ঢাকা | ডিসেম্বর ১৪, ২০২৪ - ১:৩৯ অপরাহ্ন

শিরোনাম

পরিবেশবান্ধব নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করছে হাউজিং এন্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট

  • আপডেট: Sunday, November 13, 2022 - 8:26 pm
  • পঠিত হয়েছে: 127 বার

মো. আশরাফুল আলম:

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার মনে করে, সবার জন্য আবাসন, কেউ থাকবে না গৃহহীন। এটি ছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অঙ্গীকার। এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নের জন্য সরকার কাজ করে চলেছে। ‘সবার জন্য পরিবেশসম্মতভাবে আবাসন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা সরকার সারা বিশ্বে রোল মডেল হবে। সারা দুনিয়ায় যেমন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন শেখ হাসিনা, এ ক্ষেত্রেও তাঁর নেতৃত্ব থেকে সারা দুনিয়া শিক্ষা গ্রহণ করবে।’  দেশের বিত্তবান, মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত, এমনকি যাদের কোনো কিছু নেই অর্থাৎ যারা ভাসমান বস্তিবাসী তাদের জন্য সরকার বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। একজন লোকও দেশে আবাসহীন থাকবে না। জনগণের সাংবিধানিক অধিকার বাসস্থান বাস্তবায়নের জন্য এইচবিআরআই কাজ করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “নদী ভাঙনে বাস্তুচ্যুত অসহায় ও বস্তিবাসীসহ দেশের গৃহহীন-ভূমিহীনদের ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’ এর মাধ্যমে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সংবিধানের ১৬ অনুচ্ছেদ এবং ১৮ক এর আলোকে নগর ও গ্রামাঞ্চলের জীবন যাত্রার মানের বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে আমাদের সরকার নানামুখী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করছে। বাংলাদেশের কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না, ইনশাল্লাহ।”
ইতোমধ্যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন সুবিধা ৮ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যে অনুশাসন দেয়া হয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়নের ফলে সরকারি চাকুরিজীবীদের আবাসন সুবিধা ইতোমধ্যে ২৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। চলমান প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়িত হলে ২০২৩ সালে এ আবাসন সুবিধা ২৮ শতাংশে উন্নীত হবে। এ সকল বহুতল আবাসন প্রকল্পে জমির নূন্যতম দুই তৃতীয়াংশ স্থান উন্মুক্ত রাখা অথবা জলাধারের সংস্থান এবং টেকসই প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে নাগরিক জীবনে স্বস্তি ফিরে আসবে।
১৯৯৭ সালের ১৯ মে ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত হয়ে গৃহহীন হয়ে পড়ে কক্সবাজার জেলাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকার বহু পরিবার। তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই বছরের ২০ মে দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে যান। গৃহহীন ওইসব পরিবারকে পুনর্বাসনের ঘোষণা দেন তিনি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হয় ‘আশ্রয়ণ’ প্রকল্প। এরইমধ্যে এ প্রকল্পের মাধ্যমে তিন লাখ ১৯ হাজার ১৪০টি পরিবারকে আবাসনের ব্যবস্থা করেছে সরকার।এ ছাড়াও বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে বস্তিবাসী ও ভূমিহীন ও গৃহহীনদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে ঘরহীন মানুষের মধ্যে আশার আলো সঞ্চার করেছে। সরকার চায়, বাংলাদেশের কেউ যেন গৃহহীন না থাকে।
২০১৮ সালের জুলাইয়ে জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ উদযাপনে ২০২০-২১ সালকে ‘মুজিববর্ষ’ ঘোষণা করে সরকার। এর পরই ‘মুজিববর্ষে বাংলাদেশে কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না’-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন নির্দেশের পর প্রত্যেক গৃহহীন পরিবারকে ঘর দিতে বিভিন্ন দপ্তর বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে সারাদেশে গৃহ ও ভূমিহীন আট লাখ ৮২ হাজার ৩৩টি গৃহহীন পরিবারের তালিকা করা হয়। এর মধ্যে ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা দুই লাখ ৯২ হাজার ২৮৩। এ ছাড়া জমি আছে; কিন্তু ঘর নেই- এমন পরিবারের সংখ্যা পাঁচ লাখ ৮৯ হাজার ৭৫০টি। এসব পরিবারকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার হিসেবে পাকা বাড়ি বানিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রতিটি বাড়ি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় এক লাখ ৭১ হাজার টাকা। সেই হিসাবে মোট ব্যয় ধরা হয় ১৫ হাজার ৮২ কোটি টাকা।
ভূমি ও গৃহহীনদের ঘর করে দেওয়ার কাজ চলছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের তিনটি ধাপে। আশ্রয়ণ প্রকল্পণ্ড২-এর মাধ্যমে এরইমধ্যে তিন লাখ ১৯ হাজার ১৪০টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। বর্তমানে আরও দুই লাখ ৫০ হাজার পরিবারকে পুনর্বাসনের কাজ চলমান। একতলাবিশিষ্ট দুই বেডের এই পাকা বাড়িতে থাকছে ড্রইংরুম, বারান্দা, টয়লেট, কিচেনসহ একটি পরিবারের বসবাসের উপযোগী বাসগৃহ। এদিকে রাজধানীর বস্তিবাসীর বাসস্থানের জন্য এরইমধ্যে পাঁচটি বহুতল ভবন তৈরি করেছে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। সেখানে ৫৩৩টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে। এরইমধ্যে কিছু ফ্ল্যাট বস্তিবাসীদের নামে বরাদ্দও দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, নগর ও গ্রামাঞ্চলের জীবনযাত্রার মানের বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে সরকার নানামুখী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করছে।২০৪১ সালের আগেই বাংলাদেশ একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে। এ লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলব।
সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও গবেষণার মাধ্যমে জমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে সবার জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করতে সরকার সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে। সকল প্রকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি সর্বাগ্রে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এজন্য আবাসিক স্থাপনা নির্মাণে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার, পরিবেশবান্ধব নির্মাণ সামগ্রী, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ব্যবস্থা, রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং, নিজস্ব সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট এবং পর্যাপ্ত সবুজায়নের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।
দেশের প্রচলিত নির্মাণ কর্মকান্ডের গুণগত মান বৃদ্ধিকরণ এবং নতুন উপকরণ উদ্ভাবন ও নির্মাণ কৌশল উন্নয়নের লক্ষ্যে গবেষণার গুরুত্ব সর্বজনবিদিত। এ লক্ষ্য সামনে রেখে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ হাউজিং এ- বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট গবেষণার কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা এবং উদ্ভাবিত নির্মাণ উপকরণ ও পদ্ধতিসমূহ সম্প্রসারণের জন্য কাজ করে চলেছে।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সংবিধানের ১৬নং অনুচ্ছেদে নগর ও গ্রামের বৈষম্য ক্রমাগতভাবে দূর করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে নাগরিকদের আবাসন সমস্যা দূরীকরণে নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। সবার জন্য পরিকল্পিত আবাসনের মাধ্যমে ভবিষ্যতের উন্নত নগরায়ন নিশ্চিতকরণে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। সরকার এ লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের নাগরিকদের জন্য জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনার মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে নগর আবাসন নিশ্চিত করতে অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের জেলা শহরের পাশাপাশি বিভিন্ন উপজেলায় প্লট ও ফ্ল্যাট প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। কোনো নাগরিকরা যাতে বস্তিতে বসবাস করতে না হয় সেজন্য সরকার বস্তিবাসীদের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ করছে। বস্তিবাসীদের জন্য ১৬ হাজারের বেশি ফ্ল্যাট নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন গবেষণা কর্মে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে এইচবিআরআই।
ইতোমধ্যে আবাসন খাতের চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলায় এবং সুপরিকল্পিত নগরায়নের জন্য ‘জাতীয় আবাসন নীতি-২০১৭’ এবং ‘হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট আইন-২০১৮’ প্রণয়ন করা হয়েছে। গৃহায়ন নীতিমালার যথাযথ বাস্তবায়ন, ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-১১’ অর্জনে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে আধুনিক ও সময়োপযোগী প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ কর্মসূচি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের সকল ইটভাটা  বন্ধ করে দিয়ে স্যান্ড সিমেন্ট ব্লক ব্যবহার করা হবে।  বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলের মানুষ স্বল্প বিনিয়োগে পরিবেশ বান্ধব আবাসন তৈরি করতে পারবে। যা পরিবেশ বান্ধব এবং ইটের  চেয়ে ২৫ শতাংশ সাশ্রয়ী ও টেকসই। এ সকল পরিবেশ বান্ধব নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের লক্ষ্যে প্রায় সারা দেশে ৫ লক্ষাধিক ব্যক্তিকে প্রশিক্ষণ প্রদানে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
বর্তমানে এইচবিআরআই কর্তৃক উৎপাদিত ব্লকগুলোর মধ্যে কম্প্রেসড স্ট্যাবিলাইজড আর্থব্লক (সিএসইবি), ইন্টারলকিং সিএসইবি, কংক্রিটহলোব্লক, থার্মালব্লক, স্যান্ডসিমেন্ট হলোব্লক, অটোক্লকেভড এরিয়েটেড কংক্রিট ব্লক, থ্রিডিপ্যানেল, স্যান্ডউইচ প্যানেল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। পরিবেশবান্ধব এই সকল ব্লক উৎপাদনে কৃষি জমির উপরিভাগের মাটির ব্যবহার এবং আগুনে পোড়ানোর প্রয়োজন হয়না। ফলে ব্লক উৎপাদনে বায়ু দূষণের অন্যতম নিয়ামক কার্বন নিঃসরণের কোনরূপ ঝুঁকি নেই।
উপরোক্ত লক্ষ্যসমূহের পাশাপাশি হাউজিং এ- বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট দেশের জনগণের, বিশেষ করে গৃহ নির্মাণ কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের প্রশিক্ষণ দানের জন্য নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনা করে আসছে। নিজের বাড়ি নিজেই করি এর মধ্যে অন্যতম।

(লেখক: মহাপরিচালক এইচবিআরআই)