ঢাকা | ডিসেম্বর ৩০, ২০২৪ - ১১:৪০ অপরাহ্ন

সত্য সুন্দরের সন্ধানে-১৪ ” নিজের সিদ্ধান্তেই নিজের মত করে নিজের পায়ে দাঁড়াও “

  • আপডেট: Friday, November 11, 2022 - 12:35 pm
  • পঠিত হয়েছে: 123 বার
রাজু আহমেদ মোবারক:
1)
“Know the value of time; snatch, seize, and enjoy every moment of it. No idleness, no delay, no procrastination; never put off till tomorrow what you can do today.”– Earl of Chesterfield
আমরা যদি নিজেদের পায়ে জীবনের জন্য দাঁড়াতে চাই তবে আমাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত অতীব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আমাদের জীবনের জন্য যত কর্মকান্ড পরিচালিত করে চলতে চাই না কেন, আমাদের অন্তরে নানান বাসনার মাঝে এই বাসনাও অন্তরীণ হয় যে, পরিতৃপ্তির উচ্ছ্বসিত আবেগে যেন আমাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে আত্নপ্রসাদে জীবন চালিত রাখি। আমরা যখনই নিজেদের সিদ্ধান্তে নিজেদের মত করে নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারব, তখনই নিজেদের জীবনকে নিজেদের মতই হৃদয় দিয়ে অনুভব করার প্রাণ পাব। কারণ আমরা কখনোই অতিরিক্ত চিন্তাক্লিষ্ট মন নিয়ে জীবন চালিত করে জীবনাস্বাদ পেতে পারি না। যে জিনিস তার রুপের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে ঐ জিনিসটির পুরো বৈশিষ্ট্য ঐ জিনিসটির উপর পূর্ণাঙ্গ ভাবে চিত্রায়িত না করা যায়, ঐ জিনিসটির রুপ-রহস্যও মানুষ ঠিক মত বুঝতে পারেন না। তুমি যদি কারো সাথে চোখাচোখি করে চোখ দিয়ে তাদের মনের ভাষা তোমার হৃদয় দ্বারা হৃদয়জ্ঞম করতে চাও, ঐ মানুষদের মনের ভাষাও তোমাকে
বুঝতে হবে। তুমি যদি তাদের মনের ভাষা চোখাচোখির মাধ্যমে ধরতে না পার, তুমি শুধু পরস্পর পরস্পরের মাঝে শুধুই চোখ টিপাটিপির খেলাই দেখবে। মনের ভাষা নয় কারণ মনের ভাষা বুঝার জন্য মনের ভেতরেই ঢুকতে হয় পরিস্কার মন নিয়ে, যেখানে ছল-চাতুরীপণার অভাব থাকবে। আমার-আপনার জীবনে চোখের ভাষার মাধ্যমে যখনই মনের ভাষা হৃদয়জ্ঞম করার যোগ্যতার্জন করে পরিবার ও সমাজ ও রাষ্ট্রে চলার মত মানুষ হব, আমরা অপূর্ব সুন্দরের মনোরম প্রাণের মানুষেও রুপান্তরিত হব পরস্পরে। এই অপরূপ সুন্দরের সমাহার মাত্র
মানুষের যোগ্যতার্জন ও লোভাতুর মানসিকতা থেকে বিরত থাকার মধ্য দিয়েই সম্ভব। যদি আমরা যোগ্য মানুষ হই এবং সেই সাথে নিজেদের সিদ্ধান্তে আমাদের নিজেদের জীবন চালিত করার জন্য নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারি, আমরা মানুষ হিসেবে একে অপরের পরিপূরকও হতে পারি, কিন্তু একে অপরের পরিপূরক হওয়ার জন্য যোগ্যতার্জনের সাথে অন্তরের সৌন্দর্যে মুগ্ধতায় প্রাণ ভরে নিয়ে মানুষের প্রতি প্রবল ভালবাসার উচ্ছ্বাস অন্তরে অন্তর্গত করা-ই চাই। আমি যদি