সকলকে সাথে নিয়ে উন্নত দেশ গড়ে তুলতে চাই
সাদ এরশাদ এমপি:
আমি জানি, অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়াতে আমাকে নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করেন। আমি কিছু মনে করি না সব সময়েই সব জায়গায় আমি আশা ও ভালোবাসার আনন্দ খুঁজে পাই। আমার বাবার অনেক আশা ছিলো এই দেশটাকে নতুন করে গড়ে তুলবে। এখন আমি, আমার বাবার আশা পুরন করতে চাই। শুধু আমি নই, আমার মতো যারা ১৯৭১ ও ১৯৯০ এর সেই ভয়াবহ সময় পার করে এসেছে তাদের সবাই এই দেশ নিয়ে আশাবাদী। বিনা অপরাধে আমি শিশু কালে প্রায় ৩ বছর জেল খেটেছি কোন দুঃখ নেই। আমি মানবতার সবচেয়ে নৃশংস রূপটি দেখেছি একই সাথে এই দেশের মানুষের সাহস শক্তি এবং আত্মত্যাগের রূপটিও দেখে এসেছি। আমরা কীভাবে এই দেশ নিয়ে আশাবাদী না হয়ে পারবো ?
আমি জানি এখনকার খবরের কাগজ দেখলে যে কেউ এক ধরনের হতাশা অনুভব করে। খবরের কাগজ খুললেই ধর্ষণ, গণধর্ষণ আর শিশু ধর্ষণের। মনে হচ্ছে সকলেই বুঝি একজনের সঙ্গে আরেকজন এ ব্যাপারে প্রতিযোগিতায় নেমেছে। কিছু দিন আগেও ডেঙ্গু’র খবর এসেছে। সারা জীবন দেখে এসেছি বেঁচে থাকতে হলে মানুষের রোগ-শোক হয়, কিছু দিন ভুগে আবার ভালো হয়ে যায়। এখন কথা নেই বার্তা নেই, দুধের শিশুটি থেকে বড় মানুষ ডেঙ্গুতে হঠাৎ করে মারা যাচ্ছে! কী ভয়ঙ্কর একটা পরিবেশ। ঈদের আগে আর পরে গাড়ি এক্সিডেন্টের খবর, এতো অল্প সময়ে সড়ক দুর্ঘটনায় এতো মানুষ মারা যেতে পারে, নিজের চোখে দেখেও বিশ্বাস হয় না। ঈদের সময় হঠাৎ দেখি চামড়া কেলেঙ্কারির খবর, রাতারাতি বিচিত্র সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে চামড়া ব্যবসায়ীদের পথে বসিয়ে দিচ্ছে। তার আগে ছিল বন্যার খবর। মাঝখানে দুধ নিয়ে বিশাল হইচই– গবেষকরা দুধে অ্যান্টিবায়োটিক পেয়েছেন, মুখ ফুটে সেই কথাটি বলামাত্র মনে হলো সরকারি কর্মকর্তারা গবেষকদের গলা চেপে ধরবেন। একটা সমস্যাকে অস্বীকার করলেই কী সমস্যাটা চলে যায় ? এমনিতে সারা বছরই রোহিঙ্গাদের নিয়ে খবর থাকে, ইয়াবার বড় বড় চালান নিয়ে খবর থাকে, ক্রসফায়ারে বিনা বিচারে মানুষ মেরে ফেলার খবর থাকে। বাংলাদেশ বিমানে করে যাত্রী আনা নেওয়ার খবরের বদলে সোনা আনা নেওয়ার খবর অনেক বেশি থাকে। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপার ছিল ছেলেধরা সন্দেহে একেবারে নিরীহ নারী-পুরুষকে নির্মমভাবে পিটিয়ে মেরে ফেলা।
মাঝে মধ্যে আমার মনে হয় আমরা বুঝি সভ্য মানুষ নই ? আমরা বুঝি মধ্যযুগের বর্বর মানুষ! কাজেই খবরে কাগজ পড়ে কারও যদি মন খারাপ হয়, কেউ যদি হতাশা অনুভব করেন, আমি তো তাকে দোষ দিতে পারি না। আমি এর মধ্যেও নিজের আশাবাদকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করি। দাঁতে দাঁত চেপে খবরগুলো পড়ি, তারপর নিজেকে বোঝাই পৃথিবীর সব জাতি কোনও না কোনও সময় এই