ঢাকা | নভেম্বর ২৪, ২০২৪ - ৯:১৩ অপরাহ্ন

সত্য সুন্দরের সন্ধানে-১৫ ” মনের মানুষ যেন প্রাণের মানুষও হয়”

  • আপডেট: Thursday, November 17, 2022 - 8:06 pm
  • পঠিত হয়েছে: 131 বার

রাজু আহমেদ মোবারক:

1) “Faith is thinking something is true to the extent that we act on it.”— W.T.Purkiser

আমরা সবাই মনের মানুষ চাই। কিন্ত আমরা ক`জনই বা আছিনিজেরা 

মনের মানুষ হতে চাই? আমরা নিজেরা আমাদের অনুভূতির ধারায় ও কাজে নিজেদেরকে প্রকাশিত করে থাকি কর্ম তৎপরতার মাধ্যমে।

যা আমাদের চরিত্রের প্রকৃত রুপ। চরিত্রের সৌন্দর্যের এবং নগ্নতার এই দুইটার প্রকাশই পারিবারিক, সামাজিক সমস্ত ক্ষেত্রে আমাদের 

কৃতকর্মের মাধ্যমে মানুষের মাঝে আমরা তা পূর্ণাঙ্গ রূপে তুলে ধরি। আমরা আমাদের কাজের অনেক কিছুই গোপন করে চলতে পারলেও চরিত্র গোপন করার কোনই সুযোগ নেই। মানুষ অনেক কিছু থেকেই বেরিয়ে আসতে পারলেও যা কৃতকর্মের দ্বারা রুপের বা আকার ধারণ করে, সেই থেকে বাঁচার বাহ্যিক কোনই সুযোগ নেই। চরিত্রের যে রূপ সেটা মানুষের জীবনে রুপের কাঠামো হিসেবেই আসীন হয়। যা সুস্পষ্ট ভাবেই অন্য মানুষেরা বুঝতে পারে, আমাদের চরিত্র ভাল না কি মন্দ। আমার আমিত্বের মাঝে মন্দকে যদি আমি প্রশ্রয় না দিয়ে চলি,  আমারও বিশ্বাস আমার মনের মানুষ আমার প্রাণের মানুষই হবে। 

সত্য সুন্দরের সন্ধানে থেকেই সেই মনের মানুষ যে প্রাণের মানুষ হয়। 

আমাদের চেতনায় ও অনুভূতিতে যদি পাপের ও অন্যায়ের সংযুক্তি শুধু হতেই থাকে, প্রেম ভালোবাসা সেই পাপের ভারটুকু সইয়ে হৃদয়ে ও চেতনায় গ্রহণ করে, জীবনের সৌন্দর্য নিয়ে সম্পর্ক রক্ষায় সামনে যেতেই পারে না। তখন তোমার-আমার সুন্দর মনে এক ধরনের  বিক্ষোভ জন্ম হতেই থাকে আর হতেই থাকে। আমরা যদি আমাদের মনের মানুষের কাছে প্রাণের মানুষে পরিণত হতেই চাই, তবে যেন মনের শিক্ষা এবং প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দুতারার মতই দুইটি তারের কেন্দ্র যেন একই স্হানে থাকে। এই দুইটি তার যদি দুইটি থাকে, সেই দুই তারার কোন দিক থেকে ভায়ব্রেশন (vibration) সৃষ্টি করে আওয়াজ তোলা যায় না। তোমার-আমার মনের মানুষ প্রাণের মানুষ হওয়ার জন্য দুইটি 

 

তারের দুই দিকে থেকে প্রাণের আওয়াজ (vibration)সৃষ্টি করে থাকতেই হবে।আমার মনের মানুষ যখন প্রাণের মানুষ হয়, আমার  মৃত্যুর পড়েও যেন আমার আমিটি বাঁচিয়ে রাখি তাদের কাছে যা আমার প্রিয়জন। আর তোমার জীবদ্দশায় তোমার রেখে যাওয়া কর্মকান্ডের কথা তোমার লোকজনই তোমাকে নিয়ে কিছুকাল হলেও বলাবলি করবে, যারা তোমাকে ভালবাসাবাসির মধ্যে রাখত। আমাদের প্রাণের মানুষজন এই পৃথিবী থেকে চলে গেলে মনটা বেশ খারাপ হলেও এত বেশি সংকোচিত হয় না। কারণ, তারা  সকলের জন্য সকলের হয়ে সকল কাজ যথেষ্ট করেছেন। কিন্তু তাদের চলে যাওয়ার বেদনা প্রাণমন দিয়ে চেষ্টা করেও অতীতের মধুময় সৌন্দর্যের স্মৃতি মন থেকেও যে মুছা যায় না, তাও তো বেদনাবিধূর। আমাদের প্রিয়জন হারানোর বেদনায় অন্তরে যে কষ্ট চলাচল করে তাও মধুময় হয়ে উঠে। কারণ, আমার-আপনার জীবনে তাদের তো অন্তরে অনুভব করেই আমরা পরস্পর পরস্পরে ভালোবাসাবাসির মধ্যে রেখেছি। যাকে হৃদয়ের অন্তঃপ্রাণে ভালোবাসা যায়, তাকে তো আর সহজেই ভোলা যায় না? সকলেই যেন আমরা আমাদের প্রিয়জনকে ভালো ভাবেই হৃদয় দিয়ে ভালোবেসে যাই। ওরা চলে যাওয়ায় অন্তরে শুধুই রেখে যায় হারিয়ে যাওয়া প্রিয়জনদের যাতনার ভার, যা আমাদের অন্তরে যাতায়াত করার সুখেরই  নির্যাস। তোমার প্রিয়জন চলে যাবার পর, তার চলে যাওয়া যদি তোমাকে মূর্ছিত না করে, তুমি অন্তরে কোন ব্যথাই অনুভব না কর, তোমার চৈতন্যে কোনই অনুতাপ না আসে, তুমি তার সাথে শুধুই সময় অতিক্রান্ত করেছ। তুমি তোমার জীবনকে  তার সাথে অনুভবের সিক্ত প্রাণে অতিক্রান্ত কর নাই। জীবন যে কত মধুর-মাধুর্য্যময়, এর যে কত সুন্দরের-সৌন্দর্যের স্বরূপ রয়েছে! এর যে কত বৈচিত্র্যময় সুন্দরের চরিত্র রয়েছে! এর কতই না রূপ স্পর্শ রয়েছে সত্যিই তা অনেক সুন্দর! এই প্রেমানন্দ ও এই মনোরম মনের সম্পর্কে মনের মানুষ যখন প্রাণের মানুষ হয়, সে যে অন্তরে সৌন্দর্যের  রুপের খেলা! এই রূপের খেলায় যখন আমাদের প্রিয়জন পরস্পরে মনোরম প্রাণে বাস করি, সেই তো আমাদের জীবনের পরম অনুভূতির বাঁধন। সকলে তা এই সুন্দর অনুভূতির আবহে নিজেকে অনুভবে সিক্ত করেন না। কেউ কেউ তা অনুভব করেন এবং নিজের জীবনের সৌন্দর্যের বোধের মাঝে নিজেকে 

 

নিবিষ্ট রাখেন। যা সুস্পষ্ট ভাবেই অন্তরে ভালোলাগা অনুভব করায়। এই যে তুমি গাছগাছালির মিলনে, নদীর বহমান স্রোতের সৌন্দর্যের সাথে নিজেকে বৈকালিক সন্ধায় সকলের সাথে মিলে মিশে আনন্দ করেছিলে, সে যে তৃপ্তিবোধের হৃদয়েরই মধুর ভালোলাগা।

2)

