শনির আখড়া পলাশপুরে নকশাবহির্ভূত বহুতল ভবন নির্মাণ ও অনিয়ম
টাচ নিউজ ডেস্ক:
#নির্মাণাধীন ভবন থেকে নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু
#মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে উক্ত ঘটনা দামাচাপা
#ভবনের আবশ্যিক উন্মুক্ত স্থান না ছেড়ে বিল্ডিং নির্মাণ
#বিধিমালা না মেনে ভবন নির্মাণ করলে ৭ বছর কারাদন্ড
জসিম মেহেদী ঃ রাজউকের নিয়ম না মেনে, বৈধ
কাগজপত্র ছাড়া রাজধানীর কদমতলী থানাধীন ৬০ নং ওয়ার্ড
৬৬/১৯ডি,এস,সি,সি পলাশপুর গ্যাসরোড দনিয়া
এলাকায় নকশাবহির্ভূত ১০ তলা ভবন নির্মাণ করছে
বুর্জ নিয়ামত ডেভলপার কোম্পানি।
গত ২৮ অক্টোবার শক্রবার সকাল ১০টার সময় বুর্জ
নিয়ামত নামে এই বহুতল নির্মাণাধীন ভবন থেকে
নির্মাণ শ্রমিক ও নির্মাণ সামগ্রী পড়ে দুর্ঘটনাও
ঘটে। এতে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। এ ঘটনায়
একজনের মৃত্যু হয়। তার নাম সজিব(২৬), গ্রামের বাড়ী
বেতাগী ইউনিয়ন, পটুয়াখালী। মোটা অংকের টাকার
বিনিময়ে উক্ত ঘটনা দামাচাপা দিয়ে ময়নাতদন্ত ছাড়াই
লাশ দাফন করা হয় বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
এ-ই বিষয়ে বর্জ নিয়ামত ডেভলপার কোম্পানির
চেয়ারম্যান আব্দুর রব এর কাছে জানতে চাইলে তিনি
বলেন,৬তলায় ছাঁদে নিচ থেকে উপরে রড উঠতে গিয়ে
মেশিনসহ একজন শ্রমিক নিচে পড়ে মারা যায়। তবে
এটা মিমাংসা হয়ে গেছে। রাজউকের অনুমোদন এবং
নিয়ম নিতি মেনে ভবন নির্মাণ করছেন কিনা জানাতে
চাইলে তিনি বলেন, রাজউকের অনুমোদন আছে। ১০ তলা
ভবন করতে সামনে যে পরিমান রাস্তা প্রয়োজন তাতো
নেই। রাজউক কি ভাবে অনুমোদন দিলো? জানতে চাইলে
তিনি এবিষয়ে বলেন, রাজউক না যেনেই কি অনুমোদন
দিয়েছে। তিনি সর্বশেষ শেষ বলেন, আপনার আরো কোন
কিছু জানতে চাইলে, যুগান্তরের সাংবাদিক তাঁর সাথে
কথা বলেন।
সরেজমিনে দেখা যায় বুর্জ নিয়ামত ডেভলপার
কোম্পানির নির্মাণাধীন ভবনের বিশেষ করে আবশ্যিক
উন্মুক্ত স্থান না ছেড়ে বিল্ডিং নির্মাণ করে ঝুকিপূর্ণ
করছে পুরো এলাকা। একপ্রকার বুর্জ নিয়ামত ডেভলপার
কোম্পানির কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ।
এলাকাবসীর ক্ষোভ থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে ভয়ে মুখ খুলতে
নারাজ। আবার অধিকাংশ বাড়ির মালিক রাজউকের
নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে যেমন খুশি বাড়ী নির্মাণ
করেছে। তাই যার ক্ষমতা রয়েছে সেই নিয়ম ভাঙ্গছে। আর
তৈরি হচ্ছে মরণফাঁদ। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের
উদাসীনতা ও রাজউকের কিছু অসাধু কর্মকর্তার
যোগসাজশে আইনকে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে বিল্ডিং
কোড না মেনে ভবন নিমার্ণ করছে।
তথ্যমতে,৮ তলা উচ্চতার বিল্ডিং নির্মাণের ক্ষেত্রে ইমারতের
সামনে কমপক্ষে ২০ ফুট এবং ৬ তলা উচ্চতার বিল্ডিং
নির্মাণের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ১৫ ফুট প্রশন্ত রাস্তা থাকা
বাধ্যতামূলক। এ বিধিমালার ৮ নং বিধির ৫ উপবিধি
অনুযায়ী উল্লেখিত ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে নিকটাবর্তী
সড়কের কেন্দ্র হতে কমপক্ষে ৪.৫ মিটার অথবা সড়ক
সংলগ্ন ইটের সীমানা থেকে ১.৫ মিটার দূরে ইমারত
নির্মাণ করতে হবে। এ ছাড়া সর্বোচ্চ ৭ তলা ভবন
নির্মাণের সময় ফায়ার সার্ভিস, পরিবেশ অধিদপ্তর,
গ্যাস, ওয়াসা ও বিদ্যুৎ বিভাগের ছাড়পত্র নেওয়া
বাধ্যতামূলক।
এছাড়া, বিধিমালা না মেনে ভবন নির্মাণ করলে ৭ বছর
কারাদন্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ডে
দন্ডিত করার বিধান রয়েছে। এরকম নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা
না করে রাজউকের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের
ম্যানেজ করে বর্তমানে রায়েরবাগ মেরাজনগর
মোহাম্মদবাগ এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মতো
নকশাবহির্ভূত বহুতল ভবন নির্মাণ করছে প্রভাবশালীরা।
কদমতলীথানাধীন এলাকায় অনিয়ম যেন নিয়মে পরিনত
হয়েছে। বহুতল ভবন মালিকরা দাপটের সাথে পাল্লা দিয়ে কে
কতো নিয়ম ভেঙ্গে দূরত্ব ভবন নির্মাণ করতে পারে সেই
প্রতিযোগিতা চলছে।
বহুতল ভবন নির্মাণের আইন বহুতল ভবন তৈরি করার আগে
বাংলাদেশ ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ৯৬ এর ১২ নং ধারার
(১) উপধারা অনুযায়ী সাততলার চেয়ে উঁচু ভবনের ক্ষেত্রে
আগুন শনাক্তকরণ যন্ত্র, ধোঁয়া শনাক্তকরণ যন্ত্র,পানি
ছিটানোর ব্যবস্থা ও কার্বন ডাই-অক্সাইড
নির্গমনব্যবস্থা থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু নগরীর বেশির
ভাগ বহুতল ভবন নির্মাণে এসবের তোয়াক্কা করা হচ্ছে না।
এমনকি পাঁচ তলার জায়গায় আট তলা কিংবা আট তলার
জায়গায় বানানো হয় এগারো-বারো তলার ভবন। ফলে ভূমি
ধ্বসের ঝুঁকি বাড়ছে। ভবনে ফাটল বা হেলে পড়ার
বিষয়টি খুবই মারাত্মক।
এই বিষযয়ে সচেতন মহল ও এলাকাবাসী দৃষ্টি দেওয়ার জন্য
বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য ঃ সরেজমিনে এই প্রতিবেদক তথ্য সংগ্রহ করতে
গেলে এলাকাবাসীর কাছে জানতে পারেন আব্দুর রবের
সাথে এক সাংবাদিকের বন্ধুত্ব সম্পর্ক রয়েছে। সেই
সাংবাদিক এই প্রতিবেদককে চাঁদাবাজি মামলা দিয়ে
জেলে ভরে দিবেন বলে ভয় দেখান।