ঢাকা | এপ্রিল ১৬, ২০২৪ - ৮:২৭ অপরাহ্ন

শিরোনাম

সত্য সুন্দরের সন্ধানে -১২ “জীবনে এমন কিছু কর যেন অন্তরে তীব্র ভাললাগা তৈরি হয়”

  • আপডেট: Saturday, October 22, 2022 - 1:00 pm
  • পঠিত হয়েছে: 80 বার

রাজু আহমেদ মোবারক:

1)

“All people have one goal success or happiness.The only way to achieve true success or happiness is to give yourself completely in service.”– Socrates

এই  দুনিয়াতে ভালভাবে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের সবাইকেই  উপযুক্ত হতে হয়। এই বাহিরের জগতে উপযুক্ত ও উন্নত হওয়ার আগে আমাদেরকে মস্তিষ্কের শক্তিতে অন্তরে উপযুক্ত ও উন্নত হতে হয়। তাই মানুষ প্রতিদিনই নানা প্রকার শিক্ষার মাধ্যম থেকে নানা কিছু শিখেই মস্তিষ্কে যে প্রকোষ্ঠ থাকে, সেটাকে পরিপূর্ণ রুপ দিয়েই যোগ্য মানুষে পরিণত হতে হয়। আমরা সবাই মস্তিষ্কের যোগ্যতার শক্তিতে চলি

যা মস্তিষ্ক থেকে নির্গত হয়ে আসে প্রয়োজনের সময়ে। মস্তিষ্কের যোগ্যতার শক্তিই আমাদেরকে পরিবারে, সমাজে, রাষ্ট্রে ও পৃথিবীতে চিহ্নিত করে আমরা কতটা যোগ্যতা ও অযোগ্যতা সম্পন্ন মানুষ। আমরা যেন যোগ্যতার্জন করার জন্য জীবনের শুরুতেই এই কাজটিই শুরু করি যেন আমাদের মস্তিষ্কের শক্তিকে বিকশিত করতে পারি। যে কোন শক্তির যদি বিকাশের পথ না থাকে, সেই শক্তিও ভেতরে ভেতরে

ধ্বংস হয়ে যায় অপব্যবহারের কারণে। তবে আমাদের মস্তিষ্ক বিকাশের পূর্বে এই মস্তিষ্ককে যেন ভালো খাবার দিয়ে উপযুক্ত করি। আর যোগ্যতার্জনের জন্য অন্তরে যেন তীব্র ভাললাগা প্রতিদিনই থাকে। কারণ যে কোন সৃষ্টিশীলতাই প্রতিদিনের কাজ। শুধু মন চাইল আর তুমি যখন-তখন কাজটি করলে সেই রকম কাজ নয়। যে কাজটি তোমার করারই দরকার তোমার মন না চাইলেও সেই কাজটি তুমি কর।

এবং সেই সমস্ত কাজের যে একটি শক্তি আছে, সেই শক্তির যে আরেকটি শক্তি আছে যা তোমার কর্মফল। এই কর্ম শক্তির মাধ্যমে যে কর্মফল বের হবে সেইটাই মূলত আমাদের জীবন। এই সত্যটি আমাদের সকলেরই মনে রেখে অন্তরের মাঝে স্থায়ী ভাবে চিত্রায়িত করতে হবে যে, আমরা কখনোই সাধারণ কাজ করে অসাধারণ জিনিসের অর্জন

আমাদের জীবনে একবারেই সম্ভব নয়। আমাদের কাজ যখনই অসাধারণ হবে জীবনের উন্নতির মাধ্যমেই অসাধারণ জীবনের প্রকৃত রুপসহ স্বাদ পাব। আমরা জীবনে এমন কিছুই যেন করি যাতে আমাদের অন্তরে তীব্র ভাললাগা তৈরি হয় সেই ভালোবাসার আসক্তি থেকে। এই ভালবাসা ও ভাললাগার আসক্তি শুধুই যেন অর্থোপার্জন করে জীবন চালনা করা না হয়। এই ভালোবাসা ও ভাললাগার আসক্তি যেন আমাদের মৃত্যুর আগে এই পৃথিবীর মানুষের কল্যাণ সাধনও করা হয়। মানুষের মস্তিষ্ক নিজ থেকে কিছুই শিখতে পারে না যতক্ষণ না মস্তিষ্কের ভেতরে শিখার জন্য সেইসব উপাদান অনুপ্রবেশ না করানো হয়। আমাদের জীবনে এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজই যেন খুঁজে বের করি যা আমাদের অন্তরে তীব্র  ভাললাগা তৈরী হয়। যে সমস্ত কাজ আমাদের ভাল না লাগে, সেই সমস্ত কাজ আমরা মন থেকে ধ্যান দিয়ে করতে পারি না। যে সমস্ত কাজে অন্তরে তীব্র ভাললাগা তৈরী হয় সেই সমস্ত কাজেই জীবনের উন্নতি আসে। আমাদের জীবন চলার পথে আমরা অনেকেই মহৎ ও যোগ্য মানুষ হতে চাই এবং মহৎ ও যোগ্য মানুষের পাশে থাকতেও চাই। মানুষের চলমান জীবনে পরস্পর পরস্পরে কোন কথার অমিল হলেই তর্ক যুদ্ধে নেমে পড়ে। এই তর্ক যুদ্ধ থেকে বন্দুক যুদ্ধও তখন স্বাভাবিক হয়ে যায়। তর্ক ছাড়া জীবন একেবারেই নেই। পরিবারে পরিবারে তর্ক, সমাজে সমাজে তর্ক, রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে তর্ক। তর্ক ছাড়া মানুষের কোন জীবনও নেই। তর্ক করার মানুষটি যদি অযোগ্য হয়, চুপ থাকাই মঙ্গল সকলের পক্ষে। আমরা আমাদের জীবনের উপযোগিতা এবং ক্রিয়াবিধি সম্বন্ধে যদি পূর্ব থেকে হৃদয়ের অনুভবে হৃদজ্ঞম করার ক্ষমতা না রেখে চলি তাহলে মানুষ হিসেবে উৎকৃষ্টতার চরিত্রে জীবন গড়ার কাজ করা দূরহই হয়ে পড়ে। আমাদের হৃদয় যেন সব সময়ই আলোকিত হয়ে আলোর বিচ্ছুরণে চলে। আমাদের হৃদয় যেন কখনোই ঘনান্ধকারে পরিণত না হয়। আসলে আমরা যখনই সত্য সুন্দরের সন্ধানে জীবনকে চালিত রাখি, তখনই মূলত হৃদয়ের আলোর রশ্নি দ্বারা চলি। এই ঘনান্ধকারের হৃদয়ে আমরা কখনোই সত্য সুন্দরের পথে চলতে পারি না। আমরা মানুষ হিসেবে জীবনের জন্য যে পথেই চলি, সেই চলার পথ আমাদের চোখের ও হৃদয়ের এই দুইটি পথের মিলনের বন্ধনে যেন চলি। চোখে দেখার পথে তো আমরা দেখে দেখে

প্রতিদিনই চলি। কৈ আমাদের চোখ দিয়ে দেখা চলার পথ তো আমাদেরকে অসৎ পথেও নিয়ে চলছে। এইসব অসৎ ও বাজে পথ থেকে সরে গিয়ে যদি আমাদেরকে অসাধারণ সুন্দর পথে উঠতেই হয়, আমাদেরকে অবশ্যই অন্তরের হৃদয়ের পথে থাকতে হবে। যে পথ আমাদের জীবনের জন্য পথের সন্ধান দিতে পারে সুন্দর চরিত্র গঠনের প্রত্যয়ে, সেই পথ একান্তই আমাদের অন্তরের হৃদয়ের পথ। আমরা যদি আমাদের জীবনের জন্য হৃদয়ের পথ খুঁজে পেয়েও মসৃণ ও সুন্দর মনের মানুষ না হতে পারি, আমরা স্বাভাবিক ভাবেই আমরা অযোগ্য মানুষের দলে চলে যেতে পারি। আমরা যেন পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে যেন কদাকার, কুৎসিত, নিষ্ঠুর ও নগ্ন চরিত্রের অযোগ্য মানুষ না হয়ে যাই। মানুষ কখনোই তাদের নিজেদের অন্তরে মন্দত্বের আবহ উজ্জীবিত রেখে অন্তরে তীব্র ভাললাগা সৃষ্টি করে পরের জন্য কখনোই ভালবাসার প্রাণ তৈরী করতে পারেন না। কারণ মন যখন চলে সেই মন তার নিজের আপন গতিতেই চলে। এই মন যখনই পূণ্যের সন্ধানে তীব্র ভাললাগার চেতনার মাঝে ডুবে যাবে, এই মন সেই মন নয় যে, লোভ-লালসায় লালায়িত হয়ে মনের অপরূপ সৌন্দর্য নষ্ট করে পূণ্যের পবিত্রতা হারাবে

2)

“Yesterday is a canceled check; tomorrow is a promissory note; today is the only cash you have– so spend it wisely.”–

Kay Lyons

মনুষত্বের শক্তির বিকাশ তোমার নিজের অন্তরে অন্তর্গত করে মানুষের দুঃখে তোমার অন্তরটি কি ভারাক্রান্ত হয়ে উঠেছে? মানুষের দুঃখ-কষ্ট দেখে যদি তোমার মনের উপর ভারাক্রান্তে মনে দাগ না পড়ে, তুমি যে তোমার অন্তরে মনুষত্বের বিকাশে উপযুক্ত হওনি তা কি তুমি ধরতে পেরেছ? মানুষের দুঃখের দিনে আমরা যদি আমাদের নিজেদের অন্তর থেকে অন্তরের সেবা না দিতে চাই, আমরা সন্দেহাতীত ভাবেই মায়া-মমতা বিবর্জিত হৃদয়হীন মানুষ। তোমার-আমার অন্তরে যদি তীব্র ভাললাগা ও ভালবাসা সকল শ্রেণী গোষ্ঠী মানুষের প্রতি না থাকে, শুধুই ব্যক্তি কেন্দ্রিক কিছু মানুষের সেবা করে তাদের উপকার আমরা করি, কিন্তু আমাদের সৃষ্টিকর্তার মনের পাশে যাওয়ার জন্য মানুষের প্রতি তীব্র ভাললাগার ভালবাসাটাই বেশি প্রয়োজন। আমাদের জীবন যেন মহত্বের

চেতনায় নিরবচ্ছিন্ন ভাবে চলমান থাকে সকল সময়ে, সকল মানুষের জন্য সর্বোত্তম কাজ করার জন্য। আমাদের চেতনার শক্তি যদি মনুষত্বের চেতনায় বর্ধিত হয়ে রুপান্তরিত না হয় মানুষের কল্যাণ করার জন্য, আমরা কখনো আমাদের অন্তরের সৌন্দর্যে পুরোপুরি সুস্থ ধারার মানুষ নয়। অসুস্থ চেতনার শক্তি আমাদের বিবেকের শক্তিকে সমৃদ্ধতার চেতনা থেকে যেন বিচ্ছিন্ন না করতে পারে। আমরা যখনই সত্য সুন্দরের সন্ধানে আমাদের জীবন গড়ার চেষ্টা করব, আমরা অযোগ্য মানুষের চেতনা শক্তিকে বুঝতে পারার ক্ষমতার শক্তি আমাদের অন্তরে শক্তিশালীও হতে থাকে। আমার-আপনার জীবন যদি মহান ও যোগ্য মানুষের মর্যাদায় উন্নিত করতেই চাই, আমরা যেন মহত্বর কোন আদর্শকে কেন্দ্র করে আমাদের জীবন চলমান রাখি।  কারণ মহত্বর আদর্শ যদি আমাদের অন্তরের চেতনার মাঝে সংযোজিত করে না চলি, আমাদের মন কোন দিকে চলবে, মন তা নিজেই নির্ধারণ করে চলতে পারে না। আমাদের সুন্দর জীবনের জন্য একাগ্রতা ভীষণ জরুরী। মানুষের জীবনের এই একাগ্রতা মানুষকে ভাল মানুষদের মর্যাদা দান করে। আমাদের জীবন চলার পথে মহান ও যোগ্য মানুষ যেন পাশে থাকে। সমাজ ও রাষ্ট্রের অনাচার দূর করতে চাও আন্দোলন-সংগ্রাম করে সংগে যেন মহত্বর যোগ্য লোকই পাশে থাকে। যেদিন অযোগ্য লোক তোমাদের নেতা হবে এবং সেই নেতৃত্বের ছায়াতলে আশ্রয় নেবে, তোমাদের সর্বত্রই ধীরে ধীরে শক্তিহীনতার মাঝে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। জীবনে যত কাজই কর অযোগ্য লোকজনের যাতাকলে পড়িও না। কারণ অযোগ্য নেতৃত্বের মাঝে নিজেকে অন্তরীণ করে ফেললে যা বিকশিত হওয়ার সুযোগ ছিল তোমার জীবনে, তা কখনোই বিকাশের স্বরূপে বিকশিত হয় না। কারণ তোমার নিজের কাজে যদি তোমার অন্তর থেকে তীব্র ভাললাগা সৃষ্টি না হয়, সেই কাজে তুমি কোন অগ্রগতি খুঁজেই পাবে না। তোমার জীবনের পুরো গতিই চলে গেল অন্যের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত গতির উপর। তবে অন্যের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত গতির নেতা যেন নিজেই গতিশীল নেতা হয়। তোমাদের জীবনের আসল চরিত্রের রুপের সৌন্দর্য ও শক্তি কখনোই জানার ও দেখার সুযোগ হবে না যদি অযোগ্য নেতৃত্বের মাঝে নিজেকে সম্পৃক্ত করে ফেল। যোগ্য নেতৃত্বের পাশে থাক। যে নেতৃত্বের বিকাশের শক্তি আছে। সত্য পথে থেকে সত্যাশ্রিত

মানুষ হয়ে মহত্বর নেতা চিহ্নিত করার যোগ্যতার্জন কর। নতুবা ওরা তোমাদেরকে অযোগ্য চেতনার আবহের পরিবেশে নিমজ্জিত করে রাখবে। কারণ এইসব অযোগ্য নেতৃত্বের নির্দেশনা মেনেই তোমাকে-আমাকে চলতে হবে। আমাদের চলমান জীবনে নানা শ্রেণীর মানুষের সাথেই চলতে হয় জীবন ও জীবিকার সন্ধানে। কখনো কখনো আমাদেরকে নানা শব্দে, নানা কথা বলে আমাদের জীবন চালাতে হয়। কখনো কখনো মানুষের সাথে তর্ক-বিতর্কেও জড়িত হতে হয়। কিন্তু এই তর্ক বিতর্কে জড়িত হয়ে পড়লেও আমরা যেন জ্ঞাণী ও যোগ্য লোকদের সাথে তর্ক-বিতর্ক করি। অযোগ্য লোকজনের সাথে তর্ক-বিতর্কে যেন জড়িত হয়ে না পড়ি। তুমি যদি জ্ঞানী ও যোগ্য মানুষের সাথে তর্ক-বিতর্কে জড়িত হয়ে গেলে জিততে না পারলেও শিখতেও তো কিছু পারবে। কিন্তু অযোগ্য মানুষের সাথে তর্ক-বিতর্কে জড়ালে সর্বস্বই নষ্ট করবে। তুমি যখনই তোমার অন্তরের দৃষ্টির তীক্ষ্ণতা বৃদ্ধির পূর্বে চোখের দৃষ্টির তীক্ষ্ণতা বৃদ্ধি করে জীবনকে অনুভব করে চল, তুমি শুধুই সমাজ ও রাষ্ট্রে জিতে চলার মন তৈরি করে তোমার নিজের মনকে ঘূর্ণিপাকেই  রাখবে। এইসব ঘূর্ণায়মাণ ঘূর্ণিপাকে থাকা মানুষেরা কখনো কোন বিষয়ে তর্ক-বিতর্কের মাঝে নিমজ্জিত হয়ে পড়লে, অন্তরের রগচটা মানসিকতার কারণে সহজেই মনের মনোরম সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলে। এই জাতীয় মানুষগুলো শিক্ষায় শিক্ষিত হলেও ন্যূনতম শ্রদ্ধাবোধের সৌন্দর্য অন্তরের দৃষ্টির তীক্ষ্ণতায় প্রহর করে রাখেননি। ফলে অন্যদের সামান্য অপছন্দের শব্দও তাদের কাছে অসহিষ্ণুতে পরিণত হয়ে যায়। এরা  সহজেই রগচটা মানুষ হিসেবে নিজেদেরকে পরিচিত করে ফেলে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের মানুষের কাছে। মহান ও যোগ্য মানুষের মর্যাদায় নিজেদেরকে সমাসীন করার জন্য রগচটা চরিত্রের রুপটি আমরা যেন আমাদের অন্তরের কাঠামো থেকে বিদায় করেই রাখি। কখনো কখনো আমরা যখনই সামান্য অপছন্দের কোন বিষয়েও তর্কের মুখোমুখি হয়ে পড়ি, আসলে আমরা তখন মনের সৌন্দর্য হারা বুদ্ধিহীন ছোট হৃদয়ের মানুষ হয়ে পড়ি। এই ছোট হৃদয়ের মানসিকতা থেকে নিজেদের হৃদয়কে নিষ্কলুষ ও উৎকৃষ্ট রাখার জন্য যে কোন ভালো কাজে যেন তীব্র ভাললাগা অন্তরে তৈরি করে চলি।
লেখক: কলামিস্ট, গবেষক ও সমাজ বিশ্লেষক।