প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে গিয়েছে, আমরাও যাচ্ছি। একসময় আমরা শক্ত অর্থনীতির ভিত্তির ওপরে দাঁড়াবো। এখনই আমাদের ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরা সমানতালে লেখাপড়া করছে, সেই লেখাপড়ার মান আরও ভালো হবে। দেশের ছেলেমেয়েরা আধুনিক মানুষ হিসেবে বড় হবে। সরকার ঠিকভাবে চলবে, বেআইনি শাসন দূর হবে, দুর্নীতি কমে আসবে, বায়ুদূষণ বন্ধ হবে, খাবারে ভেজাল থাকবে না, নদীগুলো মুক্ত হবে, সবুজ দেশটি আরও সবুজ হয়ে উঠবে। আমি এসব নিয়ে আশা করতে একটুও ভয় পাই না। আশাবাদী হয়ে বেঁচে থাকার একটা অনেক বড় সুবিধা আছে, ভয়ঙ্কর দুঃসময়টিও সাহস নিয়ে পার করে দেওয়া যায়! বিষয়টি জানি, কারণ আমি নিজেও এমন সময় পার করেছি।
মানুষ খুবই বিচিত্র একটি প্রাণী, একজন মানুষ হয়তো নিজের জীবন নিয়েই হিমশিম খাচ্ছেন, তারপরেও তিনি পুরো দেশ নিয়ে চিন্তাভাবনা করেন। শুধু দেশ নয়, পৃথিবী নিয়ে চিন্তাভাবনা করেন। কেউ কেউ বিশ্বব্রহ্মাণ্ড নিয়ে মাথা ঘামান। যেকোনও মানুষের সঙ্গে কথা বললে দেখা যাবে তার দেশ নিয়ে কিছু একটা পরিকল্পনা আছে। দেশটাকে কীভাবে ঠিক করা যাবে সেটা নিয়ে তার নিজের চিন্তাভাবনা আছে। আমিও চিন্তা করি। তবে আমার ধারণা, অন্যরা যেরকম অল্পতে কাতর হয়ে যান আমি তত সহজে কাতর হই না। আশাবাদী হওয়ার কারণে যেটুকু পেয়েছি তাতেই মহাখুশি হয়ে যাই, যেটুকু পাইনি তার জন্যে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করি। ভবিষ্যতে পেয়ে যাবো সেটা আশা করে বসে থাকি।
আমার বাবা কি দিয়েছে ? বা আমি কী পেয়েছি ? যাদের জন্মই হয়েছে বাংলাদেশে তারা বুঝবে না কিংবা অনুভব করবে না। কিন্তু আমাদের প্রজন্ম জানে যে আমরা বাংলাদেশটি পেয়েছি। যদি না পেতাম তাহলে আমাদের কী অবস্থা হতো আমি কল্পনাও করতে পারি না। দেশ নিয়ে আমার কী আরও কিছু চাওয়ার আছে ? যখন এটা নিয়ে চিন্তা করি তখন মনে হয় আমি দেশ থেকে দুটি জিনিস চাই, তারপরে আর কিছু চাই না।
আমি যে দুটি বিষয় চাই তার একটি হচ্ছে রাজনৈতিক দল গুলো ভাই ও বন্ধুর মত হওয়া, কোন ঝগড়া, হিংসা, মারামারি থাকবে না। দ্বিতীয় চাওয়াটি হচ্ছে, আবদুল হামিদ খান ভাসানী, আবুল কাশেম ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সহ আরো অনেকেই যারা দেশের জন্য কাজ করেছেন তাদেরকে নিয়ে কোন কূট নীতি চলবে না। এই কূট নীতি নিয়েই দেশে হয় হিংসা, প্রতিহিংসা, মারামারি। তার জন্য এই অশুভ কূট নীতি বন্ধ করতে হব, এই দুইটি কাজ সঠিক ভাবে বাস্তবায়ন হলে দেশে শান্তি চলে আসবে, ইনশাআল্লাহ।
আমার এই দুটি মোটেও বেশি চাওয়া নয়—দু’টি খুবই ‘একটুখানি’ মাত্র চাওয়া। আমি চাওয়া দুটিকে আইন করাতে চাই না, জোর করেও করাতে চাই না। আমি চাই এটা এই দেশের মানুষের হৃদয় থেকে আসুক।
ধন্যবাদ সকলকে।
লেখকঃ মাননীয় সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক