ঢাকা | ডিসেম্বর ২২, ২০২৪ - ১২:০৭ অপরাহ্ন

শিরোনাম

সত্য সুন্দরের সন্ধানে -১২ “জীবনে এমন কিছু কর যেন অন্তরে তীব্র ভাললাগা তৈরি হয়”

  • আপডেট: Thursday, October 27, 2022 - 10:09 am
  • পঠিত হয়েছে: 131 বার

রাজু আহমেদ মোবারক:

3)
“Give more than you receive.That is where things get

exciting.”– Paul J.Meyer
তোমার-আমার হৃদয় যখনই সৌন্দর্যের স্বরূপ নিয়ে মানুষের মধ্যে বাস করে। আমরা কখনোই নিজেদেরকে মানুষের কাছে ছোট করে অন্তরের সুন্দরের কারুকার্যকে অস্পষ্ট করতে চাই না। মানুষের অন্তরের সৌন্দর্যের কারুকার্যই মানুষকে দৃষ্টিনন্দিত মানুষে রুপান্তরিত করে রাখে তাদের নিজেদের অন্তরেই। আমরা যদি আমাদের নিজেদের অন্তরে মুগ্ধ প্রাণের মানুষ না হই, আমরা কখনোই অন্য মানুষের সাথে প্রাণের
সম্পর্কে অন্তরঙ্গ মানুষ নয়। আমরা যেন সত্য সুন্দরের সন্ধানে থেকে ভালো কিছু করে অন্তরে তীব্র ভাললাগা অনুভব করে চলি পরস্পর পরস্পরে। আমাদের জীবনকে উপযুক্ত রুপে জীবনের মত চালনা করার জন্য এমন কিছুরই সন্ধান যেন করি যে কাজে আমাদের আগ্রহ যেমন থাকবে এবং একই সাথে সেই কাজে মনোযোগও বেশি থাকবে।
কিন্তু আমাদের অন্তরে যখনই তীব্র ভাললাগার আখাংকা সৃষ্টি হবে
কোন একটা নির্দিষ্ট কিছুর জন্য তখনই ঐ কাজে আমরা মনোযোগ আকর্ষণ করি। যে জিনিস আমরা খুঁজি আমাদের জীবনের জন্য তা যদি আমাদের অন্তরে জন্ম গ্রহণ না করে, আমাদের চেতনার শক্তিতে তা কখনোই আমরা বাস্তবে রূপ দিতে পারি না। যে কোন সৃষ্টিশীল সৃষ্টিরই দুইবার জন্মের প্রয়োজন হয়। প্রথম বার এই সৃষ্টির জন্ম মানুষের মস্তিষ্কে। দ্বিতীয় জন্ম যখনই পৃথিবীর মানুষের দৃষ্টিতে আসে। যে কোন সৃষ্টিশীলতাই মানুষের অন্তরের তীব্র ভাললাগা থেকেই সৃষ্টি হয়। এই ভাললাগাও মূলত আমাদের আগ্রহের চেতনা শক্তি থেকেই সৃষ্টি হয়। এই আগ্রহের চেতনা শক্তি যেন মানুষের উপর আক্রমণ না করে বসে অতিরিক্ত জিনিস অর্জন করার জন্য। কখনো কখনো আমরা আমাদের জীবনের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি জীবনকে মূল্যবোধ ও শ্রদ্ধার সৌন্দর্যে ফুটিয়ে তোলা না করার কারণে। ফলে একটা সময় দেখা যায় যে, অন্তরের ভেতরে যে কদাচার অংকুরিত হয়ে পড়ে, তা অন্তর থেকে দূরে সরাতে গিয়েও গ্লানির সীমা থাকে না। তখন এই কদাচার অন্তরকে সৌন্দর্যের রুপের ধারায় শাণিত করেও নিজেদের
অন্তরের সেবা দিয়েও মনকে মনের মত করে সাজানো যায় না। কারণ মন যে মনের স্হানে নেই। যে মন একবার চরিত্রহীনতার মাঝে অন্তরীণ হতে শুরু করে, তাকে নিজে বিচার করেও শাস্তির আওতায় আনা যায়