“That kind of life is most happy which affords us the most opportunities of of gaining our own self-esteem.” — Samuel Johnson 

সত্য সুন্দরের সন্ধানে যারাই সুন্দরের রূপের ধারায় তাদের জীবনকে জীবনের জন্য চালিত রাখেন, তারা তাদের চেতনার বিকাশের চরিত্রে অত্যন্ত প্রেমদীপ্ত সুন্দর মনের মানুষ। তোমার চেতনার চরিত্র এবং আমার চেতনার চরিত্রের রুপের কাঠামোর মেলবন্ধন, যা আমাদেরই অন্তরের সৌন্দর্যের অনুভূতির প্রকাশ। এটা আমাদের জীবনের অনেক বড় কৃপা যে, জীবন শুরু করে যদি শেষ পর্যন্ত আমাদের মনের মানুষের  প্রাণের পরশে এসে মনকে ধরে রাখার মনের যোগ্যতা অর্জন করি  সুন্দরের পথে থেকে তবেই আমরা পরস্পর পরস্পরের প্রিয়জন হই। 

আর এই মনের মানুষ তোমারই প্রাণের রুপের আলোয় হৃদয়ে কেবলই তোমার চেতনার সুরের স্পন্দনের কম্পন বাড়ায়। হৃদয়ের সৌন্দর্যে আমরা যখন সুন্দরের প্রাণের স্পন্দন আমাদের  অন্তরে শুধুই অপাপবিদ্ধ হয়ে ভালোবাসার প্রলেপ লাগাই আর তখনই প্রতিদিনের মনটি আমরা খুঁজে পাই পরমানন্দে। আমাদের মনের মানুষ প্রাণের মানুষ হয় যখনই সত্য সুন্দরের সন্ধানে থেকে জীবন চালিত রেখে শ্রদ্ধার সৌন্দর্যে আমরা পরস্পর পরস্পরের হৃদয়ে ফুঁটে থাকি। আমায় তুমি কখনোই সংশয় নিয়েও বলনি যে, আমি যে তোমায় বুঝিনি?ভালোবাসার মানুষের অন্তরে ক্রন্দন আছে। প্রাণের স্পর্শে ভেতরে কেঁদে কেঁদে কে কাকে কাঁদায় ? ভালোবেসে প্রাণের কাঁদনে মনে যদি তার অনুরনণ না ঘটে, মনের মানুষ কেমন করে প্রাণের মানুষ হয়? মনের মানুষ যখন প্রাণের মানুষ হয়, অন্তরে যে বিষাদের পরিবর্তে প্রাণের পরশে জীবন চালিত রাখতে হয় যেন তার  মুখ দেখেই মনের ভাব স্পষ্ট বুঝতে পারা যায়। যাকে তুমি তোমার মতোই ভালোবাস সে যদি কোথাও একা দাঁড়িয়েও থাকে, সেই দাঁড়িয়ে থাকার মাঝেও সৌন্দর্যের মাধুর্য ও মোহনীয়তা খুঁজে বের করে, তুমিই তোমার মাঝে মুগ্ধ হতে পেরেছ 

 