অন্যকে কোন কিছু দিয়ে পুরস্কৃত করতে চাই, তবে আমার আমিত্বটি আমার অন্তরে উদিত করতে হবে আমার নিজের যোগ্যতার্জনের মধ্য দিয়েই। আমি কখনোই অন্য কাউকেই মনুষত্ব্যের বিকাশে মানুষ করতে পারব না, যদি আমি নিজেই আমার অন্তরে মনুষত্ব্যের বিকাশের মানুষ না হই। আমি-আপনি কখনোই অন্য কাউকে উপদেশ দিতে পারব না, যদি সেই উপদেশ দেওয়ার মত যোগ্যতা আমাদের না থাকে। তুমি যাকে উপদেশ দিয়ে তাদের জীবনের গতিশীলতার গতি ত্বরান্বিত চাও, তাদের যোগ্যতার চেয়ে যদি তোমার যোগ্যতা বেশী না থাকে, তাদেরকে উপদেশ দেওয়ার মধ্য দিয়ে নিজেকে অযোগ্যতার অতল গহবরে নিমজ্জিত করার পথে চলে যাওয়া। এটাও সত্যি যে, আমরা যদি যথেষ্ট পরিমাণ দ্বিধান্নিত মানসিকতা অন্তরে উদ্রেক করে চলি যা আমাদের যোগ্যতা শক্তির অভাবের কারণে, তাহলে সর্বদাই সিদ্ধান্তহীনতার মাঝেই আমাদের জীবন চলমান থাকবে। নিজেদের সিদ্ধান্তে নিজেদের জীবন চালিত করে আমাদের নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য যোগ্যতার্জন অনেক বেশিই জরুরী, কিন্তু তুমি যদি তোমার নিজের পায়ে দাঁড়াতে গিয়ে তোমার নিজের সাথে প্রতিযোগিতা না করে, অন্য মানুষকে তোমার প্রতিযোগিতার অংশ মনে কর তাহলে তোমার অন্তরে যে পরশ্রীকাতর মানসিকতা উদ্রেক হবে, তাতে তোমার মনের সৌন্দর্য চিরকালের জন্য বিবর্ণ আকার ধারণ করবে। কারণ, তুমি যখনই তোমার পাশে একজন প্রতিযোগী দাঁড় করে নিজেকে উপযুক্ত মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার মন তৈরী করবে, তখন অপর মানুষকে নীচু চোখে দেখার মন খোঁজার চেষ্টা করবে। তুমি যখনই অন্য মানুষকে নীচু নজরে দেখার মন তৈরী করবে, তখন তোমার নিজের অন্তরের সৌন্দর্য তুমি আর কখনো দেখার সুযোগ পাবে না কারণ তোমার নিজের
অন্তরে আশীর্বাদের স্পর্শের পরিবর্তে কালিমার ছাপ পড়তে শুরু করবে। তুমি যখনই সত্য সুন্দরের পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে নীচুতার চরিত্রে জীবন চালিত রাখার মনস্হির করবে। তুমি আরেকটি বাজে চরিত্রের আবাস দিতে শুরু করলে যা তোমার অন্তরের ক্রোধ। তোমার এই অন্তরের ক্রোধ আর নীচু মানসিকতা তোমাকে সকল দিকে, সকল স্হানে বিদ্ধেষী মানসিকতার মানুষ রুপে প্রকাশ করবে তোমার আচরণে। আমরা আমাদের নিজেদের সিদ্ধান্তে নিজেদের মত করে দাঁড়াতে চাই, কিন্তু মানুষের ক্ষতিসাধণের মধ্য দিয়ে যেন সেই কাজটি না হয়। আমরা যখন নিজেদের সিদ্ধান্তে নিজেদের পায়ে দাঁড়িয়ে জীবন শক্তির বিকাশ ঘটিয়ে পারিবারিক, সামাজিক ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্হানগুলোতে তৃপ্তিবোধে জীবনকে চালিত রাখতে পারি, তখন মনোরম প্রাণে আমাদের জীবনকে অনুভবও করতে পারি। আমাদের জীবন যদি শৃঙ্খলিত ও নিয়ন্ত্রিত জীবন না হয়, আমরা কখনোই তৃপ্তির নিশ্বাস ফেলার পর্যন্ত উপযুক্ত সময়টুকুও পাব না।
2)