না। তাই আমরা সবাই যেন আমাদের মনের যত্ন করি যাতে নষ্টতার চরিত্রে আরোহণ না করে। আমরা মানুষ হিসেবে যেন ভালো কাজ করার আগ্রহে নিজেদেরকে নিযুক্ত রাখি। কারণ এই আগ্রহের এবং উপযুক্ত কাজ খুঁজতে গিয়ে পরের ধন-সম্পদের উপর যেন লোভ লালসার মন তৈরি না হয়। আমরা যখনই মানুষের ক্ষতিসাধণ করে আমাদের নিজেদের স্বপ্নের জীবন পূরণের প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করে একটি নির্দিষ্ট দিকে চলে যাই, যেখানে লুটেরাদের বাসই বেশি থাকে। কারণ সব লুটেরার দল এক দিকেই থাকে। আমরা আমাদের জীবনের প্রতিযোগিতায় কোথায় যাচ্ছি তা যেন সাবধানে অনুভব করে চলি।এই লুটেরাদের পরিমন্ডল থেকে সহজেই জীবনকে আলাদা করে সত্য সুন্দরের সন্ধানে যে সুন্দর পছন্দের জীবন রয়েছে সহজেই সেই জীবনে ফেরত আসা যায় না। তোমাদের এই অর্জিত যত সম্পদ রয়েছে সেখানে তো মানুষের অবৈধ জায়গা দখলের তোমাদের নিজেদের তৈরি অট্টালিকা রয়েছে। দূর্নীতিযুক্ত নানা অর্থ-সম্পদ রয়েছে। সুতরাং তোমরা চাইলেও আর ভালো মানুষ হতে পারবে না। এই অবৈধ ও সমস্ত অপরাধ কর্মের সকল কিছু রেখেই তোমাদেরকে মরতে হবে। আমরা যেন প্রতিদিন ভালো কাজ করেই মরি। আমাদের জীবনে কিছু কিছু ভুলও অপরাধযুক্ত মন্দ কাজে নিজেদের প্রতি ধিক্কার দেওয়াটা যেন শিখি। কারণ আমাদের ভুল ও অপরাধমূলক কাজে ধিক্কা দিবার মনের শক্তি না পাই, তা যে আমাদের জীবনের জন্য মৃত্যুর পূর্বে মহা ভুল হয়ে যাবে। আমাদের জীবনকে আমাদের মনই পরিচালিত করে আমরা কোন প্রকৃতির মানুষ। আমাদের এই মনের উপর যদি অপরাধ কর্মের জন্য ধিক্কার দেওয়ার অভ্যেস এই অন্তর থেকেই দিতে শুরু করি তাহলে কিছুটা হলেও মনের গতি বদল হয়ে ভালো মানুষ হয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে পারি। আমরা যেন আমাদের মৃত্যুর আগে অসাধারণ মানুষ হয়ে মরি। বড় পাপ যেন সাথে নিয়ে না মরি। আমরা যখনই সত্য সুন্দরের সন্ধানে সত্যাশ্রিত মানুষ হয়ে আমাদের নিজেদের জীবন পরিপূর্ণ সুন্দরের স্বরূপের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে চলব, বড় পাপ থেকে দূরেও থাকতে পারব। ফলে পূণ্যের মাত্রাই আমাদের জীবনের সৌন্দর্যের রুপের সাথে সংযোজিত হবে। কারণ পাপ করে পূণ্যমুখী হওয়া যায় না। আর তুমি পূণ্যমুখী মানুষ হলে পাপও তোমার পরশে

