তোমার জীবন চালিত করার সমস্ত সুযোগ সৃষ্টি করে দিবে। সত্য পথে তুমি যখন চলতে পারবে, তোমার এই পথে অন্যেরা এসেও তোমার সাথেই চলবে। তোমার প্রিয়জন যদি থেকে থাকে আর তুমি যদি বুঝতে পার যে, সে তোমার আসলেই প্রিয়জন হয়েছে তোমার প্রাণের টানে, কখনোই যদি কোন কারণে তোমার
চোখের জল এসেই যায় তোমার একান্ত প্রিয়জনের সামনে, সে যদি তোমার চোখের জল নিজ হাতে মুছে দেয়, মনে করিও তোমার কান্নার সৌন্দর্য সেদিন অনেক বেশিই মনোরম ছিল। তোমার চোখের জলের কাঁদনের শক্তি তোমার প্রিয়জনকে দিয়েছে প্রেমময় জীবনের পরম ভক্তি। নিজেকে নিজ দায়িত্বে দায়িত্বশীলতার প্রয়োজনেই গড়ে তোল। তোমার-আমার জীবনে দায়িত্ব নেওয়ার মত কোন জায়গা আমরা তৈরি না করি, সকাল-বিকাল সর্বত্রই আমরা পথহারা কতগুলো মানুষ মাত্র। তুমি যদি তোমার নিজের জীবন চলার জন্য নিজে দায়িত্ব নেওয়ার মত যোগ্যতার্জন না কর, যারা সামনে যাবার সামনেই যাবে। আর যারা পিছনে যাবার তারা পিছনেই যাবে। আমাদের প্রত্যেকের জীবনই সাঁতার ও দৌড় প্রতিযোগিতার মত। তুমি যদি যোগ্য ও সুন্দর মনের মানুষ হও তোমার জীবন ধারার গতিপথ থাকবে শক্তি ও সুন্দরের সাথে। আর তুমি যদি সত্যাশ্রিত সুন্দর মনের মানুষ না হও তোমার মন লোভাতুর হবে। তুমি চাইবে একে ওকে মেরে-ধরে সামনে যেতে। তুমি যদি আসলেই তোমার জীবনের জন্য যোগ্যতার্জন করে জীবিকার্জন করার জন্য জীবন যুদ্ধে অনবরত থাক, তোমাকে কখনোই অন্যের জীবন নষ্ট করে অন্তত মেরে-ধরে সামনে যেতে হবে না। আমাদের জীবনের জন্য সব চাইতে সহজ ও সুন্দর পথই হল কাজ করে জীবন গড়া এবং সত্য পথে মনটি রাখা। সত্য কথা বলতে কি আমরা যদি এই পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে উপযুক্ত মানুষ না হই, সত্য পথে আমাদের মনকেও রাখতে পারি না। আমাদের এই জন্মে যা কিছুই করি অযোগ্য মানুষ হয়ে নিজেদের পায়ে নিজেরা যেন কুড়াল মেরে না চলি। এই কুড়ালের আঘাত যদি একবার স্থায়ী হয়ে যায়, তা যে চিরকালেরই আঘাত তোমার-আমার জীবনে। সত্য সুন্দরের সন্ধানে জীবনকে চালিত রেখে উপযুক্ত মানুষ হও। শুধুই ভোগের জীবন তৈরী না করে তোমার জীবনটাকে গড়ে, মনটাকে সত্য পথে রেখে সুখী মানুষ হও। যারা শুধুই ভোগের মানুষ হয়, তারা সুখী ও সুন্দর মনের মানুষ নয়। সত্য সুন্দরের সন্ধানে থেকেই আমরা যেন আমাদের জীবনকে গড়ে তুলি এবং সত্য পথে মনটি চালিত রাখি। এই যেন হই আমাদের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা।
“Promises are more powerful than goals.”— Bill Bartmann
লেখক:কলামিস্ট, গবেষক ও সমাজ বিশ্লেষক।