ঢাকা | অক্টোবর ৪, ২০২৪ - ৩:০৯ পূর্বাহ্ন

অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় কিছু সুপারিশ

  • আপডেট: Sunday, November 13, 2022 - 7:40 pm
  • পঠিত হয়েছে: 136 বার

মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া:

দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের সরকার,অর্থনীতি বিশ্লেষক, সুশীল সমাজ, থিংকট্যাংক থেকেশুরু করে সচেতন জনগণের মধ্যে বেশ উদ্বেগ ও শঙ্কালক্ষ করা যাচ্ছে। ২০২০ সালের প্রথম দিক থেকেপ্রায় দুই বছর করোনা মহামারীর কারণে বিশ্বঅর্থনীতি স্থবিরতা কাটিয়ে ওঠার আগেই ২০২২সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বাধারকারণে বিশ্বের অর্থনীতিতেই অশনিসংকেতপরিলক্ষিত হয়। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাএবং পাল্টা নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে পৃথিবীর উন্নত-অনুন্নত প্রায় সব দেশেই মূল্যস্ফীতি, সরবরাহব্যবস্থায় বিপত্তি, উৎপাদন ও আমদানি-রফতানি হ্রাস, কর্মসংস্থান হারানোসহ নানা বিপর্যয় দেখা দেয়।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপের প্রায় অধিকাংশ দেশ, আফ্রিকা ও এশিয়ার দেশগুলোয় ৯-১০ শতাংশমূল্যস্ফীতি  ঘটে। বিশেষ করে জ্বালানি তেল, গ্যাস,খাদ্যসামগ্রীসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যস্ফীতিজনগণের জীবন মানে সরাসরি আঘাত করে। দেশেদেশে অর্থনৈতিক মন্দার পূর্বাভাস লক্ষ করা যাচ্ছে।উন্নত বিশ্বের অর্থনীতির সংকোচন, মূল্যস্ফীতি, সরবরাহ ব্যবস্থায় বিপত্তির ফলে বাংলাদেশের মতোউন্নয়নশীল দেশগুলোও বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে।এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার কোনো কোনো দেশেমূল্যস্ফীতি ৪০-৫০ শতাংশে উঠেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ সামাজিক ওঅর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কঠিন সময় পার করলেও মন্দাসহনানা সংকটে অর্থনীতি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা নেই।কারণ বিগত দুই দশকেরও অধিক সময়ব্যাপীঅর্থনীতির ক্রমবর্ধিত অগ্রগতি দেশকে একটি মৌলভিত্তির ওপর দাঁড় করেছে। বিশেষ করে কৃষি ওশিল্পোৎপাদন, সার্ভিস সেক্টরের বিস্তৃতি এবংজনগণের কর্মসংস্থান বৃদ্ধির ফলে খাদ্যাভাব ওদুর্ভিক্ষাবস্থার সম্ভাবনা কম। অবশ্য অসৎ ব্যবসায়ীদেরমজুদদারি, কালোবাজারি ও মুনাফাখোরি আচরণ,আমদানি-রফতানির আড়ালে মুদ্রা পাচার, ব্যাংকেরঋণখেলাপি, দুর্নীতি ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নাহলে অবস্থা অন্য রকম হতে পারে।

এ মুহূর্তে আমাদের বড় সমস্যা বা চ্যালেঞ্জ হচ্ছে—মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার অস্থিতিশীলতাসহ টাকারঅবমূল্যায়ন, আমদানি বৃদ্ধি ও রফতানি হ্রাসেরকারণে বাণিজ্য ঘাটতি, বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভেরক্রমহ্রাস এবং জ্বালানি সংকটের কারণে বিদ্যুৎউৎপাদন হ্রাস।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, গতআগস্ট-সেপ্টেম্বরের মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশ অতিক্রমকরেছে। কতিপয় থিংকট্যাংকের জরিপ মতে, প্রকৃতমূল্যস্ফীতি ১০-১২ শতাংশ বা তদূর্ধ্ব হতে পারে।বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি ছাড়াও অসৎ ব্যবসায়ীদেরকারসাজিও দেশের মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দিয়েছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধির কারণে একদিকেযেমন অধিক পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করেখাদ্যদ্রব্যসহ উৎপাদনের উপকরণ আমদানি করতেহচ্ছে, অন্যদিকে সংঘবদ্ধ ব্যবসায়ীদের বাজারনিয়ন্ত্রণের ফলে দ্রব্যমূল্য বেড়েই চলেছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে তরল গ্যাস ও জ্বালানি তেলেরমূল্যবৃদ্ধি আমাদের দেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বেশিক্ষতি বয়ে এনেছে। জ্বালানিস্বল্পতার জন্য প্রয়োজনীয়বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে না পারায় কল-কারখানারউৎপাদন অব্যাহত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎসরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না। অধিকাংশ ক্ষুদ্র, মাঝারি ওবড় বড় শিল্প-কারখানা ৪০-৬০ শতাংশক্যাপাসিটিতে চালু রাখা হয়েছে। ফলে উদ্যোক্তারালোকসান গুনছেন, শ্রমিক কাজ হারাচ্ছেন।

বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে অস্থিতিশীলতা, ডলারেরবিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন বাংলাদেশ ব্যাংকেরফরেন কারেন্সি রিজার্ভের ওপর প্রবল চাপ সৃষ্টিকরেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণ প্রায়৮৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যের আমদানির বিপরীতেরফতানি আয় হয়েছে ৫২ বিলিয়ন ডলার। ফলে প্রায়৩১ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে। চলতি২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ১ হাজার৯৩৫ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে। তারবিপরীতে রফতানি হয়েছে ১ হাজার ১৮০ কোটিডলারের পণ্য। ফলে তিন মাসেই বাণিজ্য ঘাটতিদাঁড়িয়েছে ৭৫৫ কোটি ডলার। বাজারে বৈদেশিকমুদ্রার ঘাটতির কারণে বিগত এক বছরে বাংলাদেশব্যাংক প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার বাজারে ছেড়েছে।এতে ৪৮ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ নভেম্বর-’২২-একমে হয়েছে ৩৪ বিলিয়ন ডলার। অবশ্য কেন্দ্রীয়ব্যাংক কর্তৃক প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার রফতানি উন্নয়নতহবিল (ইডিএফ) অন্যত্র সরিয়ে নেয়ায় বর্তমানেব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৬ বিলিয়ন ডলার।বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার খানিকটা বাজারেরওপর ছেড়ে দেয়ায় ডলারের দর এখন ১০৮-১১০টাকা অর্থাৎ এক বছরে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছেপ্রায় ২৫ শতাংশ। বিগত কয়েক মাস ধরে বৈদেশিকমুদ্রা নিয়ে একটি মহল রীতিমতো ব্যবসা করছে।কতিপয় ব্যাংক কর্মকর্তা, পরিচালক, মানি এক্সচেঞ্জব্যবসায়ী এমনকি সাধারণ মানুষও ডলার ক্রয়-পূর্বকধরে রেখে উচ্চমূল্যে বিক্রি করছে। দেশের একশ্রেণীরমানুষ সর্বদাই দেশ ও জনগণের স্বার্থের বিপক্ষে গিয়েব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করে। আবার অনেকে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের আড়ালে ওভার ইনভয়েসিং ওআন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচারকরছে। এ বিষয়টি এখন আর প্রমাণের অপেক্ষা রাখেনা। বর্তমান অর্থবছরে আমেরিকা ও ইউরোপেআমাদের রফতানি দ্রব্যের চাহিদা কমে যাওয়ায়রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধিও গত বছরের তুলনায় কমহচ্ছে। অর্থবছরের বিগত চার মাসের রফতানি আয়েরপ্রবৃদ্ধি মাত্র ৭ শতাংশ, যা গত অর্থবছরের একইসময় ছিল ২২ দশমিক ৬২ শতাংশ।

বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশীদের পাঠানো রেমিট্যান্সবা প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধি গত চার মাসে মাত্র ২শতাংশ। রেমিট্যান্সের জন্য বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকও বাণিজ্যিক ব্যাংক মালিকদের যৌথভাবে নির্ধারিতবিনিময় হার প্রতি মার্কিন ডলারে ১০৭ টাকা অথচডলারের বাজারদর এর চেয়ে বেশি। ফলে ব্যাংকেরপরিবর্তে হুন্ডির মাধ্যমে প্রবাসী আয় পাঠানোরপরিমাণ সাম্প্রতিক সময়ে বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকেররিজার্ভ বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রবাসী আয়ের বিনিময় হারবাজারদরের সঙ্গে সংগতি রেখে বাড়ানোর প্রয়োজনবলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ কমানোর জন্যসরকারের আমদানি নিয়ন্ত্রণ কৌশল গ্রহণের ফলেবিলাস দ্রব্য ও অপেক্ষাকৃত কম প্রয়োজনীয় দ্রব্যআমদানিতে ব্যাংক কর্তৃক এলসি খোলায় বিধিনিষেধরয়েছে। ফলে আমদানি কিছুটা কমেছে, কিন্তুব্যাংকগুলো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির এলসিখুলতেও অনীহা প্রকাশ করছে।

চিনিসহ কতিপয় খাদ্যসামগ্রী এবং জ্বালানি তেলেরএলসি খোলায় গড়িমসি করায় সংকট দেখা দিয়েছে।রফতানি পণ্যের কাঁচামাল আমদানিতে ঋণপত্রখুলতে না পারলে উৎপাদন ও রফতানি বাধাগ্রস্ত হতেবাধ্য।

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় ক্রমান্বয়ে খেলাপি ঋণেরপরিমাণ দিন দিনই বাড়ছে। ব্যবসায় মন্দা বালোকসানের কারণেই যে খেলাপি ঋণ বাড়ছে তা নয়, অনেক বড় বড় ব্যবসায়ী দীর্ঘ সময় ধরে ঋণখেলাপির তালিকায় রয়েছে। এদের অনেকেইইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটিপ্রভাবশালী মহলের উদ্যোগে কয়েক বছর আগে ২শতাংশ অর্থ জমা দিয়ে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করারসুবিধা দেয়া হয়েছিল। গত জুলাই মাসে বাংলাদেশব্যাংক আড়াই থেকে সাড়ে ৪ শতাংশ অর্থ জমা দিয়েখেলাপি ঋণ নিয়মিত করার আরো একটি সুযোগদেয়। ঋণ পরিশোধের সময়ও দুই বছরের স্থলেসর্বোচ্চ আট বছর বৃদ্ধি করা হয়েছে। অনেকঋণগ্রহীতা এসব সুবিধা গ্রহণ করে খেলাপি ঋণনিয়মিত করে ব্যাংক থেকে আরো ঋণ গ্রহণপূর্বকপুনরায় ঋণখেলাপি হয়। কোনো কোনো প্রভাবশালীঋণগ্রহীতার টাকা আদায়ে ব্যাংক কর্মকর্তারা আগ্রহওদেখান না। বাণিজ্যিক ব্যাংকের কোনো কোনোপরিচালকও নামে-বেনামে ঋণ গ্রহণপূর্বক ঋণ ফেরতদিচ্ছেন না। ফলে কতিপয় ব্যাংক বিপর্যয়ের ঝুঁকিওতৈরি হচ্ছে। অভিজ্ঞ মহলের মতে, এসব ইচ্ছাকৃতখেলাপি ঋণ বা নামে-বেনামে গৃহীত ঋণের টাকাআত্মসাত্পূর্বক বিদেশে পাচার করা হয়েছে। পাচারকৃতঅর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রণোদনা ও বিশেষসুবিধা দেয়া সত্ত্বেও এ পর্যন্ত কোনো অর্থ ফেরতআসেনি।