আসবে না। তুমি যদি তোমার নিজের কাজের উপর সন্তুষ্ট না থাক অন্য মানুষকেও মনে হিংসা উদ্রেক করে সংহার করতে উদ্বত হবে। কারণ মানুষ যখনই অত্যন্ত স্হুল বুদ্ধি সম্পন্ন চিন্তার মানুষে পরিণত হয়ে যায়, তারা যুক্তি-বিশ্বাস এই সমস্ত কোন মূল্যবান জিনিস আমলে নিতেই চায় না। ফলে জীবনে কোন কিছুই ভালো মনে করে করার জন্য অন্তরে তীব্র ভালোলাগা অনুভব করেন না। আমরা এই সমাজ ও রাষ্ট্রে চলতে গিয়ে সামাজিক, রাজনৈতিক এমন কি ধর্মীয়ই হোক তা যদি গোড়ামীর চরিত্রে রুপ দান করে কেবলই মানুষের ক্ষতিসাধণ হয় এবং তা যদি আমাদের গর্বের বিষয় হিসেবে অন্তরে স্হান দিয়ে ফেলি তা যে গর্ব করার জিনিস নয়, তা যে কেবলই লজ্জাকর। তা যে কেবলই বর্বরতা।
আমরা সত্য সুন্দরের সন্ধানে থেকে যে কোন লজ্জাকর ও বর্বরতা থেকে যেন দূরে থাকি। কারণ এই বর্বরতা ও লজ্জাকর কাজ সভ্যতা নয়।
4)
” The difference between greatness and mediocrity is often how an individual views a mistake.”– Nelson Boswell
তোমার নিজের প্রতি তোমার হৃদয় যদি ভালোবাসায় আচ্ছন্ন না থাকে, কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজই তোমাকে তোমার অন্তরে তীব্র ভালোলাগা তৈরি করবে না। আর এই তীব্র ভালোলাগা যদি অন্তরে উদিত না হয় মানুষ কখনোই জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মানুষ হওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজের সন্ধান করেন না। যে কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার সময় সকলেরই কম বেশি কাজে ভুল হয়। তোমার কোন কাজে যদি তুমি কোন ভুলই না কর, তোমার সেই কাজে যথেষ্ট পরিমাণে মনোযোগের অভাব ছিল। মানুষ যখনই কোন কাজ করেন তখনই ভুল হয়। একমাত্র আমাদের নিজেদের কাজ এবং এই কাজে যে কখনো কখনো কিছু কিছু ভুল হয়, সেইগুলোর সমষ্টিই আমাদের কাজের উন্নতি। আমাদের কাজে ভুল হয়ে যাবে এই মনে করে যেন আমরা কোন কাজ করা থেকে যেন বিরত হয়ে না পড়ি। আমাদের চিন্তা ও কাজের ভুল আমাদেরকে জীবনকে যে রুপে, যে প্রক্রিয়ায় গড়ার রুপ দেয়, ভুল না হওয়া জীবনে সেই রকম রুপের ধরণ হয় না। কারণ আমাদের জীবনে সব চাইতে উন্নত শিক্ষাই হচ্ছে নিজেদের ভুলের কাজ থেকে শিক্ষা নেওয়া। তুমি ঘরে বসে আছ, কোন কিছুই তুমি এই মুহূর্তে করছ না। সুতরাং তোমার কর্মের নিষ্কৃয়তার কারণে ভুল তোমার হবে না। কারণ তুমি তোমার

জীবনের জন্য কাজে নেই। কিন্তু তুমি কোন কিছু না করে যে ঘরে বসে রয়েছ সেটাই তোমার জীবনের বড় ভুল। তুমি তোমার নিজের জীবনের সুন্দর সময়ের অপচয় করছ। সময়ের দুইটি চরিত্র আছে। এই সময়ই তোমার জীবন তৈরি করবে। না হয় এই সময়ই তোমার জীবন ভেঙ্গে দিবে। আমাদের জীবনের অগ্রগামীতার জন্য সময়ের মূল্য অপরিসীম।
কারণ যে কোন সৃষ্টিশীলতার মাঝেই অগ্রগামীতাও থাকে। তোমার কাজে যদি প্রতিদিন, প্রতি মাস এবং প্রতি বছর উন্নতি না হয়,ই কাজটি তোমাকে পিছনেই টানবে। কারণ আমাদের জীবনের যদি প্রতিদিনের উন্নতির জন্য প্রতিদিনের কাজ না করি, আমরা কখনোই প্রতি মাস ও প্রতি বছরের উন্নতি দেখতেই পাব না। তুমি-আমি যে কাজটি সম্পন্ন করব আজকের জন্য, তা আমাদেরকে আগামী দিনের জন্যই আরেকটি নতুন কাজ আমাদের চিন্তা শক্তির মাধ্যমে আমরা নিজেরাই তৈরি করব। সেই কাজটি আমরা একাই করতে পারি অথবা আমাদের দ্বারা নিয়োজিত মানুষেরাও করতে পারে। আমরা যেন প্রতিদিনই কাজ করতে পারি এমন মানুষই যেন হই অন্তরে তীব্র ভালোলাগা তৈরি করে সত্য সুন্দরের সন্ধানে থেকে। তুমি যদি তোমার নিজের অন্তরে সাজসজ্জায় সুন্দরের রূপের স্বরূপ প্রফুষ্টিত করে সাজিয়ে না থাক, তুমি কখনোই কর্দমাক্ত জীবন থেকে মুক্তি পাবে না। তুমি জীবনে এমন কিছুই কর যেন অন্তরে তীব্র ভালোলাগা সৃষ্টি হয়। কিন্তু অন্তরে তীব্র ভালোলাগা সৃষ্টি করে ভালো কিছু করার জন্য তোমার অন্তরের চরিত্রে রুচিকর ও সংযত প্রকৃতির মানুষ হয়ে তোমাকে সত্যাশ্রয়ী মানুষই হতে হবে। কারণ যারা পাপ করে তারা পাপাচারে যে এই বৈষয়িক জীবনে আনন্দ তৃপ্তি আছে সেই ভোগের জীবনেই থাকে। আর যারা সত্য সুন্দরের সন্ধানে সত্যাশ্রিত মানুষ হয়ে পূণ্যের পরশ নিয়ে জীবন চালিত রাখেন, তারাও এই একই শ্রেণীর সত্যাশ্রিত মানুষ। আমরা আমাদের পরিবারে, সমাজে বা রাষ্ট্রের মানুষের সাথে যখনই পরস্পর পরস্পরে কর্ম সম্পাদন করি, কখনো কখনো কাজে ভুল-ভ্রান্তি হলেও সহজে ভুলের স্বীকৃতি নিজেরা মেনে নিতে চাই না। নিজেদের ভুল অস্বীকার করলে নিজেদেরকে শ্রদ্ধা করা হয় না বরং নিজেদেরকে অশ্রদ্ধাই করা হয়। যে কোন ভুল স্বীকার করে নিয়ে নিজেদেরকে যেন শ্রদ্ধা করতে শিখি। তাতে শ্রদ্ধার সৌন্দর্যও ফুটে উঠে মানুষের হৃদয়ে সর্বোত্তম ভাবেই

সর্বত্রই। কত মানুষকেই আমরা দেখে চলছি অপরাধ, ভুল করতে করতে পৃথিবী থেকে চলেই গেলেন। ভুল স্বীকারে লজ্জিত হবেন এই মনে করে ভুলটা নিয়েই মরলেন! এই একটা ভালো কথা যদি ভালো করে আমরা মনে রাখি তাহলে এত ভুল করে সকাল-বিকাল ভুলের ক্ষমা চেয়ে আমাদের চলতে হবে না। ‘যে প্রিয়জন বা যার সাথে আমরা চলব তাদের সাথে যেন আমরা আমাদের অন্তরের সেবা দিয়ে চলি’। মানুষের ক্ষতিসাধণ করে পরে তোমার সমস্ত অন্তর তাদের অন্তরে বিলিয়ে দিয়েও তো সেই ক্ষতি পূরণ করা যায় না। মানুষের ক্ষতিসাধণ হয় এমন কাজ থেকে বিরত থাকাই মহত্বের কাজ। এই মহত্বরের কাজটির মর্যাদা মসজিদ, মন্দির, চার্চ, পেগোটায় গিয়ে মানুষ যে পূণ্যার্জনে মগ্ন থাকেন তার চেয়েও বহুগূণ বেশি। এর চেয়ে মহত্বের কাজ এই পৃথিবীতে আর কিছুই নেই। আমাদের কথা ও কাজের মধ্যে অতিরিক্ত স্বার্থপরতার পরিবর্তে আন্তরিকতাপূর্ণ সত্যের স্বরূপ যখন আমাদের চরিত্রের সৌন্দর্যে ফুটিয়ে তুলতে পারি, তোমাকে-আমাকে এই সমাজ ও রাষ্ট্রের মানুষ বুঝতে না পারলেও আমাদের মনোরম প্রাণের কাজের প্রতি অন্তরের তীব্র ভালোলাগাই তাদের প্রাণেও একবার হলেও ভালোলাগার অনুভব দিবে। পৃথিবীর সব দেশেই কিছু কিছু মানুষ আছেন যারা কারণে-অকারণেই মানুষের বা সরকারের ভালো কাজগুলোও তাদের মনোপুত হতে শুরু করে না। আবার এই তারাই পরিশেষে বলে থাকেন যে, আসলে সরকারের এই কাজগুলোই আমাদের অনেক বেশিই উপকার হয়েছে। যে কোন কাজই অন্তরে তীব্র ভালোলাগা সৃষ্টি না হলে, সেই কাজটিতে তেমন মনোযোগ অন্তরের ভেতর থেকে সৃষ্টি হয় না। আমরা জীবনে এমন কিছুই যেন করি যাতে অন্তরে তীব্র ভাললাগা তৈরি হই। এই একই সাথে সত্য সুন্দরের সন্ধানে আমাদের জীবনকে শ্রেষ্ঠত্বের ও সন্মানের আসনে সমাসীন করি। আমাদের অন্তরে যেন ভালোবাসা ও মনুষত্বের অস্তিত্ব থাকে ভালো মানুষ হওয়ার জন্য। ভালো জিনিসের অস্তিত্ব যেন আমরা আমাদের অন্তরে অন্তরিত করে রাখি। আমরা আমাদের জীবনের জন্য যেন অস্তিত্বের শূন্যতায় না ভূগি।
Honesty pays off: Sow a thought, reap a habit. Sow a habit, reap a character. Sow a character, reap a destiny.– Paul J.Meyer

লেখক: কলামিস্ট, গবেষক ও সমাজ বিশ্লেষক।