“Progress always involves risk; you can not steal second base and keep your foot on first.”– Frederick Wilcox
আমরা যেন আমাদের জীবনকে হৃদয় দিয়ে অনুভব করার জন্য সত্যাশ্রয়ী মানুষ হয়ে সত্য সুন্দরের সন্ধানে থেকে নিজেদের পায়ে দাঁড়িয়ে পুলকিত প্রাণের জীবন তৈরী করি। যাতে অন্য মানুষদের অপমান ও অনিষ্ট করে না চলি। আপনি যখনই পুলকিত ও হৃদয়ানুভূতিতে অন্তরের সৌন্দর্যে তৃপ্তিবোধের মানুষ হবেন, আপনি কখনোই অন্য মানুষের ক্ষতিসাধণ করে আপনার নিজের জীবন তৈরীর করার চেষ্টাই করবেন না কারণ আপনার নিজের পুলকিত প্রাণের অপমান আপনি কখনোই করতে পারবেন না আপনার সুন্দর প্রাণের
তৃপ্তিবোধের অনুভবের কারণে। তুমি তোমার নিজের সিদ্ধান্তে নিজের মতো করে নিজের পায়ে দাঁড়াও তবে চলার পথে অন্যের পা ভেঙ্গে নয়। বেলাশেষে যেন তোমার সমস্ত অর্জন নষ্ট হয়ে কালিমার লেপন করে  কলংকের বোঝা নিয়ে মরতে না হয়। বিভিন্ন চিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে সমস্ত বৈশিষ্ট্যটি রংতুলিতে তুলে ধরে মানুষের চোখকে দৃষ্টিনন্দিত করে পুরস্কৃত হয়ে থাকেন চিত্রকরেরা। আমরা মানুষ হিসেবেও যদি আমাদের অন্তরে দৃষ্টিনন্দিত মানুষ না হতে পারি, আমরা কখনোই সঠিক দৃষ্টিতে
মানুষের দৃষ্টিগোছরেও  আসতে পারি না। মানুষ হিসেবেই আমরা আমাদের অন্তরের চরিত্রে সুন্দর হতে চাই। সত্য সুন্দরের সন্ধানের স্বরূপ নিয়ে যখন আমাদের হৃদয়ের সৌন্দর্যে উপযুক্ত মানুষ হওয়ার গতিশীলতার গতি অন্তরের শক্তির সাথে মিলিত করতে সক্ষম হব, আমরা কখনোই শ্বাসরোধী ও অন্তরে আকর্ষণহীন মানুষ হব না কারণ আমাদের বিবেকের রাস্তা কর্দমাক্ত রাস্তার মত নয়। তুমি যখনই কর্দমাক্ত রাস্তায় দিয়ে হেঁটে যাবে, আরো দশটি মানুষকে তুমি
কর্দমাক্ত করেই যাবে তুমি তোমার সমস্ত শরীরেই কাদা। আমরা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হই বা সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হয় না কেন, রাজনৈতিক মাঠের যত বড় নেতাই হই না কেন, উচ্চ পদের প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকি না কেন, আমরা যেন রাস্তার আবর্জনার মত কর্দমাক্ত মানুষ না হই। তুমি যদি রাস্তা কর্দমাক্ত হওয়ার এই নোংরা উৎস খোঁজে না পাও, তুমি কখনোই কর্দমাক্ত রাস্তা পরিষ্কার করে মানুষের হাঁটার উপযোগী রাস্তা তৈরি করতে পারবে না। আমরা যত কিছুই বলি না কেন পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের মানুষের কল্যাণ সাধনের জন্য কিন্তু আমাদের অন্তরের কর্দমাক্ত বা আবর্জনা যা দূষিত হয়ে আছে আমাদের অন্তরে, তা আমাদের অন্তর থেকে বের না করা পর্যন্ত আমাদের অন্তরের চরিত্রে সুন্দরের চিত্র প্রদর্শন সম্ভব নয়। আমরা যদি এই পৃথিবীর মানুষের জন্য মহান কিছু করতেই চাই তবে যেন অন্তরের কর্দমাক্ত-ময়লা দূর করে এই একই অন্তরকে চিত্র প্রদর্শনীর মত চিত্রায়িত করে রাখি দৃষ্টিনন্দিত করে মানুষের কাছেও। আমরা যদি মানুষের কাছে আমাদের অন্তরের কর্দমাক্ত ময়লা বিদূরিত করে দৃষ্টিনন্দিত করে চোখে পড়ার মত চরিত্র গঠন করে সমাদৃত হতে চাই, তবে আমরা যেন আমাদের নিজেদের হৃদয়ের স্পর্শের অনুভূতির মাঝে নিজেকে অন্তরীণ করে রাখি। মানুষ যাতে আমাদের কৃতকর্মে মুগ্ধ হয়ে আমাদের প্রতি মুগ্ধিত প্রাণের মানুষ হয়ে সুন্দর সম্পর্ক স্থাপিত করে মজবুত মনের মানুষ হয়। আমাদের লোভ-লালসার মোহের কারণে মজবুত মনের মানুষ হিসেবে ঠেকসই হয়েও থাকতে পারি না।
আমরা যেন মজবুত মনের মানুষ হই যা আমাদের চরিত্রের মূল সম্পদ।
তুমি যদি সত্য সুন্দরের সন্ধানের মধ্য দিয়ে তোমার পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের মানুষের কাছে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে কল্যাণব্রতী মানুষ হও,
মানুষ তোমার পাশে দাঁড়িয়ে ব্যস্তপ্রাণে হলেও ছবি তোলে চিরকালের জন্য মনের এলবামে রাখার জন্য মন তৈরী করবে। নিজেদের মত করে নিজেদের সিদ্ধান্তে জীবন চালিত করে নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে গিয়ে যেন কারণে-অকারণে যাতে আমাদের চরিত্র বদলে সমাজ ও রাষ্ট্রের
মানুষের ক্ষতিসাধণ না হয়। আমরা নিজেদের সিদ্ধান্তে নিজেদের মত করে নিজেদের ইচ্ছামত আমাদের জীবন চালাতে চাই উপযুক্ত মানুষ হিসেবে। যেখানে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র
এমন কি পৃথিবীর মানুষের কাছেও আমাদের কৃতকর্মের মহত্বের দ্বারা সমাদৃত হতে চাই। সকল দিকে, সকল সমাজে, সকল দেশে উপযুক্ত ও যোগ্য মানুষ হওয়ার জন্য উপযুক্ত কাজের ধারাবাহিক ধারার মধ্যে থেকেই আমাদের চিন্তাশক্তির অনুভূতির শক্তিকে সমৃদ্ধ করেই সামনে যেতে হয়, কিন্তু এর জন্যও তো নিত্যপ্রয়োজনীয় কর্মে ব্যাপৃত থাকতে হয়। একটি জিনিস স্বতঃসিদ্ধ ভাবেই আমাদের মনে অন্তরিত করে চলা বেশিই উচিত যে, আমরা সন্মানিত মানুষ হিসেবে নানান অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতায় যেমন অভিনন্দিত হয়ে থাকি ঠিক তেমনই ভাবে আমাদের নিজেদের পায়ে মাথা উঁচু করে বাঁচার জন্য নিজেই নিজেদের অন্তরে অভিনন্দিত হয়ে মনকে সৌন্দর্যের সমারোহে পুলকিত রাখতে হয়। আমরা আমাদের মনকে কষ্টে বা খারাপ রেখে কোন ভালো কাজ করার মন আমাদের নিজেদের অন্তরেই পাই না। এটাও সত্য যে, কোন বড় অর্জনে ত্যাগটাই বেশি। সহজ জায়গায় থেকে বড় কিছু অর্জন সহজ নয়। আমরা যেন কঠিনের মাঝে গিয়ে কঠিন কাজটি করেই আমাদের জীবনকে কিছুটা হলেও সহজ করে নেই। যত বেশিই আমাদের জীবন সহজ জায়গাতে চলে যাবে গুরুত্বপূর্ণ কাজের অভাবে, আগামীকাল নিশ্চয়ই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে অপেক্ষাকৃত কঠিন কাজ ও জীবন।
লেখক: কলামিস্ট,গবেষক ও সমাজ বিশ্লেষক।