বৈদেশিক মুদ্রার স্বল্পতা দূরীকরণ, ঋণাত্মকআন্তর্জাতিক বাণিজ্যের লেনদেনের ভারসাম্যেসহায়তা, বাজেট ঘাটতি  মেটানো ও কতিপয়গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প ব্যয় অব্যাহত রাখার প্রয়োজনেবাংলাদেশ সরকার আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের কাছেঋণসহায়তা চেয়ে আবেদন করেছে। যদিওআইএমএফ থেকে প্রাপ্ত ঋণের পরিমাণ খুব বেশি নয়(৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) তথাপি আশুঘাটতি মেটানোর প্রয়োজনে এ ঋণ কাজে দেবে। তবেআইএমএফের শর্তাদির বিষয়ে সরকার দরকষাকষিকরছে। ব্যাংক ও আর্থিক সংস্কার, রাজস্ব আয়বাড়ানোর জন্য আধুনিকায়ন, দুর্নীতি রোধ, খেলাপিঋণ আদায়ে পদক্ষেপ গ্রহণ প্রভৃতি শর্ত মানতেকোনো আপত্তি নেই বরং এগুলো যৌক্তিক ও সময়েরদাবি। তবে সার ও গ্যাস-বিদ্যুতে ভর্তুকিসহ সামাজিকসুরক্ষা খাতে খরচ অব্যাহত রাখতে হবে। এরই মধ্যেআইএমএফের ঋণপ্রাপ্তির বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে।আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম কিস্তির ঋণপাওয়া যাবে। আইএমএফের ঋণ প্রদানের সিদ্ধান্তবাংলাদেশের প্রতি তাদের আস্থারই বহিঃপ্রকাশ বলেমনে করা হয়।

উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে অর্থনৈতিক সংকটআরো প্রকট হওয়ার আগেই আমাদের কতিপয়বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়েরাখার প্রতি নজর দিতে হবে। অভ্যন্তরীণ কৃষি ওশিল্পোৎপাদন যাতে ব্যাহত না হয় সেদিকে লক্ষরাখতে হবে। মজুদদারি, কালোবাজারি, অতিমুনাফালোভীদের অপতত্পরতা রোধে সংশ্লিষ্টকর্তৃপক্ষকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ ও নিয়মিত মনিটরিংকরতে হবে। ব্যাংকের আমানতের সুদের হার অনেকআগেই মূল্যস্ফীতির নিচে চলে গেছে। তাছাড়া ঋণেরসুদ কমিয়ে রাখার সুবিধা গ্রহণ করে খেলাপি ঋণবাড়ছে। মূল্যস্ফীতির লাগাম টানার জন্য সুদের হারবৃদ্ধি করা আশু প্রয়োজন।

ঋণখেলাপিদের প্রদত্ত সুবিধা প্রত্যাহারপূর্বকখেলাপি ঋণ আদায়ে আরো কঠোর ও তত্পর হতেহবে। দেখা যায় ব্যাংকগুলো অপেক্ষাকৃত ছোট ছোটঋণ আদায়ে বেশ তত্পর, অথচ চিহ্নিত খেলাপিদেরঋণ আদায়ে তেমন উদ্যোগ নেই। এক্ষেত্রে আইনেরকঠোর প্রয়োগ প্রয়োজন। খেলাপিদের স্বার্থের চেয়েআমানতকারীসহ অন্যান্য গ্রাহকের স্বার্থের দিকেনজর দিতে হবে।