তবেই তুমি তাকে বড় বেশি ভালোবেসেছ। সত্য সুন্দরের সন্ধানে সুন্দরের পথে যারা প্রাণের পরশে জীবনে চলতে পথে আত্নাকে পরিশুদ্ধ  রাখেন তারাই পরস্পর পরস্পরের হয়ে মনের মানুষ প্রাণের মানুষ হয়ে থাকেন। যাকে তুমি সত্যিই  ভালোবাস তার কাছে যদি তোমার মনটা না খুলো, সেই বা কেমন করে তোমার কাছে তার মনটা খুলবে? আমরা সবাই তো এক সাথেই থাকি প্রিয়জনের সাথে। একই সাথেও এক টেবিলে-চেয়ারে বসে খাবার খাই। একই সাথেই ঘুমাই কিন্তু কখনো কখনো আমরা আমাদের নিজেদের মনের অনেক কথাই, ঠিক ভাবে প্রিয়জনকে জানতে দিতে চেয়েও চাই না। চলতে গিয়ে বলার সময় পুরোটা ফাঁকা করার দরকার নেই। কিন্তু নিজেদেরকে একেবারেই গোপন করে প্রিয়জনকে মনের কোন প্রিয় কথা জানতে না দাও,  তোমার মনের মানুষ তো আর প্রাণের মানুষ হওয়ার সুযোগও পেলো না। কখনো কখনো আমরা নিজেরা অন্যের কাছে আসলেই একেবারে অন্তঃসারশূন্য ও নেহাতই ফাঁকা মানুষে পরিণত হয়ে যাই। যখন ঝোঁকের উপর বা talk show-তে  এসে নিজেদের বুদ্ধির শক্তি বিকাশ প্রমাণ করার জন্য তর্কাতর্কি শুরু করে দেই, তখন এসব তর্কের বিনিময়ে অসম্ভবকে তো সম্ভব করে নিতে হয়। কারণ, তর্কযুদ্ধে তো তর্কাতর্কি করে জিততে হবে। এসব তর্কযুদ্ধে হেরে গেলে তো সর্বনাশ ডেকে আনবো আমাদের রাজনৈতিক দলের! আমাদের তর্ক যুদ্ধে জিততে গিয়ে নিজেদেরকে ছোট মানুষে পরিণত করলেও যেন লজ্জাবোধ অনুভব হয় না আমাদের অন্তরে! আমাদের রাজনৈতিক দলকে তো হারালে চলবে না কিছুতেই। তর্কযুদ্ধে শব্দ চয়নে একটু উলঙ্গ হলেই বা কি? আমাদের রাজনৈতিক দলের সন্মানের কাজ তো আমাদের করতেই হবে। তর্কাতর্কি করে আমাদের বিদ্যা-বুদ্ধি, অভিজ্ঞতা, মান- সম্মান এসব কদর্যপূর্ণ স্হানে নিক্ষিপ্ত হলেও, আমাদেরকে জেদ করে হলেও তর্কযুদ্ধে জিততে হবে। তুমি যে এই তর্কযুদ্ধে নেমেছ এই যুদ্ধের ফলে হয় সন্মানে উপরে উঠবে উপযুক্ত মানুষ হিসেবে, না হয় নিজেকে একেবারেই ফাঁকা করে ফেলবে তোমার এই জীবন যুদ্ধের তর্কে নেমে। এখন মানুষ তোমার কর্ম দিয়ে তোমাকে নিরক্ষণ করে না। এখন 

মানুষ তোমায় নিরক্ষণ করে তোমার মুখের শব্দের অর্থ দিয়ে। কারণ, তোমার মুখের ভাষাতে মানুষ বলে দিতে পারেন তুমি কে? অথবা 

 

তোমার চরিত্রের মূল কাঠামোটাই বা কি? কোন্ শব্দ তোমার মস্তিষ্কের বাক্স থেকে খুলে জীব্বা দিয়ে উচ্ছারণ করে মানুষের কাছে পৌঁছালে তা দিয়ে তুমিই তোমাকে সারা বিশ্বের কাছে জানিয়ে দিলে তোমার দীর্ঘকালের অর্জিত চরিত্রের রুপটি। এখন মানুষের জিব্বার যুদ্ধই তাদেরকে তর্ক যুদ্ধে নিয়ে যায়। আমার-আপনার এই তর্ক যুদ্ধের ফলে আমাদের সন্তানদের মননের বিকাশের ক্ষতিসাধন যেন আমরা না করি।

কারণ, আপনার-আমার সন্তানরা আমাদের আগামীর মূল্যবান সম্পদ।
লেখক: কলামিস্ট,গবেষক ও সমাজ বিশ্লেষক।