ঢাকা | মার্চ ২৯, ২০২৪ - ৬:৪৬ অপরাহ্ন

শিরোনাম

কলকাতায় অনুষ্ঠিত হলো ১ম ভারত বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু নাট্য উৎসব

  • আপডেট: Wednesday, December 21, 2022 - 1:51 pm
  • পঠিত হয়েছে: 61 বার

টাচ নিউজ ডেস্ক: গত ২১শে ডিসেম্বরে দুই বাংলার নাট্যকর্মীদের অংশগ্রহনে “বঙ্গবন্ধুর জীবন ভিত্তিক নাটক নিয়ে” কলকাতায় অনুষ্ঠিত হলো ১ম ভারত বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু নাট্য উৎসব।

 

১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর অদ্যাবধি কখনো একই ছাদের তলে “বঙ্গবন্ধুর জীবন ভিত্তিক নাটক নিয়ে” দুই দেশের নাট্যকর্মীদের অংশগ্রহনে ভারত-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু নাট্য উৎসব অনুষ্ঠিত হয় নাই। গত ২১/১২/২০২২ তারিখে সেই ঐতিহাসিক আয়োজনটি সফল হলো। আর এই উৎসবে যতগুলো নাটক মন্চস্থ হলো তার সবকটি নাটক রচনা করেছেন নিউইয়র্ক প্রবাসী নাট্যকার খান শওকত। তার প্রকাশিত বই বঙ্গবন্ধু নাট্যসমগ্র (৩৫টা নাটক) থেকে নেয়া মোট ৫টা নাটক নিয়েই কলকাতার যোগেশ মাইম একাডেমী মন্চে এ নতুন ইতিহাসের সুচনা হলো। এরপর ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে দুই বাংলার একাধিক স্থানে তারই লেখা ১২টা নাটক নিয়ে পরবর্তী উৎসব। প্রবাসে বসে এত বড় আয়োজনের সাথে সংযুক্ত হওয়া একটি দূরুহ কাজ। “ভারত বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু নাট্য উৎসব” এটা সময়ের দাবী। গত ৫১ বছরে অন্য কেউ এ উদ্যোগ নেননি বলে হয়তো এখন এ আয়োজনের সুচনা হলো। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রথম উল্লেখযোগ্য নাটক লেখেন লন্ডন প্রবাসী সর্বজন শ্রদ্ধেয় নাট্যকার ও কিংবদন্তী সাংবাদিক মরহুম আব্দুল গাফফার চৌধুরী। তার নাটকের নাম পলাশী থেকে ধানমন্ডি। আর ভারত বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু নাট্য উৎসব হলো নিউইয়র্ক প্রবাসী নাট্যকারের লেখা দিয়ে। দুটো বিষয়ই প্রবাসীদের অর্জন।

 

একথা অনেকেই জানেন যে, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কোন নাটক মন্চায়ন বা নির্মাণের জন্য একসময় বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের অনুমতি ছাড়া বাস্তবায়ন করা যেতো না। এজন্য বঙ্গবন্ধুর জীবনভিত্তিক নাটকের চর্চা বন্ধ ছিলো দীর্ঘকাল। এরপরও যারা নাটক করার চেষ্টা করেছেন তারা বঙ্গবন্ধু বা তার পরিবারের সদস্যদের চরীত্র অনুপস্থিত রেখেই নাটক লিখতেন। একারনেই অমর একুশের গানের লেখক আব্দুল গাফফার চৌধুরীর লেখা এবং বিখ্যাত চিত্র-পরিচালক হাসান ইমামের নির্দেশিত পলাশী থেকে ধানমন্ডি নাটকটির বাংলাদেশে মন্চায়নের সুযোগ হয়নি। আইনটি জানার পর খান শওকত ২০১৬ সাল থেকে এটি বাতিলের জন্য নানাভাবে চেষ্টা তদ্বির শুরু করেন। তার প্রতিটা নাটকই মেমোরিয়াল ট্রাষ্টে জমা দেন এবং কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করে বলেন, বঙ্গবন্ধুর চরীত্র অনুপস্থিত রেখে বঙ্গবন্ধুর জীবনভিত্তিক নাটক তুলে ধরা প্রায় অসম্ভব। দর্শকরা নবাব সিরাজের মতো বঙ্গবন্ধু চরীত্রের সংলাপের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে জানতে ও বুঝতে চায়। পরবর্তীতে দেশের শিল্পী সমাজের ব্যাপক অনুরোধের প্রেক্ষিতে এই বিধানটি তুলে নেয় বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাষ্ট এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এজন্য ২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল থেকে বঙ্গবন্ধু বিষয়ক নাটক মন্চায়ন বা নির্মাণের জন্য মেমোরিয়াল ট্রাস্টের আর কোন অনুমতির প্রয়োজন হয় না। তাই ২০১৯-এর পর থেকে বঙ্গবন্ধুর জীবনভিত্তিক নাটকের চর্চা ছড়িয়ে পড়েছে পুরো দেশময় এবং বিশ্বময়। এরই ধারাবাহিকতায় এবার দুই বাংলায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে প্রথম ভারত বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু নাট্য উৎসব। উক্ত উৎসবে পরিবেশনের জন্য একটি সঙ্গীতও রচনা করেছেন খান শওকত। সেটিতে সুর দিয়েছেন নিউইয়র্কের শিল্পকলা একাডেমির সাবেক সাধারন সম্পাদক কন্ঠশিল্পী মিলন কুমার রায়। গানের কথাগুলো এমনঃ ॥ দুই বাংলার নাট্যমোদিরা ভালোবাসায় এক হবে, হাসবো আমরা মিলবো আমরা বঙ্গবন্ধু নাট্য উৎসবে। দুই বাংলার নাট্যমোদিরা ভালোবাসায় এক হবে, হাসবো আমরা মিলবো আমরা বঙ্গবন্ধু নাট্য উৎসবে। এসো গাই গান, ভালোবাসার গান, এসো গাই গান সম্প্রীতির গান …../ সাতচল্লিশে ভাগের আগে, আমরা কি আলাদা ছিলাম, ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র হওয়াতে, বিভক্ত হয়ে গেলাম। কাঁটাতারের সীমানা থাকুক দেশ ভাগের নামে, আমরা মিলবো ভাষার টানে ভালোবাসার খামে। এসো গাই গান, ভালোবাসার গান …./ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গড়তে মুজিব হলেন শহীদ, আজও বাঙালিদের মন ও মননে মুজিব চিরন্জীব। দুই বাংলার নাট্যমোদিরা ভালোবাসায় এক হবে, হাসবো আমরা মিলবো আমরা বঙ্গবন্ধু নাট্য উৎসবে। এসো গাই গান, ভালোবাসার গান, এসো গাই গান সম্প্রীতির গান …..।

 

গত ২১/১২/২০২২ তারিখে কলকাতার যোগেশ মাইম একাডেমিতে অনুষ্ঠিত ১ম ভারত- বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু নাট্য উৎসবে মোট ৫টি নাট্যগ্রুপ অংশগ্রহন করেন। তাদের কলাকুশলীরা হলেনঃ

 

(১). গ্রুপের নামঃ সারথী থিয়েটার, কুমিল্লা, বাংলাদেশ। নাটকঃ ৭ই মার্চের ভাষণ। রচনাঃ খান শওকত।

নির্দেশনাঃ এজহারুল হক মিজান। মিউজিকঃ কমল চন্দ্র দাস, পোষাকঃ রাইয়ানুল জান্নাত রোজা। অভিনয়েঃ মো. বশীরুল আনোয়ার, কমল চন্দ্র দাস, ফয়সাল আহমেদ, এস. এ. এম আল মামুন, এবং এজহারুল হক মিজান।

 

(২). গ্রুপঃ বঙ্গবন্ধু থিয়েটার, ঢাকা। নাটকঃ আমার নেতা শেখ মুজিব। নির্দেশনা ও অভিনয়ঃ সাঈদ মাহাদী সেকান্দার।

 

(৩). গ্রুপের নামঃ ব্যাপ্তি কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন। হাওড়া, পশ্চিম বঙ্গ, ভারত। নাটকের নামঃ মুজিব বাইয়া যাওরে। রচনাঃ খান শওকত। মঞ্চ পরিকল্পনা ও নির্দেশনাঃ সমিত চৌধুরী। শিল্পীদের নামঃ সমিত চৌধুরী, অঙ্কিত ভট্টাচার্য, সঞ্জয় আচার্য, সৌমেন পাহাড়ি, শুভজিৎ দে, সৌভিক দাস, সৌমিক বসু, অনুপ দাস, সৌরভ মুখার্জি, প্রতিপ সাউ, দিব্যেন্দু বণিক, দীপেন সাহা, অরুণাভ দাশগুপ্ত, কৌস্তভ চক্রবর্তী, শ্রেয়সী গাঙ্গুলি, রিম্পা রুইদাস, ঐশী সর্দার, অনুপা ঘোষ, অদৃজা চ্যাটার্জী, তাপসী ব্যানার্জী, সায়নী সরকার, এবং তৃষিতা বসু।

 

(৪). গ্রুপঃ গোবরাপুর সংবিত্তি। বনগাঁ, উত্তর চব্বিশ পরগনা। ভারত। নাটকঃ আমার নাম শেখ মুজিব। রচনাঃ খান শওকত। নির্দেশনাঃ কিশোর দত্ত। অভিনয়েঃ গোবিন্দ কর, রামপ্রসাদ ঘোষ, মিন্টু দত্ত এবং রিমা কর।

 

(৫). গ্রুপঃ যাদবপুর দলমাদলকলকাতা। নাটকঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। রচনাঃ খান শওকত। নির্দেশকঃ সন্জয় সাহা। এ গ্রুপে রয়েছে প্রায় ১৫ জন কলাকুশলী।

 

বাংলাদেশ থেকে আরও দুটো গ্রুপ যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু ভিসার জটিলতায় তারা অংশ নিতে পারেননি। এ নাট্য উৎসবের মূল উদ্যোক্তা যাদবপুর দলমাদলের সভাপতি সন্জয় সাহা বলেন, নাট্যকার খান শওকতের লেখা পড়লে এটাকে নাটক মনে হয়না, মনে হয় জীবন্ত ঘটনা দেখছি। কারন তার লেখা অত্যন্ত বাস্তবসম্মত, নিরপেক্ষ, হৃদয়গ্রাহী, মর্মস্পর্শী এবং সত্য ইতিহাস। প্রতিটা সংলাপের পরতে পরতে তিনি তথ্য তুলে ধরেছেন। আলোচ্য বিষয়ে প্রচুর গবেষনা না করলে এ ধরনের সংলাপ লেখা যায়না। এ পর্যন্ত তার লেখনী নিয়ে আমাদের উদ্যোগে দুই বাংলায় অনুষ্ঠিত হয়েছে অনেকগুলো নাট্য সেমিনার ও পাঠচক্র। আমার বিশ্বাস তার লেখা নাটকগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার ইতিহাস এবং বঙ্গবন্ধুর বর্নাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের ঘটনাসমুহ নাটকের সংলাপের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়বে সবার মাঝে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।

 

খান শওকত নিউইয়র্কে প্রবাসী হন ১৯৯০ সালে। ১৯৯৩ সাল থেকে তিনি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গবেষনা শুরু করেন। প্রথমে তার রচনায় নির্মান করলেন “কেন তিনি জাতির পিতা” শিরোনামে একটি অডিও তথ্যনাট্য। এরপর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একের পর এক নাটক লিখলেন। ২০১৫ সাল থেকে তার লেখা নাটক আমেরিকা, কানাডা, ভারত, কাতার, দুবাই ও বাংলাদেশে মন্চস্থ হচ্ছে। তখন থেকেই তিনি চেষ্টা করেন বাংলাদেশে তার লেখা নাটক মন্চস্থ করতে, কিন্ত মেমোরিয়াল ট্রাস্টের অনুমোদনের অভাবে সম্ভব হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে তার লেখা নাটক “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব” মন্চস্থ হয় কলকাতার জ্ঞান মন্চে ২০১৮ সালে। ভারতের মাটিতে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এমন সফল আয়োজন আগে দেখা যায়নি। ইউটিউবে Bongobondhu drama written by Khan Showkat লিখে এ নাটকের ভিডিও দেখা যায়। ২০১৯ -এর এপ্রিল থেকে মেমোরিয়াল ট্রাস্টের বাঁধা উঠে গেলে তিনি ঊদ্যোগ নেন ভারত বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু নাট্য উৎসবের। সকল আয়োজন যখন প্রায় শেষ সেই মুহুর্তে মহামারি করোনার জন্য সব থেমে যায়। অবশেষে সেটি সফল হতে যাচ্ছে এবার ২০২২ সালে।

 

এ নাট্য উৎসবে অংশগ্রহনকারি মোট ৬টি গ্রুপের কলাকুশলী ছাড়াও ভারত বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু নাট্য উৎসব কমিটির দুই দেশের কমিটির সদস্যরা, অনুষ্ঠানের দিন কারিগরি টিমের সদস্যরা, সবার থাকা-খাওয়া- নিরাপত্তা ও ম্যানেজমেন্ট টিম, নাট্যাঙ্গনের ও সংস্কৃতি অঙ্গনের অতিথীবৃন্দ, সব মিলিয়ে প্রায় শ খানেক নাট্যকর্মী একমন্চে কাজ করেন নাট্য উৎসবের দিন। এ উৎসব দুই বাংলার নাট্যকর্মী এবং মুজিব সৈনিকদের মধ্যে একটা আগ্রহ তৈরী করেছে। তারা ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন নবাব সিরাজউদ্দৌলাহ নাটকের মতো বঙ্গবন্ধুর বর্নাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের কথা নাটকের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেবেন সবার মাঝে। নাটকের জয় হোক।

 

এ নাট্য উৎসবে বাংলাদেশ টিমের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সারথী থিয়েটারের সভাপতি এজহারুল হক মিজান। আর ভারতীয় টিমের নেতৃত্ব দিচ্ছেন গোবরাপুর সংবিত্তি নাট্যসংস্থার সভাপতি কিশোর দত্ত। তাদের নেতৃত্বে এই উৎসবের পর আগামী ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারিতে কলকাতার তপন থিয়েটারে, এরপর ২৩ ফেব্রুয়ারিতে লেখকের নিজগ্রাম খুলনার শাহপুরে, এবং ঢাকা, কুমিল্লা, বরিশাল, ফরিদপুর, সিলেট, ঝিনাইদহ ও ময়মনসিংহের ত্রিশালে ভারত বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু নাট্য উৎসব আয়োজনের চেষ্টা চলছে।

এ বিষয়ে জানতে আগ্রহীরা ভারত বাংলাদেশ নাট্য উৎসব পরিষদের সাথে যোগাযোগ করতে পারন-

(১). সন্জয় সাহা। কলকাতা। মোবাইলঃ +৯১-৭০৪৪৬৩৪৬৬৪. (২). কিশোর দত্ত। কলকাতা। মোবাঃ ৯৯৩২৬১৯১২৯. (৩). এজহারুল হক মিজান। সারথী থিয়েটার। বাংলাদেশ। মোবাঃ ০১৬১৭.৮০৮২৮২.আয়োজনেঃ ভারত-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু নাট্য উৎসব পরিষদ।