বৈদেশিক মুদ্রাবাজারের অসাধু খেলোয়াড়দেরচিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। দেশের এক্রান্তিলগ্নে বৈদেশিক মুদ্রা ধরে রেখে কতিপয়লোকের ব্যবসা করা মোটেই কাম্য নয়। প্রবাসী আয়বা রেমিট্যান্স বৈধ পথে আনার ব্যাপারে সর্বাত্মকব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কার্ব মার্কেটের দরের সঙ্গেসামঞ্জস্য রেখে প্রবাসী আয়ের বিনিময় হার নির্ধারণহওয়া প্রয়োজন, যাতে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোহয়। তাছাড়া রেমিট্যান্সের সম্ভাবনাময় যেসব দেশেবাংলাদেশীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের এক্সচেঞ্জ হাউজনেই, সেসব দেশে ব্যাংকের এক্সচেঞ্জ হাউজ খোলারপদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। হুন্ডি ব্যবসায়ীদের চিহ্নিতকরার জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে আরো তত্পরও সচেতন হতে হবে।

নানা পন্থায় বিদেশে অর্থ পাচার হচ্ছে। ওভারইনভয়েসিং এবং আন্ডার ইনভয়েসিং রোধে এনবিআরও বাংলাদেশ ব্যাংক যৌথভাবে ব্যবস্থা নিতে পারে।বর্তমানে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস(এমএফএস) বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেওঅর্থ পাচারের কথা শোনা যাচ্ছে। এ বিষয়ে নজরদারিবাড়াতে হবে। অপরাধ প্রমাণিত হলে দৃষ্টান্তমূলকশাস্তি দিতে হবে।

ব্যাংক ব্যবস্থায় বৈদেশিক মুদ্রার সংকট থাকায়অনেক ব্যাংক এলসি খোলায় অনীহা প্রকাশ করছে।সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগেখাদ্যপণ্য, সার ও জ্বালানি আমদানির এলসি খোলানিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছেন। খাদ্যসহনিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মজুদ ও সরবরাহ যাতেবিঘ্নিত না হয় প্রধানমন্ত্রী সেদিকে লক্ষ রাখার কথাবলেছেন।

উপসংহারে বলা যায়, বাংলাদেশের অর্থনৈতিকঅবস্থা ভীত হওয়ার মতো সংকটজনক নয়। আমাদেরমৌলভিত্তি মোটেও দুর্বল হয়নি। উপযুক্ত ব্যবস্থা নিলেরিজার্ভের পরিমাণও বাড়বে। তাছাড়া গত এক বছরেপ্রায় আট-নয় লাখ কর্মী বিদেশে গিয়েছেন। তাদেরপ্রবাসী আয়ও ক্রমান্বয়ে রিজার্ভে যুক্ত হবে।

আমাদের সরকারি ঋণ সব মিলিয়ে জিডিপির প্রায়৪০ শতাংশ। কোনো কোনো দেশে (যেমন আমেরিকা, গ্রেট ব্রিটেন) এ ঋণ জিডিপির ১০০ শতাংশেরওওপর। ভারতের ঋণ ৫০ শতাংশের বেশি। আমাদেরবৈদেশিক ঋণ জিডিপির প্রায় ১৩ শতাংশ। বাংলাদেশকখনো বৈদেশিক ঋণ খেলাপি হয়নি। তবে আগামী২০২৪ সাল থেকে ঋণের কিস্তি পরিশোধের পরিমাণবাড়বে। ঋণ গ্রহণের ও খরচের ক্ষেত্রে মিতব্যয়ী হতেহবে।

সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের পরিধি বাড়িয়েসংকটাপন্ন দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।সর্বক্ষেত্রে সততা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরতে হবে। অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধির জন্য করব্যবস্থা সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা জরুরি। প্রবৃদ্ধিরদিকে না তাকিয়ে কীভাবে সংকট মোকাবেলা করাযায় সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। সর্বোপরি সরকারেরগৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে সময় সময় জনগণকে অবহিতরাখতে হবে। সরকারি ব্যবস্থার পাশাপাশি প্রাইভেটসেক্টরেও শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য ট্রেডবডিগুলোকে সক্রিয় রাখতে হবে। অর্থনৈতিক সংকটমোকাবেলায় অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সবমন্ত্রণালয় ও সংস্থাকে একযোগে কাজ করতে হবে।

মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া: সাবেক সিনিয়র সচিবও এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান, বর্তমানেজার্মানিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত